তারা এখন জনগণের সঙ্গে তামাশা করছে : ফখরুল

4

পূর্বদেশ ডেস্ক

অন্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশকে ‘বেহেশত’ উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জনগণের সঙ্গে ‘তামাশা’ করছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল শনিবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে তিনি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, দেশের মানুষ যখন প্রতি মুহূর্তে ভোগান্তি পোহাচ্ছে, কষ্ট করছে, সেই সময়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন, (মানুষ) বেহেশতে আছে।
আমি দুঃখিত ব্যক্তিগত পর্যায়ে কথা বলছি। ইদানীং উনার (পররাষ্ট্রমন্ত্রী) চেহারার মধ্যে যেটা ফুটে উঠেছে, স্ফীত হয়েছেন; বেশিরভাগ মন্ত্রীদের যেটা হয়েছে, প্রচুর লুটপাট হচ্ছে। সেই লুটপাটের কারণে তারা জনগণের সঙ্গে পরিহাস, তামাশা শুরু করেছে। খবর বিডিনিউজ।
সংবাদ সম্মেলনে ফখরুল বলেন, মন্ত্রী মহোদয় এর আগেও এমন এমন সব উক্তি করেছেন, যেগুলো কিছুটা হাস্যকর ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে উনার এরকম পরিহাস করার কোনো অধিকার নেই।
মির্জা ফখরুল বিএনপি ক্ষমতায় গেলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রæত সরবরাহ বাড়ানোর বিশেষ আইনটি বাতিলের ঘোষণা দেন। ‘দায়মুক্তির’ এই আইনের বলে সরকার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের লাগামহীন দুর্নীতি করে জনগণের জন্য সঙ্কট তৈরি করেছে বলে তার অভিযোগ।
তিনি বলেন, রেন্টাল-কুইক রেন্টাল কোম্পানির সঙ্গে সব চুক্তি বাতিল করা হবে। স্বচ্ছ প্রতিযোগিতামূলত আন্তর্জাতিক টেন্ডারের মাধ্যমে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ ও অন্যান্য কাজ সম্পাদন করা হবে।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর বিদ্যুৎ সরবরাহ দ্রæত বাড়াতে ওই আইন করে। তার অধীনে ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো স্থাপিত হয়।
এই আইনের একটি ধারা নিয়ে সমালোচনা রয়েছে, যেখানে বলা আছে- এই আইনের অধীন কৃত, বা কৃত বলিয়া বিবেচিত কোন কার্য, গৃহীত কোন ব্যবস্থা, প্রদত্ত কোন আদেশ বা নির্দেশের বৈধতা সম্পর্কে কোন আদালতের নিকট প্রশ্ন উত্থাপন করা যাইবে না।
চলমান বিদ্যুৎ সঙ্কট নিয়ে ফখরুল বলেন, আজকে সরকারের লাগামহীন দুর্নীতি আর হরিলুটের খেসারত দিতে হচ্ছে সাধারণ জনগণকে। এখন শহরে দুই-তিন ঘণ্টা এবং গ্রামাঞ্চলে পাঁচ-ছয় ঘণ্টা লোডশেডিং জনজীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে।
একদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের জীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে, বিদ্যুতের লোডশেডিংজনিত জনদুর্ভোগ মরার উপর খাঁড়ার ঘা হয়েছে। মানুষ দিশেহারা হয়ে উঠেছে, দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে।
বিদ্যুতে সঙ্কটের জন্য সরকারি নীতিকে দায়ী করে ফখরুল বলেন, ১৯টি রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট চালুর দুই-তিন বছর পর বন্ধ হওয়ার কথা থাকলেও প্রয়োজন ছাড়াই এখনও চালু আছে। বেশকিছু রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদন না করেও ক্যাপাসিটি ট্যাক্স বাবদ বিপুল অর্থ নিয়ে যাচ্ছে।
বিদ্যুৎ ছাড়াই সরকারকে এই পর্যন্ত ৯০ হাজার কোটি টাকার গচ্ছা দিতে হয়েছে। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব ব্যবসায়ীদের পকেটেই গেছে ৬০ হাজার কোটি টাকা। গত ১২ বছরে ক্যাপাসিটি ট্যাক্স বাবদ গেছে প্রায় ৮ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলারের বেশি। গত তিন বছরেই গেছে ৫৪ হাজার কোটি টাকা।
তিনি বলেন, বিদ্যুতের চাহিদা সঠিকভাবে নির্ধারণ না করে চাহিদার অনেক বেশি পাওয়ার প্ল্যান্টের সঙ্গে চুক্তি করে দুর্নীতিপরায়ণ ব্যবসায়ীদের অর্থ লুট করার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে।
দেশের অর্ধেকেরও বেশি বিদ্যুৎকেন্দ্রের অলস থাকার তথ্য দিয়ে ফখরুল বলেন, বর্তমানে দেশে মোট বিদ্যুৎকেন্দ্রের মাত্র ৪৩ শতাংশ বিদ্যুত ব্যবহার করা হয়। বাকিগুলো অলস বসিয়ে রেখে ভাড়া দেওয়া হচ্ছে। বিদ্যুৎ না কিনে গত অর্থ বছরে বিল পরিশোধ করা হয়েছে ১৭ হাজার কোটি টাকা, তার আগে বছর করা হয়েছে ১৪ হাজার ২৩২ কোটি টাকা।
গত অর্থবছরে এই খাতে ব্যয় হয়েছে ২১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ বেড়ে হয়েছে ১৮ শতাংশ। ক্রমেই ক্যাপাসিটি চার্জের বিল বেড়েই যাচ্ছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এখানেই শেষ নয়। বর্তমানে বাড়তি উৎপাদন ক্ষমতার মধ্যে আরও বিদ্যুৎকেন্দ্র আসছে। এতে অলস খরচ আরও বাড়বে। বর্তমানে ১৩ হাজার ৩৮৭ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৩৫টি কেন্দ্র নির্মাণাধীন। ২০২৬ সালের মধ্যে এসব কেন্দ্র উৎপাদনে আসার কথা রয়েছে। আগামী ডিসেম্বরে ৩ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক উৎপাদনে আসতে পারে।
নির্মাণাধীন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে বেসরকারি খাতে রয়েছে ৯ হাজার মেগাওয়াট। এই কেন্দ্রগুলোর উল্লেখযোগ্য গ্যাসভিত্তিক। এখনই গ্যাস সঙ্কটে প্রায় ৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না। আগামী ৪ বছরে আরও ১৩ হাজার মেগাওয়াটের কেন্দ্র উৎপাদনে এলে বসে থাকার বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা বাড়বে। সব মিলে বিদ্যুৎ না কিনেও অতিরিক্ত টাকা পরিশোধের অংক অনেকগুণ বেড়ে যাবে।
বিএনপি ক্ষমতায় গেলে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎন্দ্রে স্থাপনের জন্য মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।