টাইব্রেকারে স্পেনকে কাঁদিয়ে ‘লাল উৎসব’ মরক্কোর

5

ক্রীড়া ডেস্ক
১২০ মিনিটের লড়াইয়ে শেষ মুহূর্তে ম্যাচের নিষ্পত্তি প্রায় হয়েই যাচ্ছিল। পাবলো সারাবিয়ার প্রচেষ্টা বাধা পেল পোস্টে। পেনাল্টি শুটআউটেও তার শট পোস্টে লাগে। ইয়াসিন বাউনু করলেন দুটি সেভ। স্পেনকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের কোয়ার্টার-ফাইনালে উঠল মরক্কো।
আল রাইয়ানের এডুকেশন সিটি স্টেডিয়ামে গতকাল শেষ ষোলোর ম্যাচটির নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময়ের খেলা গোলশূন্য স্কোরলাইনে শেষ হওয়ার পর টাইব্রেকারে ৩-০ গোলে জিতেছে মরক্কো। এর আগে একবারই বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে খেলেছিল মরক্কো। ১৯৮৬ আসরে শেষ ষোলোয় জার্মানির বিপক্ষে ১-০ গোলে হেরেছিল উত্তর আফ্রিকার দেশটি।
জাপানের বিপক্ষে ২-১ গোলে হারা ম্যাচ থেকে একাদশে পাঁচটি পরিবর্তন এনে খেলতে নামে স্পেন। শুরু থেকে যথারীতি বল পায়ে রেখে খেলার চেষ্টা করে তারা। উল্লেখযোগ্য সুযোগ যদিও তৈরি করতে পারছিল না। শুরু থেকেই ছোট ছোট পাসে বিল্ডআপ ফুটবল খেলতে থাকে স্পেন। বল নিজেদের দখলে রেখে আক্রমণে ওঠার চেষ্টা করে তারা। অন্যদিকে কাউন্টার অ্যাটাক নির্ভর ফুটবল খেলতে থাকে মরক্কো। ম্যাচের ৭ মিনিটে ডান দিক থেকে আক্রমণে যায় মরক্কো। তবে তা আটকে দেন সার্জিও বুস্কেটস। এরপর ম্যাচের ৯ মিনিটে আক্রমণে ওঠে স্পেন। তবে তা আটকে যায় মরক্কো রক্ষণে।
পরের মিনিটে ডি বক্সের বাইরে থেকে ফ্রি কিক পায় মরক্কো। সেখান থেকে আশরাফ হাকিমির নেওয়া শট অল্পের জন্য চলে যায় ক্রসবারের ওপর দিয়ে। ম্যাচের ১৫ মিনিটে ডান দিক থেকে ক্রস বাড়ান নওসাইর মাজরাউই। তবে তা নিজের গøাভসে নেন স্পেনের গোলরক্ষক উনাই সিমন। ২০ মিনিটে বাম দিক থেকে ক্রস বাড়ান আশরাফ হাকিমি। তবে তা ক্লিয়ার করে দেন আয়মেরিক ল্যাপোর্টে।
২৬ মিনিটে সহজ সুযোগ পায় স্পেন। জর্ডি আলবার পাস থেকে বল পান মার্কো অ্যাসেনসিও। সেখান থেকে শট করে বল জড়ান সাইড নেটে। ফলে গোল পাওয়া হয় না স্পেনের। ৩৩ মিনিটে ডি বক্সের বাইরে থাকে জোড়ালো শট করেন নওসাইর মাজরাউই। তবে তা অসাধরণ সেভে দলকে রক্ষা করেন উনাই সিমন।
এরপর স্পেন বেশ কিছু অ্যাটাক করলেও তা থেকে সুবিধা করতে পারেনি তারা। ম্যাচের ৪১ মিনিটে ফ্রি কিক পায় মরক্কো। তবে সেখান থেকে সুবিধা করতে না পারলেও সেখান থেকে সাজানো আক্রমণ করে মরক্কো। বাম দিক থেকে বাড়ানো বলে হেড করেন নায়েফ আগুয়ের্ড। তবে তা চলে যায় ক্রসবারের ওপর দিয়ে। এরপর আবারও সুযোগ তৈরী করেও ব্যর্থ হয় মরক্কো।
প্রথমার্ধেও শেষ দিকে কর্নার পায় স্পেন। তবে সেখান থেকে কাজে লাগাতে পারেনি স্পেন। এরপর আরও বেশ কিছু আক্রমণ করে স্পেন। তবে শেষ পর্যন্ত গোল না হলে গোলশূন্য থেকেই বিরতিতে যায় স্পেন ও মরক্কো।
বিরতি থেকে ফিরেই আক্রমনে যায় স্পেন। ম্যাচের ৪৭ মিনিটে ডান দিক থেকে ফ্রি কিক পায় স্পেন। ৫৩ মিনিটে বাম দিক থেকে আক্রমণে ওঠে স্পেন। সেখানে গাভিকে ফাউল করলে ফ্রি কিক পায় স্পেন। সেখান থেকে শট করেন দানি ওলমো। তবে তা রুখে দেন মরক্কোর গোলরক্ষক ইয়াসিন বাউনু।
এরপর আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে খেলতে থাকে দু’দল। ৬১ মিনিটে ফ্রি কিক পায় স্পেন। সেখান থেকে বিপদমুক্ত করেন ইয়াসিন বাউনু। ৭ মিনিট পর কর্নার পায় স্পেন। তবে তা কাজে লাগাতে পারেনি তারা। এরপর বল নিজেদের দখলে রেখে আক্রমণে ওঠার চেষ্টা করে স্পেন।
ম্যাচের ৭৯ মিনিটে সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেনি স্পেন। ৮৫ মিনিটে ডান দিক থেকে ক্রস বাড়ান আশরাফ হাকিমি। তবে তা থেকে গোল করতে ব্যর্থ হয় মরক্কো।
ম্যাচের ৮৮ মিনিটে সুযোগ আসে স্পেনের সামনে। তবে নিকো উইলিয়ামসের নেওয়া শট আটকে দেন সোফিয়ান আমরাবাত। এরপর বেশ কিছু আক্রমণ করে দু’দল। তবে শেষ পর্যন্ত গোল না হলে অতিরিক্ত সময়ে গড়ায় ম্যাচটি।
এই সময়ে গোলের আশায় মরিয়া হয়ে খেলতে থাকে দু’দল। ম্যাচের ৯৪ মিনিটে বল নিয়ে এগিয়ে যায় ওয়ালিদ চেদ্দারি। তবে গোল করতে ব্যর্থ হন তিনি। ৯৭ মিনিটে সুযোগ আসে স্পেনের সামনে। তবে বাম দিক থেকে ভেসে আসা বলে মাথা ছোঁয়াতে ব্যর্থ হয় মোরাতা।
তিন মিনিট পর আবারও সুযোগ আসে স্পেনের সামনে। তবে মোরাতার বাড়ানো বলে মাথা ছোঁয়াতে ব্যর্থ হলে গোল পাওয়া হয় না স্পেনের। ম্যাচের ১০৩ মিনিটে ডি বক্সের বাইরে থেকে শট করে রদ্রিগো। তবে তা চলে যায় ক্রসবারের অনেক ওপর দিয়ে। পরের মিনিটে আক্রমণে যায় মরক্কো। ওয়ালিদ চেদ্দারির নেওয়া শট দারুণ সেভে দলকে রক্ষা করেন উনাই সিমন। গোল করতে ব্যর্থ হলে গোলশূন্য থেকে অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধ শেষ করে স্পেন ও মরক্কো।
বিরতি থেকে ফিরে অতিরিক্ত সময়ের ১০৬ মিনিটে আক্রমণে ওঠে স্পেন। তবে গোল করতে ব্যর্থ হয় তারা। এরপর আরও কিছু আক্রমণ করে দু’দল। তবে গোলের দেখা পায় না কেউ। ম্যাচের ১১৫ মিনিটে কাউন্টার অ্যাটাক থেকে গোলের সুযোগ তৈরী করলেও বল জালে জড়াতে ব্যর্থ হয় ওয়ালিদ চেদ্দারি। ম্যাচের ১১৭ মিনিটে বল নিয়ে এগিয়ে যায় মোরাতা। গোলের সুযোগ সৃষ্টি করলেও গোল করতে ব্যর্থ হয় স্পেন। এরপর আরও বেশ কিছু আক্রমণ করলেও গোল করতে ব্যর্থ হয় দু’দল। শেষ পর্যন্ত গোলের দেখা না পেলে টাইব্রেকারে গড়ায় ম্যাচটি। টাইব্রেকারে দুইটি সেভ দিয়ে মরক্কোকে জয় এনে দেন গোলরক্ষক ইয়াসিন বাউনু।