ঝুঁকিতে সন্দ্বীপের বেড়িবাঁধ, নেই পানি উন্নয়ন বোর্ডের বরাদ্দ  

22

সন্দ্বীপ প্রতিনিধি: 
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ মোকাবিলায় সন্দ্বীপ উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন প্রস্তুতি সম্পন্ন হলেও ঝুঁকিতে নব্য সংস্কার বেড়িবাঁধ। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোন বরাদ্দ না থাকায় দ্বীপের ৭২ নং পোল্ডার উপকূলীয় বেড়িবাঁধের সারিকাইত, মাইটভাঙ্গা, পৌরসভা, রহমতপুর, আজিমপুর ও আমানউল্যার কয়েকটি পয়েন্টে দুর্বল অংশের সংস্কারের কাজ করা হয়েছে। ইউনিয়নে অরক্ষিত বেড়িবাঁধ সংস্কার করেছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। বার বার বিভিন্ন ঘূর্ণিঝড়ে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে পানি ঢুকার পূর্ব-এলার্ট থাকলেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফেলতির কারণে কাজ হয়নিও আজও। ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র প্রভাবে প্রায় ৮ থেকে ১২ ফুট জলোচ্ছ্বাস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। উচ্চ জলোচ্ছ্বাস হলে নব্য সংস্কার বেড়িবাঁধ দিয়ে পানি ঢুকার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সন্দ্বীপের এসও আরিফ। তিনি জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের বর্তমানে কোন বরাদ্দ নেই। বরাদ্দ আসতে আরো প্রায় ১ বছর লাগবে। ইউএনও’র নির্দেশে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধগুলো জনপ্রতিনিধিরা ঠিক করেছে। তবে ৫ ব্যারেলের বেশি জলোচ্ছ্বাস হলে পানি ঢুকতে পারে লোকালয়ে। সারিকাইত ইউপি চেয়ারম্যান ফখরুল ইসলাম পনির বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহোদয় বললেন দ্রুত বেড়িবাঁধ সংস্কার করতে। আমরা যতটুকু সম্ভব করেছি। এতো দ্রুত সংস্কার প্রায় অসম্ভব। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অনেক আগ থেকেই বলে আসছি। কিন্তু কোন কাজ হয় নি। উঁচু জলোচ্ছ্বাস হলেই বিভিন্ন ইউনিয়নের বেড়িবাঁধ দিয়ে পানি ঢুকার সম্ভাবনা রয়েছে। আতংকে রয়েছে বেড়িবাঁধ বাসিন্দারা। সরেজমিনে বেড়িবাঁধ পরিদর্শন করলে দেখা যায়, ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ সংস্কার করা হলেও উচু জলোচ্ছ্বাসে পানি ঢুকে যেতে পারে। প্লাবিত হতে পারে লোকায়ল। বড় ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। বেড়িবাঁধ সংলগ্ন বাসিন্দাদের সাথে কথা হলে তারা বলেন, বেড়িবাঁধ সংস্কার করা হলেও টিকবে না এটি। পানি আসলে ঢুকে পড়বে লোকালয়ে। আমরা আতংকে রয়েছি। পানি ঢুকলে সব শেষ হয়ে যাবে। এ বিষয়ে সন্দ্বীপ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সম্রাট খিসা’র সাথে কথা হলে তিনি জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোন বরাদ্দ নেই। আমরা তাদের সাথে যোগাযোগ করি। তারা বলে, কাজ করা যাবে না কোন বরাদ্দ নেই আমাদের। তখন আমরা বলেছি যেইভাবে হউক করতে হবে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাস হলে পানি ঢুকে ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে। পরে উপজেলা প্রশাসন, পাউবো এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাথে সমন্বয় করে কাজ করা হয়েছে। গত বছরে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর প্রভাবে সন্দ্বীপে বেড়িবাঁধের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে পানি ঢুকে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল ফসলি জমি, পুকুরের মাছ সহ বসতবাড়ির। টনক নড়ে নি পাউবো’র। এইবারেও উচু জলোচ্ছ্বাস হলে বড় ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়তে পারে বেড়িবাঁধ সংলগ্ন বাসিন্দারা। এদিকে ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক নানা উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে। মানুষের জীবন ও সম্পদ রক্ষার জন্য দ্বীপের ১১২ টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র ছাড়াও ৫০ টি স্কুল ভবন ও ৪ টি মুজিব কিল্লা প্রস্তুত রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের সময় অসহায় মানুষকে সহযোগিতা করতে সিপিপি’র ৩০০০ স্বেচ্ছাসেবী ও যুব রেড ক্ৰিসেন্ট ইউনিটের সদস্যদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দুর্যোগ থেকে রক্ষা পেতে উপকূল এলাকার এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার মানুষকে নিকটবর্তী শেল্টারে আশ্রয় দেয়া যাবে। সরকারি ও বেসরকারী সংস্কার মাধ্যমে  দুর্যোগের সময় আশ্রয়কেন্দ্রের মানুষদের শুকনো খাবার ও প্রয়োজনীয় খাদ্য সহায়তা দেয়া হবে। শুক্রবার রাতে ৮ নং মহাবিপদ সংকেত দেখানোর পর সন্দ্বীপ উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং শুরু হয়েছে। উপকূলের কাছে বসবাসরতদের ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। ৮ নং মহাবিপদ সংকেতের প্রভাবে সন্দ্বীপের আবহাওয়ায় ব্যাপক কোন প্রভাব লক্ষ্য করা যায়নি। তাই মাইকিং সত্বেও আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে কাউকে দেখা যায়নি। সন্দ্বীপ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সম্রাট খীসার সভাপতিত্বে উপজেলা পরিষদের ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে অনুষ্ঠিত ঘূর্ণিঝড় পূর্ব প্রস্তুতি সভায় সরকারী কর্মকর্তা,বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, এনজিও প্রতিনিধি, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ও সংবাদকর্মীদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে সন্দ্বীপের বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ইউনিয়ন উরিরচরের প্রায় ৩০ হাজার মানুষের জন্য একটি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র, ৪টি স্কুলভবন ও ২টি মুজিব কিল্লা কোনভাবে সংকুলনযোগ্য নয় বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। নদী-সাগর বেষ্টিত এবং ভাংগন কবলিত উরিরচরে জলোচ্ছাসের প্রভাবে ব্যাপক সম্পদ ও জীবনহানির আশংকা করছে সেখানকার স্থানীয়রা।