জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি মধ্যবিত্তদের অর্থনৈতিক টানাপোড়েন

14

রতন কুমার তুরী

জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির সাথেসাথে বিভিন্ন দ্রব্যসামগ্রীর দাম বাড়তে শুরু করেছে। বাজারে বর্তমানে চাল, মাছ, মাংস, ডিম, গুঁড়া দুধ, চিনি, বিস্কুট এবং সবজির দাম বেশ চড়া।তার সাথেসাথে ফলমূলের দামও বেড়ে গেছে। এসব জিনিস যানবাহনে করে একজায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যেতে হয় বিধায় দাম দ্রæত বেড়েছে। অন্যদিকে কৃষিজমি উর্বরতার কাজে ব্যবহৃত সারের দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষকরা তাদের জমির উৎপাদন খরচ নিয়ে চিন্তায় আছেন।
দৃশ্যতঃ জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি হওয়ায় বাজারে প্রত্যেকটি জিনিসের দাম হুহু করে বাড়ছে এতে করে দেশের গরিব দুঃখী মানুষেরা পড়েছে বিপাকে। মূলতঃ জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির বিষয়টি বৈশ্বিক হলেও এবং এর ফলে বাজারে সব জিনিসপত্রের দাম বাড়লেও বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে এবিষয়টিকে সাধারণ মানুষের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষই ভালোভাবে গ্রহণ করেননি।
প্রকৃতপক্ষে দেশের সাধারণ মানুষ অর্থনীতি বোঝেনা। এরা চায় একটু কমদামে চালডাল কিনে সুখে জীবন যাপন করতে আর এতে যখন ছন্দপতন ঘটে তখন তারা অসহায় হয়ে যায়। আর দেশে যে হারে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে তা কবেনাগাদ কমবে এবং আদৌ কমবে কীনা এনিয়ে সবাই চিন্তিত।বাজারে পণ্যসমূহের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টিই মূলতঃ মানুষকে চিন্তায় ফেলেছে আরো একটি কারণে আমাদের দেশে কোনো দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি ঘটলে তা আর সহজে কমেনা এমনকী এর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে কমলেও। প্রকৃতপক্ষে বাজারে যেভাবে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে সে হারে মানুষের আয় রোজগার বৃদ্ধি না হওয়ায় এই মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি আরো জটিল আকার ধারণ করেছে। চাকুরীজীবীদের মধ্যে এক উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ যে বেতন পায় তা বর্তমান বাজারমূল্যের সাথে খাপ খাওয়াতে পারছেনা ফলে এদের দৈনন্দিন জীবনে নেমে এসেছে অর্থনৈতিক টানাপোড়েন। মধ্যবিত্ত, নি¤œমধ্যবৃত্ত এবং গরিব মানুষের অবস্থা আরো খারাপ বলা চলে, এদের দৈনন্দিন জীবন যাপনের সাথে কমাতে হচ্ছে পুষ্টির পরিমাণ। মাছ,মাংস এবং ডিমের দাম বেড়ে যাওয়ায় এরা এসব পুষ্টিকর খাবার খুব কমই খেতে পারছে। আয় স্বল্পতার কারণে মূলতঃ মধ্যবিত্ত শ্রেণির এক উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ ইতিমধ্যে কেনাকাটায় কৃচ্ছতাসাধন করেও পরিবার চালাতে হিমসিম খাচ্ছে। এমতাবস্থায় দেশের গরিব এবং মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠীর এক ব্যাপক সংখ্যক মানুষদের বাঁচাতে সরকারের উচিত নিয়মিতভাবে স্বল্পমূল্যের পণ্যাদি বিক্রির ব্যবস্থা করা এর বাইরে সারাদেশে খোলা বাজারে বিসিবি’র পণ্যের গাড়ি বাড়িয়ে দেয়া। শুধুমাত্র কার্ডধারীদের জন্য নয়, দেশের সবার জন্য এই পণ্য সরবরাহ করার উদ্যোগ নিতে হবে। অন্তত সারাবিশ্বে এমন অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে সরকারের উচিত হবে দেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক দরিদ্র মানুষদের কীভাবে সাহায্য করলে তাদের জীবনযাপনে কোনো ব্যাঘাত সৃষ্টি হবেনা তার একটি কার্যকরি পন্থা খুঁজে বের করা।
অন্যথায় এসব মানুষের মনে ক্ষোভ জমতে থাকবে। সরকারকে এই কঠিন সময়ে সিদ্ধান্ত নিতে ভেবেচিন্তে নিতে হবে কারণ বৈশ্বিক সমস্যার মোকাবেলা করতে হলে সবকিছু জনগণের ওপর চাপিয়ে দেয়া যাবেনা। এর বিকল্প কী হতে পারে তা অবশ্যই খুঁজে বের করতে হবে তানাহলে এসমস্যা দীর্ঘায়িত হলে জনগণের ওপর বোঝা বাড়তে থাকবে। এবিষয়ে আগেভাগে চিন্তাভাবনা করা উচিত। যতদূর দেখা যাচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিলম্বিতো হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি ফলে বর্তমান সময়ের জ্বালানি তেলের মূল্য উঠানামা করতে থাকবে এবং এটি বিভিন্ন দেশের খাদ্যপণ্যের ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে। এক্ষেত্রে গরিব এবং মধ্যেবিত্ত জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক টানাপোড়েন সীমাহীনভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনাকে একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায়না।
সুতরাং সরকারকে সমসাময়িক ঘটনাবলীর ওপর লক্ষ্য রেখে এবং বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে যে সমস্ত দেশ ইতিমধ্যে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন সেসমস্ত দেশে কেনো এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হলো সেগুলো বিচার বিশ্লেষণ করে আমাদের অতি সাবধানে এগিয়ে যেতে হবে। প্রকৃতপক্ষে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি সাথেসাথে দেশে প্রায় জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় গরিব এবং মধ্যেবিত্ত শ্রেণির মধ্যে যে অর্থনৈতিক টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে তা থেকে উত্তরণ ঘটানোর পথ সরকারকেই খুঁজে নিতে হবে। সম্মিলিত প্রচেষ্টা আর যুতসই কর্মপরিকল্পনাই পারে এমন পরিস্থিতি থেকে দেশের গরিব এবং মধ্যেবিত্ত জনগোষ্ঠীরকে বাঁচাতে। তাই সরকারের উচিত হবে সেপথেই হাঁটা যে পথে আছে সামনে এগিয়ে চলার সঠিক সমাধান।

লেখক: কলেজ শিক্ষক, প্রাবন্ধিক