সবুর শুভ
রাঙ্গুনিয়ার চাঞ্চল্যকর জিল্লুর রহমান ভান্ডারী হত্যা মামলার কারান্তরীণ আসামি শহীদুল ইসলাম খোকন। চারদিন আগে ইসলামপুর এলাকার একজনের মোবাইলে কল আসে। নিরাপত্তার কারণে ওই ব্যক্তির নাম প্রকাশ করা গেল না। অপর প্রান্ত থেকে আওয়াজ ভেসে আসে ‘আমি জেল থেকে বলছি’ শহীদুল ইসলাম খোকন। চট্টগ্রাম কারাগার থেকে আত্মীয়স্বজনের সাথে কথা বলার জন্য নির্ধারিত সরকারি মোবাইল নম্বর থেকেই ফোন করেন খোকন। খোকনের কথায় প্রচ্ছন্ন হুমকির সূর ছিল বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এ মোবাইলে শুধু আত্মীয়স্বজনের সাথে কথা বলার নিয়ম থাকলেও তিনি কথা বলেছেন তার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া হত্যা মামলায় সাফাই সাক্ষীদের সাথে। যারা তার পক্ষে সাক্ষী দিতে আসতে অনীহা দেখাচ্ছেন। আলোচিত এ মামলার বিচারিক কার্যক্রম শেষের দিকে। শুধু আসামিপক্ষে ৫ জনের সাফাই সাক্ষ্য বাকি রয়েছে। কারাগার থেকেই দুর্ধর্ষ আসামির এ ধরনের কথা বলা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার শফিকুল ইসলাম খান বলেন, এ মোবাইল বরাদ্দ রয়েছে নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে শুধু আত্মীয়স্বজনের সাথে কথা বলার জন্য। অন্য কারো সাথে কথা বললে নির্ধারিত নিধানের ব্যত্যয় ঘটবে। এ ঘটনার সাথে কারা প্রশাসনের কেউ জড়িত থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে গত বুধবার চট্টগ্রাম প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ শেখ ছামিদুল ইসলামের আদালতে আসামিপক্ষের সাফাই সাক্ষী হাজির করার কথা থাকলেও কোনো সাক্ষী হাজির করা হয়নি। এ অবস্থায় আসামিপক্ষের আইনজীবীর অসুস্থতার কথা বলে সময় নেওয়া হয়েছে। আসামিপক্ষে আদালতে সাফাই সাক্ষী উপস্থাপনের জন্য যাদের নাম দেওয়া হয়েছে তারা হলেন, ইসলামপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন চৌধুরী, রেজাউল করিম, বখতেয়ার তালুকদার, ফজল কবির ও লোকমান গনি।
এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অতিরিক্ত জেলা পিপি লোকমান হোসেন চৌধুরী জানান, মামলাটি চাঞ্চল্যকর হওয়ায় উচ্চ আদালত ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দিয়েছেন। এর আলোকে আদালত মামলাটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু বুধবার আসামিপক্ষের সাফাই সাক্ষী হাজির করার নির্ধারিত দিন থাকলেও কোনো সাক্ষী হাজির করেনি। আসামির আইনজীবী অসুস্থ দাবি করে সময়ের আবেদন করা হয়। আদালত এক সাপ্তাহের সময় দিয়েছেন।
প্রসঙ্গতঃ ২০১৫ সালের ২১ জানুয়ারি রাত সাড়ে ৮টার দিকে রাঙ্গুনিয়ার রানিরহাট প্রাথমিক বিদ্যালয় গেটের সামনে ভিকটিম জিল্লুর রহমান ভান্ডারীকে আসামিরা এলোপাতাড়ি মারধর ও উপর্যুপরি গুলি করে মারাত্মকভাবে জখম করে। ভিকটিমের ভাই মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন বাবলুকে ঘটনার তিনমাস আগে কাতারে নেন আসামি ইসমাইল প্রকাশ পিস্তল ইসমাইলের ভাই মোহাম্মদ জব্বার। কিন্তু জব্বার বাবলুকে কাতারে পতাকা লাগিয়ে না দেয়ায় বাবলুর সাথে জব্বারের কথা কাটাকাটি হয়। এ অবস্থায় বাবলুর ভিসা বাতিল করে তাকে দেশে পাঠিয়ে দেন জব্বার। একই বছরের ২০ জানুয়ারি রাত ৮টার দিকে ইসমাইলকে রানিরহাট বাজারে পেয়ে ভিকটিম জিল্লুর রহমান ভান্ডারী তার ছোট ভাই বাবলুকে দেশে পাঠানোর কারণ জানতে চান। একইসাথে ভিসা বাবত দেওয়া দুইলাখ ৫০ হাজার টাকা ফেরত দিতে বলেন। এসময় তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়। পরের দিন রাত সাড়ে ৮টায় আসামিরা রানিরহাট সিএনজি টেক্সি স্টেশনে জিল্লুরকে একা পেয়ে এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করে। এক পর্যায়ে তাকে উল্লেখিত রানিরহাট প্রাথমিক বিদ্যালয় গেটের সামনে নিয়ে গিয়ে পায়ে গুলি করা হয়। এ ঘটনায় গুরুতর জখম হন জিল্লুর রহমান ভান্ডারী। তাকে প্রথমে স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখান থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনার পর তার মৃত্যু হয়।
বর্তমানে মামলাটি চলছে চট্টগ্রাম প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ শেখ ছামিদুল ইসলামের আদালতে। এ ঘটনায় ২০১৫ সালের ২২ জানুয়ারি ভিকটিমের ছোট ভাই মোহাম্মদ আজিম উদ্দিন রাঙ্গুনিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করার পর ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবর তদন্ত শেষে সিআইডি শহীদুল ইসলাম খোকনকে প্রধান আসামি করে চার্জশিট জমা দেয়। ২০১৯ সালের ২৮ মে ১৩ আসামির বিরুদ্ধে বিচার শুরু হয়। বাদীপক্ষে মামলা পরিচালনা করছেন সাবেক পিপি এডভোকেট আবদুস সাত্তার ও সিনিয়র আইনজীবী শামসুদ্দিন কালাম।