জীর্ণশীর্ণ ভবনেই স্কুল!

74

 

চতুর্দিকে ভাঙ্গা-চোরা বেড়া, উপরে ছিদ্রযুক্ত অনেকদিনের পুরনো টিনের ছাউনি এবং নিচের মেঝেতে ছোট ছোট গর্তে ভরপুর এমন জীর্ণ-শীর্ণ ভবনেই চলছে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চরম্বা ইউনিয়নের অঝোঁপাড়া গাঁয়ে প্রতিষ্টিত চরম্বা নাছির মোহাম্মাদ পাড়া বেসরকারী মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠদান। বিদ্যালয়টি সরেজমিন পরিদর্শনকালে জানা যায়, বিগত ২০১৫ সালে লোহাগাড়ার চরম্বা ইউনিয়নের এক অঝোপাড়া গাঁ নাছির মোহাম্মাদ পাড়ার মতো দরিদ্র এলাকায় তৎকালীন লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ফিজনূর রহমান ও স্থানীয় এলাকাবাসীর আন্তরিক সহযোগীতায় এলাকায় এ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মো. সাইফুল আলম চৌধুরী।
উপরে টিনের ছাউনি এবং চতুর্দিকেও টিনের বেড়া এমন একটি ভবন নির্মাণ করে বিদ্যালয়টিতে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা হয়। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে ৪ জন শিক্ষকের বিপরীতে ১৮০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। সরেজমিন পরিদর্শনকালে দেখা যায়, বিদ্যালয় ভবনটির চতুর্দিকে ভাঙ্গা-চোরা বেড়া, উপরে অসংখ্য ছোট-বড় ছিদ্রযুক্ত অনেকদিনের পুরনো টিনের ছাউনি এবং নিচের মেঝেতে ছোট ছোট গর্তে ভরপুর। বর্ষা মৌসুমে টিনের ছিদ্র ও ভাঙ্গা ছাউনী দিয়ে বৃষ্টির পানি শ্রেণি কক্ষে ঢুকে সয়লাব হয়ে যাবে। এছাড়াও ভবনটির দরজা-জানালাও ভেঙ্গে গেছে। শ্রেণী কক্ষের বেঞ্চ গুলোর অবস্থাও খুবই নাজুক। জানা যায়, চরম্বা নাছির মোহাম্মদ পাড়া বেসরকারী মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চার পাশে রয়েছে হাজার হাজার মানুষের বসবাস। কিন্তু এলাকার শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা করতে রীতিমত হিমশিম খেতে হতো। তাই বিদ্যালয়টি জাতীয়করণের জন্য সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার সংসদ সদস্য প্রফেসর ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী এমপির ডিও লেটার নিয়ে ইতোমধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আবেদন পাঠানো হয়েছে। এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা ভ্যান চালক মুহাম্মদ শফি জানান, আমরা অশিক্ষিত মানুষ। এ অঁঝোপাড়া গাঁয়ে এতোদিন একটি স্কুলের অভাবে আমরা পড়ালেখা করতে পারিনি। এই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা হওয়ায় পুরো এলাকাটি আলোকিত হয়েছে। আমাদের ছেলে-মেয়েরা স্কুলে পড়ালেখা করতে পারছে। তবে, বিদ্যালয় ভবনটি ঝরা-জীর্ণ। সরকারীভাবে একটি ভবন হলে এলাকার অনেক কোমলমতি ছেলে-মেয়ে স্কুলটিতে পড়া-লেখা করতে পারতো। আমাদের এলাকার জন্য অনেক ভাল হতো। দেশে শিক্ষিত লোকের সংখ্যা বাড়তো।
বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা মো. সাইফুল আলম চৌধুরী জানান, চরম্বা নাছির মোহাম্মদ পাড়ার আশ-পাশে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিলো না। এক সময় এলাকার শিক্ষার্থীদের অতিকষ্ঠে অনেক দুরে গিয়ে পড়ালেখা করতে হতো। এলাকায় শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে স্থানীয়দের সহযোগীতা নিয়ে বিগত ২০১৫ সালে নাছির মোহাম্মাদ পাড়া বেসরকারী মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ নিই। বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই পিএসসি পরীক্ষায় শতভাগ পাস করতে সক্ষম হয়েছে। বিদ্যালয়ের টিনের বেড়াগুলো প্রায় ভেঙ্গে পড়েছে। ঝরাজীর্ণ ভবনে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করতে হচ্ছে। একটি নতুন ভবন ও বিদ্যালয়টি জাতীয়করণের জন্য মাননীয় এমপি ড.আবু রেজা নদভী মহোদয়ের ডিও লেটার নিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রনালয়ে আবেদন করেছি। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণের জন্য জোর দাবী জানাচ্ছি। লোহাগাড়া উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার মো. মোসলেম উদ্দিন বলেন, ঝরাজীর্ণ ভবন হলেও বিদ্যালয়টিতে সরকারীভাবে সব ধরণের সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়। এখনো সরকারীকরণ না হলেও বিদ্যালয়টি শিক্ষার মানোন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। যা অনেক প্রশংসনীয়।
লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোঃ আহসান হাবীব জিতু জানান, ইতোমধ্যে আমি বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করেছি। বিদ্যালয়টির সার্বিক বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।