ছাত্রলীগের চিকায় বদলে গেল আবাসিক হলের নাম!

20

চবি প্রতিনিধি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের অন্যতম একটি আবাসিক হল এ.এফ রহমান হল। বর্তমানে যেন এই হলের নাম পরিবর্তিত হয়ে রূপ নিয়েছে বিজয় হল নামে। শাখা ছাত্রলীগের উপগ্রুপ বিজয়ের নামে চিকা মারার ফলে অচেনা একটি রূপ নিয়েছে ৪ তলা বিশিষ্ট এই হলটি।
সরেজমিনে দেখা যায়, বর্তমানে ৪ তলা বিশিষ্ট এই লাল দালানের নাম দূর থেকে মনে হবে ‘বিজয়’ হল। বিজয় গ্রুপের কর্মীদের দেয়ালজুড়ে অতিরিক্ত আঁকাআঁকি ও গ্রুপের নামে চিকা মারার কারণে গেটের উপরে হলের নামটা যেন চোখেই পড়ে না। চার তলা বিশিষ্ট এই ভবনের পুরোটা জুড়েই এখন ছেয়ে আছে বিজয় শব্দে। ফলে অনেকেই এটাকে ‘বিজয়’ হল নামেই চিনছেন।
বিশেষ করে ক্যাম্পাসে বিভিন্ন জায়গা থেকে ঘুরতে আসা পর্যটকরা বিভ্রান্ত হন দেয়ালজুড়ে বিজয় লেখা দেখে।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ থেকে চবি ক্যাম্পাসে বগিভিত্তিক রাজনীতি ও বগিভিত্তিক সংগঠনের নামে চিকা মারা-পোস্টারসহ যেকোনো ধরনের কর্মকান্ডের প্রতি নিষেধাজ্ঞা দিলেও তা মানছেন না শাখা ছাত্রলীগের বিভিন্ন বগি ভিত্তিক উপগ্রæপগুলো। চিকা মারা ছাড়াও বগিভিত্তিক সংগঠনের নামে মিছিল মিটিংসহ নানা কর্মকান্ড পরিচালনা করে আসছেন তারা। এমনকি বিজয় গ্রুপের নামে জার্সি বানিয়ে ফুটবল টুর্নামেন্টেরও আয়োজন করেছিল গ্রুপটি।
গত ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার সময় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখায় শাটল ট্রেনের বগি ভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকায় বিভিন্ন ধরনের বগির নামে চিকা মারা, টি-শার্ট, প্ল্যাকার্ড এবং স্লোগান সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা হলো। কিন্ত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের এমন নির্দেশের প্রতি ভ্রুক্ষেপও করছেন না নেতাকর্মীরা।
বিজয় ছাড়াও শাখা ছাত্রলীগের একাধিক বগি ভিত্তিক গ্রুপও ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় গ্রুপের নামে চিকা মেরেছেন। চিকা মারার পাশাপাশি বগির নামে স্লোগান, টি শার্ট পরে ঘোরাসহ সবকিছুই করছেন গ্রুপগুলোর নেতাকর্মীরা।
বর্তমানে বগিভিত্তিক উপগ্রুপ বিজয়ের দখলে রয়েছে সর্বোচ্চ তিনটি হল- এ.এফ রহমান, আলাওল এবং সোহরাওয়ার্দী হল, সিক্সটি নাইনের দখলে শাহজালাল হল, সিএফসির দখলে শাহ আমানত হল, এছাড়া শহিদ আব্দুর রব হলে রয়েছে সিএফসি, বাংলার মুখ, ভিএক্স ও কনকর্ডসহ কয়েকটি গ্রুপের অনুসারীরা। সূর্যসেন হলে রয়েছে এপিটাফ গ্রুপের অনুসারীরা। বছরের বিভিন্ন সময় বগি ভিত্তিক গ্রুপগুলো ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় চিকা মেরে নিজেদের অবস্থান জানান দেয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের এ.এফ রহমান হলের চিত্রটি অন্যান্য হলের তুলনায় ভিন্ন। হলটির পুরো দেয়াল জুড়ে এত বেশি চিকা মারা হয়েছে যার কারণে হলটির আসল রূপই পাল্টে গেছে। এ. এফ রহমান হলের পরিবর্তে হলটিকে দেখে মনে হচ্ছে বিজয় হল।
এদিকে ছাত্রলীগের উপগ্রুপগুলোর এমন কর্মকান্ডের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য্য নষ্ট হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
একাধিক শিক্ষার্থী পূর্বদেশকে বলেন, দেশের সবচেয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে ভরপুর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। কিন্ত বিভিন্ন জায়গায় অতিরিক্ত চিকা মারার ফলে ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য্য এসব চিকার আড়ালে ঢাকা পড়ে গেছে। প্রশাসনের উচিত এসব বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করে ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য্যকে সমুন্নত রাখা।
চিকা মারার বিষয়ে বিজয় গ্রুপের নেতা ও ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক নজরুল ইসলাম সবুজ বলেন, শাটল ট্রেনের বগিভিত্তিক রাজনীতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক আগে থেকে চর্চা হয়ে আসছে। আমরা বগিভিত্তিক রাজনীতির পক্ষে নয়, তবুও হলগুলোর দেয়ালে কর্মীরা হয়তো তাদের আবেগ থেকে চিকা মারে। সেটা শুধু আমাদের গ্রুপ না প্রত্যেক গ্রæপের কর্মীরা এটা করে থাকে। যদি এফ রহমান হলের বিষয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আপত্তি থাকে সেক্ষেত্রে বিষয়টা আমরা গুরুত্বের সাথে দেখবো। ছাত্রলীগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের কথা বলে। আমরা সবসময় সাধারণ শিক্ষার্থীর পক্ষে।
শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি রেজাউল হক রুবেল বলেন, বিষয়টা আমাদের চোখে পড়ার পর আমরা প্রশাসনকে বলেছিলাম বগিভিত্তিক সংগঠনগুলোর চিকা মুছে দেওয়ার জন্য। কিন্তু প্রশাসন এতদিনেও কেন এ বিষয়ে নীরব, এটা আমারও প্রশ্ন। যেহেতু বগিভিত্তিক সংগঠন ছাত্রলীগ থেকে নিষিদ্ধ, তাই এ ধরনের কর্মকান্ড সমর্থন করতে পারি না আমরা।
এ.এফ রহমান হলের প্রভোস্ট বলেন ড. কাজী এসএম খসরুল আলম কুদ্দুসী বলেন, বছরখানেক আগে হলের দেয়াল পরিষ্কার করার পর পরেই চিকাগুলো মারা হয়েছিল। এসব চিকার ফলে সৌন্দর্য্য নষ্ট হচ্ছে যা আমার কাছে ভাল লাগেনি। হলে অবস্থানরত প্রত্যেকের দায়িত্ব সৌন্দর্য্য রক্ষা করা। যেহেতু ছাত্র সংগঠনের নামে চিকাগুলো মারা হচ্ছে সেহেতু সংগঠনের নেতাদের বিষয়টি দেখা উচিত। নিজেদের হলের সৌন্দর্য্য রক্ষার জন্য নিজেদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে।