চট্টগ্রাম জেলা পর্যায়ে কৃমি নিয়ন্ত্রণ সপ্তাহ উদ্বোধন

16

নিজস্ব প্রতিবেদক

চট্টগ্রাম জেলার ১৪ উপজেলা ও মহানগরীর প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় মিলে মোট ৬ হাজার ৯৫০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিদ্যালয় বহির্ভূত ৫-১৬ বছর বয়সী মোট ১৮ লাখ ২৭ হাজার ৫৩৭ জন শিশুকে এক ডোজ কৃমিনাশক ট্যাবলেট খাওয়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে উদ্বোধন করা হযেছে জাতীয় কৃমি নিয়ন্ত্রণ সপ্তাহ। ৩০ অক্টোবর-৫ নভেম্বর পর্যন্ত এই কৃমি নিয়ন্ত্রণ সপ্তাহে জেলার প্রত্যেক উপজেলা ও মহানগরের প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উপস্থিতির মাধ্যমে ৫-১৬ বছর বয়সী বিদ্যালয়গামী শিক্ষার্থী, বিদ্যালয় বহির্ভূত সকল শিশুকে ক্ষুদে ডাক্তারদের মাধ্যমে এক ডোজ কৃমিনাশক ট্যাবলেট (মেবেন্ডাজল-৫০০ মি. গ্রাম) খাওয়ানো হবে।
গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ৯ টায় নগরীর কাজির দেউরি সরকারি প্রাথমিক বালিকা বিদ্যালয়ে জেলা পর্যায়ে জাতীয় কৃমি নিয়ন্ত্রণ সপ্তাহের উদ্বোধন করা হয়। বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে এক ডোজ কৃমিনাশক ট্যাবলেট খাইয়ে দিয়ে এ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের যুগ্ম সচিব ডা. এ এম পারভেজ রহীম। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার ফাইলেরিয়াসিস নির্মূল, কৃমি নিয়ন্ত্রণ ও ক্ষুদে ডাক্তার কার্যক্রম রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার বাস্তবায়নে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও জেলা স্বাস্থ্য তত্বাবধায়ক সুজন বড়–য়ার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর। বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আক্তার চৌধুরী।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ আসিফ খান। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের জোনাল মেডিকেল অফিসার ডা. তপন কুমার চক্রবর্তী, কাজির দেউরি সরকারি প্রাথমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা তপতী চক্রবর্তী, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তা সম্পদ দে, জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তা প্রবীর মিত্র ও স্যানিটারী ইন্সপেক্টর টিটু কান্তি পাল অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, এবার জেলার ১৪ উপজেলা ও মহানগরীর প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় মিলে মোট ৬ হাজার ৯৫০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিদ্যালয় বহির্ভূত ৫-১৬ বছর বয়সী মোট ১৮ লাখ ২৭ হাজার ৫৩৭ জন শিশুকে এক ডোজ কৃমিনাশক ট্যাবলেট খাওয়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরমধ্যে জেলার ১৪ উপজেলার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় মিলে মোট ৫ হাজার ৬৬২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিদ্যালয় বহির্ভূত মোট ১৪ লাখ ৭৭ হাজার ৫৩৭ জন এবং নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডের মোট ১ হাজার ২৮৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিদ্যালয় বহির্ভূত মোট ৩ লাখ ৫০ হাজার শিশু রয়েছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জানানো হয়, কৃমিনাশক ট্যাবলেট ‘মেবেন্ডাজল-৫০০ মি. গ্রাম’ খাওয়ানো হবে। এটি চুষে খাবার ট্যাবলেট নয়, ভরা পেটে পানি দিয়ে গিলে খাওয়াতে হবে। কোনো শিশু পুরো ট্যাবলেট গিলে খেতে অসমর্থ হলে তাকে জোর না করে ট্যাবলেট ভেঙ্গে টুকরা টুকরা করে গিলে খাওয়ানো যেতে পারে। কর্মসূচি সফল করতে সর্বত্র ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালানো হয়েছে। জেলা প্রশাসন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বা স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিবৃন্দের সাথে পরামর্শক্রমে জাতীয় কৃমি নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি সফল করার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য কর্মীরা নির্দিষ্ট সময়ে বিদ্যালয়গুলো পরিদর্শনের মাধ্যমে ক্ষুদে ডাক্তারদের কার্যক্রম তদারকি করবে। সকলের আন্তরিক সহযোগিতায় তৃণমূল পর্যায় থেকে কৃমি নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে পারলে স্বাস্থ্য বিভাগের কার্যক্রমে ঈর্ষণীয় সাফল্য আসবে।
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী জানান, এবার জেলার ১৪ উপজেলার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় মিলে মোট ৫ হাজার ৬৬২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিদ্যালয় বহির্ভূত ৫-১৬ বছর বয়সী মোট ১৪ লাখ ৭৭ হাজার ৫৩৭ জন এবং নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডের মোট ১ হাজার ২৮৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিদ্যালয় বহির্ভূত মোট ৩ লাখ ৫০ হাজার শিশুকে এক ডোজ কৃমিনাশক ট্যাবলেট খাওয়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
জাতীয় কৃমি নিয়ন্ত্রণ সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর বলেন, খাবার আগে বা পরে, মলত্যাগের পর ভালোভাবে হাত ধোয়ার অভ্যাস আমাদের অনেকের মধ্যে নেই। এছাড়া অপরিস্কার, সংক্রমিত খাবার, শাকসব্জি ও অবিশুদ্ধ সংক্রমিত পানির মাধ্যমে এ রোগ ছড়ায়। অপরিচ্ছন্ন ও অসচেতনতাকে কৃমির প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এ রোগের চিকিৎসায় চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কৃমির ওষুধ সেবন করতে হবে। প্রতি ৪ মাস অন্তর কৃমির ওষুধ সেবন করতে হয়। বাড়িতে কৃমির ওষুধ সেবন করলে বাড়ির প্রতিটি সদস্যকেই তা গ্রহণ করতে হয়। কারণ তা না হলে সংক্রমণের আশঙ্কা থেকে যাবে।
অনুষ্ঠানের উদ্বোধক স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের যুগ্ম সচিব ডা. এএম পারভেজ রহীম বলেন, কৃমি রোগ আমাদের দেশের একটি বহুল প্রচলিত স্বাস্থ্য সমস্যা। সব বয়সেই এ রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটতে পারে। তবে শিশুরাই এ ক্ষেত্রে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। আমাদের দেশের শিশু মৃত্যুর হার বৃদ্ধির পেছনে এই রোগের ভূমিকা রয়েছে। একটুখানি সচেতনতা এ রোগকে প্রতিহত করতে পারে।