চট্টগ্রামে বিএনপির তৃণমূলে হতাশা

53

এম এ হোসাইন

সংগঠন গোছানোর জন্য গঠিত টাস্কফোর্স কোনো ক‚ল-কিনারা পাচ্ছে না নগর বিএনপির। দল পুনর্গঠনে চট্টগ্রাম মহানগরকে ‘পাইলট প্রকল্প’ হিসাবে নিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তবে থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ে নেতৃত্ব খুঁজে পাচ্ছে না গঠিত টাস্কফোর্স। ভুগছে সিদ্ধান্তহীনতায়। যা ইতিমধ্যেই কয়েকটি মিটিংয়ে দেখা গেছে।
জানা গেছে, কিছুদিন ধরেই নগর বিএনপিতে নতুন মেরুকরণের চেষ্টা চলছিলো। উত্তরের এক কেন্দ্রীয় নেতার ইশারায় শাহাদাত-বক্করকে ব্যর্থ প্রমাণের চেষ্টা চলে আসছিল। নিজের বলয় তৈরি করতে শুরু হয় নগর কমিটি ভেঙে দেয়ার সব আয়োজন। কিন্তু যোগ্য নেতৃত্ব না পাওয়াতে শাহাদাত-বক্করকে সরাতে চাননি স্বয়ং দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সর্বশেষ স্কাইপি বৈঠকে তারেক রহমান দলীয় কর্মসূচি পালনে শাহাদাত-বক্করকে সফল বলে উল্লেখ করেন। তবে সংগঠনকে না গোছানোর জন্য ভৎসনাও শুনতে হয় শাহাদাত-বক্করকে। সেই বৈঠকেই চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপিকে গোছানোর জন্য ৫ সদস্যের টাস্কফোর্স টিম এবং ৫টি উপকমিটি গঠন করা হয়। এ প্রক্রিয়ায় নগর বিএনপির কমিটির বাইরের ১২ জনকে যুক্ত করা হয়। বাদ দেয়া হয় আহŸায়ক কমিটির ১৯ সদস্যকে। টাস্কফোর্সের উপকমিটিগুলো উত্তর জেলার সেই নেতার বলয়ে চলে আসে। ফলে পুনর্গঠন প্রক্রিয়াতে যুক্ত ৩১ সদস্যের মধ্যেও রয়েছে বিভক্তি। পুনর্গঠন প্রক্রিয়াতে কেউ কোণঠাসা আবার কেউ ফুরফুরে মেজাজে থাকলেও তৃণমূল্যে তৈরি হচ্ছে অসন্তোষ, হতাশা।
নগর বিএনপির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, চট্টগ্রাম বিএনপির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। এখানে একটি কমিটি আছে, সেই কমিটির আহব্বায়ক-সদস্য সচিবকে আড়ালে রেখে কোনো কাজ করা ঠিক হবে না। এখন পর্যন্ত যা হচ্ছে তাতে আহব্বায়ক-সদস্য সচিবসহ কিছু নেতাকে কোণঠাসা করে রাখা হয়েছে। পক্ষপাতিত্বের কারণে টিমের সদস্যদের সাথে পাঁচলাইশ, বায়েজিদ এলাকায় বাকবিতন্ডা হয়েছে। এসব বিএনপিকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র।
স্কাইপি বৈঠকে তিনমাসের মধ্যে থানা ও ওয়ার্ড কমিটি করে নগর কমিটি পুনর্গঠনের নির্দেশনা দেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। প্রত্যেক ধাপে সম্মেলন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ধারাবাহিকভাবে কাজ শেষ করতে গেলে নির্দিষ্ট ছক ধরে এগোতে হবে। অন্যথায় টাস্কফোর্সকেও ব্যর্থতার দায় নিতে হবে। কোন প্রক্রিয়ায় এগোবে তা জানাতে গত শনিবার সংবাদ সম্মেলন ডাকে টাস্কফোর্স কমিটি। তবে সিদ্ধান্তহীনতার কারণে আগের দিন শুক্রবার সেই সংবাদ সম্মেলন বাতিল করা হয়। যদিও সংবাদ সম্মেলন বাতিলের বিষয়টি নগর বিএনপি বা টাস্কফোর্সের পক্ষ থেকে জানানো হয়নি।
টাস্কফোর্সের প্রধান অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান বলেন, আমরা প্রত্যেক থানা ও ওয়ার্ডে কাজ শুরু করেছি। যতদিন লাগে এ কার্যক্রম চলবে। সদস্য সংগ্রহ অভিযান শেষ হলে তৃণমূলে কমিটি গঠন করা হবে। তারপর তৃণমূল থেকে ওয়ার্ড, থানা এবং সর্বশেষ মহানগর কমিটি পুনর্গঠন করা হবে। প্রত্যেকটা কমিটি সম্মেলনের মধ্যেমে গঠন করা হবে। আমরা আগামী তিনমাসের মধ্যেই কার্যক্রম শেষ করবো।
অনিবার্ষ কারণে সংবাদ সম্মেলন বাতিল করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। যাদেরকে কমিটির বাইরে থেকে আনা হয়েছে তারা কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন, যারা কমিটিতে আছেন তারা তো আছেনই। আমরা কোনো বিরোধ তৈরি করবো না। মতপার্থক্য থাকলে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা হবে। কারণ প্রত্যেক নেতাকর্মী নির্যাতিত, প্রত্যেকে একটা দলই করে, সেটি বিএনপি। ব্যক্তি স্বার্থের উর্ধ্বে উঠে সবাই দলের জন্য কাজ করবে।
জানা যায়, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাথে গতমাসে স্কাইপি বৈঠকের পর নগর বিএনপির পুনর্গঠন কার্যক্রম তরান্বিত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। সেই বৈঠকে নগর বিএনপির কমিটিতে নেই এমন ১২ জনকেও ডাকা হয়। ডাক পাওয়া এসব নেতাকেও দেয়া হয় বিভিন্ন দায়িত্ব। স্কাইপি বৈঠকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খানকে প্রধান করে একটি টাস্কফোর্স গঠন করার সিদ্ধান্ত হয়। পাঁচ সদস্যের টাস্কফোর্সে নগর বিএনপি নেতা একরামুল করিম, আবদুস সাত্তার, সৈয়দ আজম উদ্দিন ও এস কে খোদা তোতনকে রাখা হয়। তাছাড়া টাস্কফোর্সের অধীনে চট্টগ্রাম মহানগরীর ওয়ার্ড ও থানা কমিটি পুনর্গঠনের জন্য আরো ৫টি উপকমিটি গঠন করা হয়। এসব কমিটিতে নগর বিএনপি নেতা এরশাদউল্লাহ, এম এ আজিজ, কাজী বেলাল, নাজিমুর রহমান ও এস এম সাইফুল আলমকে প্রধান করার সিদ্ধান্ত হয়। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সই করা এক চিঠির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এই টাস্কফোর্স গঠন করা হয়।
টাস্কফোর্সের কাজ শুরুর পর নগর বিএনপির আহব্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন ও সদস্য সচিব আবুল হাসেম বক্কর অনেকটা সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে আড়ালে চলে গেছেন। বিভিন্ন এলাকায় ইফতার সামগ্রি বিতরণের ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন তারা।
নগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাসেম বক্কর বলেন, হাইকমান্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী টাস্কফোর্স কাজ করে যাচ্ছে। আমরা আমাদের অবস্থান থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করছি। যখন যেভাবে আমাদের সহযোগিতা চাইবে, আমরা সেভাবে করবো। আমাদের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই, দলের স্বার্থে আমরা সবাই এক হয়ে কাজ করবো।
মহানগর বিএনপির আহব্বায়ক কমিটি ৩৯ সদস্যের হলেও একজন মারা যাওয়ায় বর্তমানে ৩৮ জন সদস্য রয়েছেন। দল পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় ১৯ জনকে দূরে রাখা হয়েছে। আবার যুক্ত করা হয়েছে কমিটির বাইরের ১২ জনকে। সব মিলিয়ে দল পুনর্গঠনে যুক্ত আছেন ৩১ জন। বাস্তবে পুনর্গঠন প্রক্রিয়াতে যুক্ত না করা নগর বিএনপির কমিটির ১৯ সদস্য কোণঠাসা অবস্থায় আছেন। গত ২৯ মার্চ টাস্কফোর্স ও বিভিন্ন উপকমিটির সদস্যদের নিয়ে বৈঠক করেন টাস্কফোর্সের প্রধান বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান। তাতেও ডাকা হয়নি দল পুনর্গঠন থেকে দূরে রাখা বিএনপি সেই নেতাদের। এদিকে টাস্কফোর্সের উপকমিটিগুলো এলাকায় কাজ শুরু করলে সেখানে শাহাদাত-বক্করের অনুসারীরা সহযোগিতা করছে না বলে জানা গেছে।
নগর বিএনপির আহব্বায়ক কমিটির সদস্য আবদুল মান্নান বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যে নির্দেশনা দিবেন আমরা তা পালনে প্রস্তুত আছি। দল পুনর্গঠন কার্যক্রমে আমাকে ডাকা না হলেও সর্বাত্মক সহযোগিতার জন্য প্রস্তুত আছি।