ঘরের ভেতরে অবৈধ তেলের কারখানা

66

নিজস্ব প্রতিবেদক

অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ও অবৈধভাবে ভোজ্য তেল বোতলজাত ও বাজারজাত করে আসছিল এএসএস কর্পোরেশন নামের একটি প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস্ অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) কোনো অনুমোদন না থাকলেও তেলের বোতলে রয়েছে লোগো। একটি টিনশেড ঘরের মধ্যে পুরো কারখানা বানিয়ে এসব করছিল প্রতিষ্ঠানটি। গত বৃহস্পতিবার নগরীর হালিশহর এলাকার এই প্রতিষ্ঠানটিতে অভিযান চালিয়েছে র‌্যাব।
এসময় অবৈধভাবে সয়াবিন তেল বাজারজাত করার অভিযোগে মো. হুমায়ুন কবির নামের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হুমায়ুন কবির ভোলা জেলার দৌলতখান থানার বড়দলির মৃত মো. আবু তাহেরের ছেলে।
বিএসটিআইয়ের লোগো ব্যবহার করে সয়াবিন তেল বাজারজাত করছিল এএসএস কর্পোরেশন। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বোতলজাত করা হচ্ছিল সয়াবিন তেল। খোলা ও ভেজাল ব্যারেল থেকে মোটর পাম্পের মাধ্যমে টিনসেড ঘরে এসব সয়াবিন তেল সংরক্ষণ করা হচ্ছি। সেখানে প্লাস্টিক কৌটায় ভরে ‘রমনী ফর্টিফাইড সয়াবিন তেল’ নামে বাজারজাত করা হচ্ছিল। অবৈধ প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দিয়ে একজনকে আটক করে র‌্যাব।এর আগেও একই ধরনের বিভিন্ন ভেজাল সয়াবিন তেল কারখানার সন্ধান পেয়েছিল প্রশাসন। অভিযানের পর প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দেয়া হলেও পরবর্তিতে আবার নানা উপায়ে বাজারে সক্রিয় হয়ে উঠে এসব প্রতিষ্ঠানের তেল। বিভিন্ন সময়ে মোহরা, পাহাড়তলী, ফতেয়াবাদ, মাদারবাড়ী এলাকা থেকে এমন অবৈধ তেল বোতলজাতকারী কারখানার সন্ধান পায় প্রশাসন। দুইবছর আগে ২০২০ সালের আগস্টে নগরীর মোহরায় একটি কারখানা সিলগালা করা হয়েছিল। নবান্ন নামের মোড়কে রুপচাঁদা সয়াবিন তেল নকল করেছিল তারা। এমনিক এস আরম এডিবল অয়েল ও পতেঙ্গার ভিওটিটি অয়েল কোম্পানির তেল নিজেদের নামে বাজারজাত করে আসছিল। জেলা প্রশাসনের অভিযানে সিলগালা করা প্রতিষ্ঠানটির বিএসটিআইরে অনুমোদন ছিল না। তা ছাড়া উপযুক্ত ল্যাব, কেমিষ্ট ছিল না। তখন প্রতিষ্ঠানটিকে দুই লাখ টাকা জরিমানাও করা হয়েছিল।
বিএসটিআই চট্টগ্রামের পরিচালক প্রকৌশলী মো. নুরুল ইসলাম বলেন, কোথাও এ ধরণের অবৈধ প্রতিষ্ঠান থাকলে আমরা অবশ্যই অভিযান পরিচালনা করবো। বিএসটিআই প্রশাসনের সহযোগিতায় নিয়মিত অবৈধ প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে সজাগ থাকে। তারপরও কোনো এলাকায় এমন প্রতিষ্ঠান থাকলে সেটার অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থায় যাবো। অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠান বিএসটিআইয়ের লোগো ব্যবহার সেটা আরো বড় অন্যায়। এমন প্রতিষ্ঠানের সন্ধান পেলে বিএসটিআই পদক্ষেপ নিবে।
র‌্যাব-৭ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) মো. নুরুল আবছার জানান, অনুমোদনহীনভাবে বিএসটিআইর লোগো ব্যবহার করে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে খোলা ও ভেজাল তেল ব্যারেল থেকে মোটর পাম্পের মাধ্যমে বোতলজাত করে বাজারজাতের উদ্দেশ্যে একটি টিনসেড ঘরের ভেতরে ভেজাল সয়াবিন তেল সংরক্ষণ করা হয়েছে- এমন গোপন তথ্যের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার সকালে অভিযান চালিয়ে মো. হুমায়ুন কবির নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। অনুমোদনহীনভাবে বিএসটিআইর লোগো ব্যবহার করা প্রায় ২ হাজার ৭০০ লিটার ভেজাল সয়াবিন তেল এবং ভেজাল সয়াবিন তেল তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জামাদি জব্দ করা হয়। জব্দকৃত ভেজাল সয়াবিন তেলের আনুমানিক মূল্য ৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা।
আটক ব্যক্তিকে থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে জানিয়ে তিনি জানান, এএসএস কর্পোরেশন নামের এই প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন যাবত নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খোলা বাজার থেকে নিম্নমানের ভেজাল খোলা সয়াবিন তেল সংগ্রহ করে ওই ফ্যাক্টরিতে ভেজাল উপাদান দিয়ে ‘রমনী ফর্টিফাইড সয়াবিন তেল’ নামে প্লাস্টিকের কৌটায় ভরে বাজারজাত করছিল। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দেওয়ার জন্য তাদের সুবিধাজনক জায়গায় প্রতিষ্ঠানটি স্থাপন করে রাতের বেলায় বিভিন্ন ভেজাল উপাদান দিয়ে ভেজাল সয়াবিন তেল তৈরি করে সকাল বেলায় কৌটাজাত করতেন। দিনের বেলায় প্রতিষ্ঠানে কোনো কাজ হয় না এবং প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করার মতো কোনো ধরনের সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড ব্যানার নেই।