গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির সুপারিশ জনদুর্ভোগ বাড়াবে

12

গত মাসে পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির খবরে চরম উদ্বেগ প্রকাশ করে সাধারণ গ্রাহকরা ধারণা করেছিলেন এর প্রভাব থেকে অবশ্যই সাধারণ মানুষ মুক্ত থাকবে না, শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছিল কর্তৃপক্ষ পরবর্তীতে খুচরা পর্যায়ে দাম বৃদ্ধি করতে বাধ্য হবে। এ আশঙ্কা অমূলক ছিল না, এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) কর্তৃক গঠিত কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি মাত্র একমাসের মাথায় গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির সুপারিশের খবর পাওয়া গেছে। সোমবার দৈনিক পূর্বদেশসহ সবকটি সংবাদপত্রে এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)-এর এমন সুপারিশে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। এজাতীয় সুপারিশ বাস্তবায়ন করা হলে জনদুর্ভোগ চরম আকারে পৌঁছাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে সাধারণ মানুষ। উল্লেখ্য যে, কয়েক মাস আগে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর (গত আগস্টে) পর বেড়েছে বেশির ভাগ পণ্য ও সেবার খরচ। নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন স্বল্প আয়ের মানুষেরা। এর মধ্যে খরচের খাতায় যুক্ত হচ্ছে নতুন আরেক খাত। এবার গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ১৫ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) গঠিত কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি। পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ১৯ দশমিক ৯২ শতাংশ বেড়েছে ডিসেম্বরে। এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ভোক্তা পর্যায়ে দাম বাড়ানোর আবেদন করে ছয়টি বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি। বিতরণ সংস্থাগুলো আবেদনে বলেছে, ২০২০ সালের পর খুচরা পর্যায়ে দাম বাড়ানো হয়নি। এর মধ্যে বিভিন্ন খাতে খরচ বেড়েছে। এখন পাইকারি পর্যায়ে দাম বাড়ানোর কারণে তাদের ঘাটতি তৈরি হচ্ছে। তাই পাইকারির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ভোক্তা পর্যায়ে দাম বাড়াতে হবে। দাম বাড়ানোর প্রভাব নিয়ে তারা বলেছে, গ্রাহক ব্যবহারে সাশ্রয়ী হলে তাঁদের মাসের খরচ বাড়বে না। এ ছাড়া ধনী গ্রাহকেরাও বাড়তি বিল এড়াতে সাশ্রয়ী হবেন বলে তাদের ধারণা। তবে ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) বলছে, মূল্যস্ফীতির প্রভাবে মানুষ কষ্টে আছে। বাজারে সব জিনিসের দাম বেশি। এখন বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলে নিত্যপণ্যের দাম আরও বেড়ে যাবে। এটা ভোক্তার জন্য অসহনীয় হবে। তাই দাম বাড়ানোর বিকল্প ভাবা উচিত। বিইআরসির সদস্য (বিদ্যুৎ) বজলুর রহমান প্রথম আলোকে শনিবার বলেন, আগামী মাসে বর্তমান কমিশনের মেয়াদ শেষ হবে। তাই শুনানির পর বেশি সময় নেওয়া হবে না। এ মাসের মধ্যেই বিদ্যুতের দাম নিয়ে আদেশ ঘোষণা করা হবে। এর আগে গত ২১ নভেম্বর পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ইউনিটপ্রতি ১৯ দশমিক ৯২ শতাংশ বাড়িয়েছিল বিইআরসি। নতুন এ দাম ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হয়েছে। দাম বাড়ানোর দুই দিনের মাথায় ভোক্তা পর্যায়ে দাম বাড়ানোর আবেদন করে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। এরপর এক সপ্তাহের মধ্যে বাকি পাঁচটি কোম্পানি আবেদন জমা দেয়। এরপর সবার আবেদন যাচাই-বাছাই করতে কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি গঠন করে দেয় কমিশন।
দেশের সরকারি-বেসরকারি সব বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে চুক্তি অনুসারে নির্ধারিত দামে বিদ্যুৎ কিনে নেয় পিডিবি। এরপর তারা উৎপাদন খরচের চেয়ে কিছুটা কম দামে ছয়টি বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থার কাছে বিক্রি করে। ঘাটতি মেটাতে পিডিবি সরকারের কাছ থেকে ভর্তুকি নেয়। তবে বিতরণ সংস্থাগুলো কোনো ভর্তুকি পায় না। তারা ভোক্তার কাছে ‘মুনাফা না, লোকসান না’ নীতিতে বিদ্যুৎ বিক্রি করার কথা থাকলেও, কেউ কেউ নিয়মিত মুনাফা করে। বিতরণ কোম্পানির আবেদনে দেখা গেছে, সবচেয়ে বড় বিতরণ কোম্পানি পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) গত অর্থবছরে (২০২১-২২) ৫২৪ কোটি টাকা লোকসান করেছে। দাম বাড়ানো না হলে আগামী বছরে এটি আরও বেড়ে যাবে। গত অর্থবছরে ১৬৬ কোটি টাকা মুনাফা করেছে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি)। আগের বছর এটি ছিল ১০৭ কোটি টাকা। তবে দাম না বাড়ালে এ বছর লোকসানে যাওয়ার শঙ্কায় আছে তারা।
জানা গেছে, দাম বাড়ানোর বিকল্প প্রস্তাব শুনানিতে তুলে ধরছে ক্যাব। এ সংগঠনের জ্যেষ্ঠ দুর্নীতি, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা রোধ করে বিদ্যুৎ খাতে ৩০ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করা সম্ভব। এটি না করে পাইকারি দাম বাড়িয়ে বাড়তি ৮ হাজার কোটি টাকা তোলা হচ্ছে। তা এখন সমন্বয়ের কথা বলা হচ্ছে। তবে খুচরা মূল্যবৃদ্ধি এড়িয়ে বিকল্প ব্যবস্থায় এ ঘাটতি পূরণের উদ্যোগ নেয়া জরুরি।