গাজায় ইসরায়েলের বর্বর হামলা নির্বিচারে ফিলিস্তিনি নাগরিকদের হত্যা বন্ধ হোক

24

পবিত্র রমজানের শেষ সপ্তাহে জুমা’আতুল বিদার দিন মসজিদে আল আকসায় ফিলিস্তিনি মুসলমানদের প্রবেশে বাধার জের ধরে ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলি পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ, মসজিদে ঢুকে ইসরাইলি পুলিশ কর্তৃক নামাজরত ফিলিস্তিনিদের উপর গুলি বর্ষণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে উভয়ের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। এ সংঘাতে ইসরাইল ফিলিস্তিনিদের ইট, পাথর ও রকেটের জবাবে বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র থেকে শুরু করে অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র ব্যবহার করে গত বারদিনে গাজাকে অনেকটা ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। নির্বিচারে হত্যা করছে ফিলিস্তিনি নারী, শিশু ও সাধারণ মুসলমানদের। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ৪৭ জন শিশুসহ ১৮১জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। সূত্র জানায়, পূর্ব জেরুজালেম থেকে বেশ কয়েকটি ফিলিস্তিনি পরিবার উচ্ছেদ এবং আলআকসা মসজিদে নামাজ পড়ার সময় মুসল্লিদের ওপর ইসরায়েলি পুলিশের হামলার প্রতিবাদে গাজায় অবস্থিত ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের অনুসারীরা ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে রকেট ছোড়ে। এতে একটি শিশুসহ ১০ ইসরায়েলি নিহত হন। এর প্রতিশোধ হিসেবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জুমার দিন আল আকসা মসজিদে নামাজরত অবস্থায় ফিরিস্তিনীদের উপর আক্রমণসহ গাজায় নির্বিচার হামলা চালায়। ইসরায়েলি বিমান থেকে একের পর এক বোমাবর্ষণে বহু আবাসিক ভবন ধ্বংস হয়ে গেছে। ১০ হাজারের অধিক ফিলিস্তিনি ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। গত শনিবার ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় গাজার আল-জাজিরা ও এপি ভবন ধসে পড়ে। হামলার আগে ওই ভবনের বাড়ির মালিককে টেলিফোন করে হামলার আগাম সংবাদ জানিয়ে এক ঘণ্টা সময় দেওয়া হয় সেখানকার মানুষ ও যন্ত্রপাতি সরিয়ে নেওয়ার জন্য। যদি ইসরায়েলি হামলার উদ্দেশ্য হয় হামাসকে শাস্তি দেওয়া, তাহলে সংবাদমাধ্যমের অফিস কেন বোমা মেরে গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো? গাজা ভূখÐে ইসরায়েলি হামলা নিয়ে যখন বিশ্বের শান্তিকামী মানুষ উদ্বিগ্ন, তখন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু সদম্ভে ঘোষণা দিয়েছেন, ‘যত দিন প্রয়োজন হামলা চলবে।’ তাঁর এ ঘোষণা কেবল উসকানিমূলক নয়, বেসামরিক জনগোষ্ঠীর ওপর নৃশংসতার পক্ষে নির্লজ্জ চেষ্টাও। বিভিন্ন সূত্রের খবরে বলা হয়, স¤প্রতি আস্থা ভোটে জয়ী হলেও ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নেতানিয়াহু বেকায়দায় আছেন। ধারণা করা যায়, নিজের রাজনৈতিক অবস্থান সংহত করতে ফিলিস্তিকনিদের ওপর অন্যায় যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছেন।
অপরদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সংঘাত বন্ধের উদ্দেশ্যে ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ও ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে টেলিফোন করলেও তা লোক দেখানো বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। গত সোমবার বাইডেন কংগ্রেসের বিরোধিতার মুখেও ইসরাইলে অস্ত্র বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন। এর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভেটো প্রয়োগ করে ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের নিন্দা প্রস্তাবকে উিেড়য়ে দেয়। ‘ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার আছে’ এমন মন্তব্যও ছুড়ে দেন বাইডেন। তাঁর এ মন্তব্য যেমনটি পক্ষপাতদুষ্ট, তেমনি তা কার্যত গাজায় নিরীহ মানুষ হত্যাকে বৈধতা দেওয়ার শামিল। আত্মরক্ষার অধিকার কি ইসরায়েলের একচেটিয়া? আত্মরক্ষার অধিকার তো ফিলিস্তিনিদেরও রয়েছে। ফিলিস্তিনিদের অধিকার আছে তাদের হৃত রাষ্ট্র পুনরুদ্ধারের।
আত্মরক্ষার অজুহাত তুলে ইসরায়েল একের পর এক ফিলিস্তিনি ভূখÐ দখল করবে, বোমা মেরে, ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ফিলিস্তিনি মুসলমানদের হত্যা করবে, এটি হতে পারে না। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকে ধারাবাহিকভাবে ফিলিস্তিনি ভূখÐ দখল করে চলেছে। এ ক্ষেত্রে তারা আন্তর্জাতিক আইনকানুন রীতিনীতি সব উপেক্ষা করে আসছে। সেই সঙ্গে নিপীড়ন চালাচ্ছে ইসরায়েলের ভেতরে বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের ওপরও। গত সপ্তাহে সংঘাতের শুরু পূর্ব জেরুজালেম থেকে কয়েকটি ফিলিস্তিনি পরিবার উচ্ছেদের ঘটনা নিয়ে।
গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বরোচিত হামলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে বিশ্বের বড় বড় শহরে। বাংলাদেশসহ অনেক দেশ ইসরায়েলের বর্বরোচিত হামলার নিন্দা করেছে। আমরা ইসরায়েলি হামলার তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানাই। গাজায় ইসরায়েলি হামলা নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদের দু’দফা বৈঠকে কোনো ফল দেয়নি। রোববারের বৈঠকে বরং ইসরাইলের পক্ষে নির্লজ্জ সাফাই গেয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভেটো প্রয়োগ করে, যা ইসরাইলকে আরো বেপরোয়া করে তুলবে-এমনটি আশঙ্কা আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের। আমরা মনে করি, ইসরায়েলি দখলদারি ও স¤প্রসারণ নীতির বিরুদ্ধে বিশ্ব স¤প্রদায়ের ঐক্যবদ্ধ ও জোরালো ভূমিকার কোনো বিকল্প নেই। একমাত্র স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা ও স্বীকৃতিই যে মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তি আনতে পারে, এই বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে বিশ্বের নেতৃস্থানীয় দেশগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। আমরা মনে করি, জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে বিশ্বের যেখানেই মানবাধিকার লঙ্ঘিত হোক না কেন, তার বিরুদ্ধে জাতিসংঘসহ বিশ্ব সম্প্রদায়কে প্রতিবাদ ও প্রতিকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে। ফিলিস্তিনের সমস্যা সমাধানে টু স্টেট বা দুই রাষ্ট্রের যে পলিসি রয়েছে তা বাস্তবায়ন করলে পারস্পরিক সহাবস্থান ও মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির পরিবেশ সৃষ্টি হবে। এক্ষেত্রে জাতিসংঘের ধরি মাছ না ছুঁই পানি এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা প্রভাবশালী দেশগুলোর একচোখা নীতি পরিহার করতে হবে। আমরা অবিলম্বে সংঘাতের অবসান চাই।