গাজায় অনাহার যুদ্ধাপরাধ বিবেচিত হতে পারে : জাতিসংঘ কর্মকর্তা

4

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

গাজার ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে অনাহারকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে ইসরায়েল। যেটি যুদ্ধাপরাধ বলে বিবেচিত হতে পারে বলে মনে করেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ভলকার তুর্ক। প্রায় ছয় মাস ধরে গাজায় ইসরায়েলের অভিযান চলছে এবং ছোট্ট এই ভূখন্ডটির ২৩ লাখ বাসিন্দার প্রায় সবাই বাস্তুচ্যুত হয়েছে। পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তার অভাবে সেখান চরম মানবিক বিপর্যয়কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। গত কয়েক মাস ধরে জাতিসংঘ থেকে বার বার গাজায় যেকোনো সময় দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে বলে সতর্ক করা হচ্ছিল।
স¤প্রতি প্রকাশিত জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনে পরিসংখ্যানগত একগুচ্ছ প্রমাণ তুলে ধরে বলা হয়েছে, গাজায় মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ আসন্ন। দ্রুত পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে আগামী মে মাস নাগাদ সেখানে দুর্ভিক্ষ শুরু হয়ে যেতে পারে।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনানুযায়ী গাজার সাধারণ ফিলিস্তিনিদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করা ইসরায়েল দায়িত্ব। যে দায়িত্ব পালনে এবং গাজায় পর্যাপ্ত মানবিক ত্রাণ সহায়তা প্রবেশ এবং বিতরণের মাধ্যমে তা জনগণের মধে পৌঁছে দিতে জাতিসংঘ ইসরায়েলের উপর চাপ বাড়ানো চেষ্টা করছে।
বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ভলকার তুর্ক বলেন, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে উল্লেখযোগ্য অভিযোগ রয়েছে। এবং সেখানে কয়েকটি ঘটনার ‘বিশ্বাসযোগ্য’ তথ্য পাওয়া গেছে। যা প্রমাণ করে ইসরায়েল গাজা যুদ্ধে অনাহারকে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। “যদি তাদের এই অভিপ্রায় প্রমাণিত হয় তবে তা যুদ্ধাপরাধ বলে বিবেচিত হবে।” জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার তুর্কের এই বক্তব্যকে ‘বাজে কথা’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী নির বারকাত। বলেন, “এটা সম্পূর্ণরূপে দায়িত্বজ্ঞানহীন কথা।”
ইসরায়েলের মন্ত্রিসভার অন্যান্য মন্ত্রীর মত তিনিও দাবি করেন, তার দেশ যুক্তরাষ্ট্রসহ সারা বিশ্ব থেকে আসা ত্রাণ গাজায় প্রবেশ করতে দিচ্ছে। “একসময় হামাস নিজেদের সাহায্য করার পর যা পড়ে আছে সেটুকু বরং বিতরণ করতে ব্যর্থ জাতিসংঘ।” তবে ইসলায়েল যতই দাবি করুক যে তারা গাজায় ত্রাণ প্রবেশ ও বিতরণে বাধা দিচ্ছে না। বাস্তবতা কিন্তু ভিন্ন কথা বলছে। মিশর সীমান্তে গাজার রাফাহ ক্রসিংয়ে ওপারে ত্রাণবোঝাই লরির লম্বা লাইন পড়ে গেছে। কিন্তু রাফাহ ক্রসিং দিয়ে সেগুলোকে গাজায় প্রবেশ করতে দিচ্ছে না ইসরায়েলি বাহিনী। তারা শুধু ইসরায়েলের উপর দিয়ে গাজায় কিছু ত্রাণের লরির প্রবেশ করতে দিচ্ছে। তাও অনেক জটিল প্রক্রিয়া এবং আমলাতান্ত্রিক নানা যাচাই-বাছাইয়ের পর। ফলে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের পর এবার জর্ডান বাধ্য হয়ে আকাশ থেকে গাজায় ত্রাণ ফেলছে। যে ত্রাণ পেতে মরিয়া ফিলিস্তিনিরা মারামারি করছে।
আকাশ থেকে প্যারাসুটে বেঁধে ত্রাণের প্যাকেট ফেলা হচ্ছে। কখনো কখনো প্যারাসুট ঠিকমত না খোলায় ত্রাণের ভারি প্যাকেট নিচে থাকা ফিলিস্তিনিদের উপর সরাসরি গিয়ে পড়ছে। আকাশ থেকে পড়া ত্রাণের প্যাকেটের আঘাতে কয়েকজন ফিলিস্তিনি মারাও গেছে।