‘গর্ভাবস্থায় ধূমপান শিশুর মৃত্যু ঝুঁকি বাড়ায় দ্বিগুণ’

46

গর্ভবতী মা যদি দিনে মাত্র একটি সিগারেট ধূমপান করেন তাহলে তার সদ্যোজাত শিশুর অপ্রত্যাশিত মৃত্যুর ঝুঁকি দ্বিগুণ বেড়ে যায় বলে নতুন এক গবেষণা প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে। ২ কোটি শিশুর জন্ম ও ১৯ হাজার অপ্রত্যাশিত শিশু মৃত্যুর ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে এই গবেষণা প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। সোমাবার প্রতিবেদনটি চিকিৎসা সামায়িকী পেডিয়াট্রিক্স প্রকাশ করেছে। গবেষণা প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, ২০০৭ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন থেকে পাওয়া জন্ম/ সদ্যোজাতের মৃত্যুর বিষয়ে গর্ভাবস্থায় মায়ের ধূমপানের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এতে প্রতীয়মান হয় যে, প্রতিদিন একটি থেকে ২০টি সিগারেট ধূমপানের ফলে শিশুর মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ে শূন্য দশমিক শূন্য সাত (০.০৭) শতাংশ।
গর্ভাবস্থায় মায়ের ধূমপানের ফলে শিশুর অপ্রত্যাশিত মৃত্যু ঝুঁকি অধূমপায়ীদের সদ্যোজাতদের তুলনায় তিনগুণ বেড়ে যায়। আমেরিকান লাঞ্জ অ্যাসোসিয়েশনের জাতীয় মুখপাত্র ডা. সেড্রিক রুটল্যান্ড বলেন, এই গবেষণার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, একটি বা দুটি সিগারেট ধূমপান সদ্যোজাত শিশুর অকস্মাৎ মৃত্যুর কারণ হতে পারে। সিয়াটল চিলড্রেন’স রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নিউরো বিজ্ঞানী তাতিয়ানা অ্যান্ডারসন বলেন, প্রতিটি সিগারেটই ক্ষতি করে। এই বিষয়ে চিকিৎসকদের রোগীর সঙ্গে আলোচনা করা উচিত। সদ্যোজাত শিশুর অকস্মাৎ মৃত্যু ঠেকাতে এটাই ভালো উপায়। যদি ধূমপান বন্ধ না করেন তাহলে প্রতিটি সিগারেট আপনার শিশুর মৃত্যু ঝুঁকি বাড়াবে। সদ্যোজাত শিশুর অকস্মাৎ মৃত্যুর লক্ষণ (এসআইডিএস) যুক্তরাষ্ট্রের অভিভাবকদের কাছে ছিল এক আতঙ্ক ও ব্যাখ্যাতীত বিষয়। গবেষকরা শিশুর ঘুমের সঙ্গে এই মৃত্যুর যোগসূত্র আবিষ্কারের আগ পর্যন্ত এই অবস্থা বিরাজ করছিল। অ্যামেরিকান অ্যাকাডেমি অব পেডিয়াট্রিক্স-এর মতে, যদি ১ থেকে ১ বছর বয়সের শিশুরা পাকস্থলী নিচের দিকে রেখে ঘুমায় তাহলে সদ্যোজাত শিশুর অকস্মাৎ মৃত্যুর ঝুঁকি দ্বিগুণ হয়ে যায়।
১৯৯৪ সালে শিশুর পিট নিচের দিকে দিয়ে ঘুম পাড়ানোর জন্য প্রচারণার ফলে এই মৃত্যু ৫০ শতাংশ কমে যায়। ২০১০ সালের দিকে যুক্তরাষ্ট্রে সদ্যোজাত শিশুর অকস্মাৎ মৃত্যুর সংখ্যা কমে বছরে ২ হাজারে পৌঁছায়। ১৯৯৩ সালে এই সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ৭০০। কিন্তু দুই দশকে রোগজনিত ও দুর্ঘটনাবশত শ্বাসরোধে শিশুর মৃত্যুর সংখ্যা। সব মিলিয়ে বছরে প্রায় ৩ হাজার ৭০০ সদ্যোজাত শিশুর মৃত্যু হচ্ছে। গবেষকরা এই তিন ধরনের শিশু মৃত্যুকে এসইউআইডি হিসেবে উল্লেখ করছেন।
প্রকাশিত গবেষণায় গবেষকরা এসইউআইডি’র সঙ্গে সরাসরি মায়ের ধূমপানের যোগসূত্র খুঁজে পেয়েছেন। অ্যামেরিকান কলেজ অব অবস্টাট্রিসিয়ান অ্যান্ড গাইনোকোলিস্ট-এর তথ্য অনুসারে, এসআইডিএস’র ক্ষেত্রে ২৩% থেকে ৩৪% এবং অপরিণত সদ্যোজাত শিশুর মৃত্যুর ৫% থেকে ৭% ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় মায়ের ধূমপানের ভূমিকা রয়েছে।
গবেষকরা আরও দেখিয়েছেন, মায়ের ধূমপানের কারণে জন্ম নেওয়া শিশুকেও চড়া মূল্য দিতে হয়। গর্ভাবস্থায় ধূমপানের কারণে শিশুর অ্যাজমা, শিশুকালীন পেট ব্যথা ও শৈশবে স্থূলতার মতো রোগ হতে পারে। এমনকি গর্ভবতী মায়ের কাছাকাছি থাকা ব্যক্তির ধূমপান ভ্রুনের বিকাশের জন্য বিপজ্জনক, যা কম জন্মের পরিমাণ ২০% পর্যন্ত বৃদ্ধি করে।
যুক্তরাষ্ট্রে ধূমপানের হার উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেলেও অ্যান্ডারসন জানান, প্রতি বছর গর্ভাবস্থায় প্রায় ৩ লাখ ৩৮ হাজার নারী ধূমপান করেন। তিনি বলেন, নারীরা জানেন যে গর্ভাবস্থায় তাদের ধুমপান করা ঠিক না। আবার অনেকেই আছেন যারা ধূমপানের কথা অস্বীকার করেন বা সিগারেটের সংখ্যাকে অবজ্ঞা করেন। শিশুর ক্ষতি হতে পারে জেনেও ৩ লাখ ৩৮ হাজার গর্ভবর্তী নারীর ৫৫% ধূমপান বাদ দিতে অনিচ্ছুক বা পারছেন না। তারা ধূমপান কমান না বা বাদ দেন না। তারা একই হারে গর্ভাবস্থাতেও ধূমপান করে চলেন। অ্যান্ডারসন আরও বলেন, যদি কোনও নারী গর্ভাবস্থায় ধূমপান না করেন তাহলে গবেষণায় উঠে এসেছে প্রতিবছর ৮০০ সদ্যোজাত শিশুর মৃত্যু এড়ানো যেত। সূত্র: সিএনএন