গভর্নরের পদত্যাগ চাইছেন ‘পিপলসের’ গ্রাহকরা

9

পূর্বদেশ ডেস্ক

পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসে (পিএলএফএস) সংঘটিত ‘অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থপাচারের’ ঘটনায় ‘নীরব ভূমিকার’ অভিযোগ তুলে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের পদত্যাগ দাবি করেছেন কোম্পানিটির আমানতকারীরা। গতকাল রবিবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এবং পরে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে এ দাবি জানায় ‘পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানিতে আমানতকারীগণদের কাউন্সিল’।
বাংলাদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগের মুখে ভারতে পালিয়ে গ্রেপ্তার পি কে হালদার নামে-বেনামে পিপলস লিজিংয়ের শেয়ার কিনে কোম্পানিটির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিলেন। পরে কোম্পানির অর্থ সরান।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে পিপলস লিজিংয়ের আমানতকারীদের সংগঠনটির প্রধান সমন্বয়কারী মোহাম্মদ আতিকুর রহমান বলেন, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসকে ১৯৯৭ সালে লাইসেন্স দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। বৈধ কোম্পানি দেখে তারা সেখানে আমানত রাখেন।
২০১৪ সালে তদন্ত করে পিপলস লিজিংয়ের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের তথ্য জানতে পারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তদন্তে পরিচালনা বোর্ডের অনেক সদস্যের অনিয়ম পাওয়া যায়। পরে বাংলাদেশ ব্যাংক চিঠি দিয়ে পরিচালনা বোর্ড ভেঙে নতুন বোর্ড গঠন করে। একইসঙ্গে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
সেই প্রসঙ্গ তুলে ধরে আমানতকারী আতিকুর বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা পিপলস লিজিংয়ে সার্বক্ষণিক তদারকির দায়িত্বে ছিল। তারা থাকতেও পিপিলস লিজিংয়ে সার্বিক ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কোনো প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এখন বাংলাদেশ ব্যাংক ও অসৎ কর্মকর্তাদের দুর্নীতির দায় আমানতকারীদের নিতে হচ্ছে’।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আর্থিক কেলেঙ্কারির পর ফারমার্স ব্যাংক পুনর্গঠন করে পদ্মা ব্যাংক নামকরণ করা হয়। আন্দোলনকারীরা চান, সরকার এখন পিপিলস লিজিংয়ের নাম বদলে নতুন নাম দিক। পিপলস লিজিংয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তহবিল যোগান দিয়ে আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করুক।
আতিউর রহমানের পদত্যাগের পর ২০১৬ সালে গভর্নরের দায়িত্বে আসা ফজলে কবিরের দায়িত্বকালেই পিপলস লিজিং ‘ডুবতে বসেছে’ বলে মানববন্ধনে অভিযোগ করেন একাধিক আমানতকারী।
সেখানে আতিকুর বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের অবহেলা ও দুর্নীতির কারণে প্রতিষ্ঠানটির আজ এমন অবস্থা। দুর্নীতিবাজদের আগেই ধরতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংক ও গোয়েন্দা সংস্থারা। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের পদত্যাগ চাই আমরা। বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) কেনো পি কে হালদারের (প্রশান্ত কুমার হালদার) আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থপাচারের বিষয়টি ধরতে পারেনি- তাদের কাজ কী, অর্থ ও ব্যক্তি বিদেশে চলে যাওয়ার পর তারা কী করতে পারল?’
পিপলস লিজিংয়ের আর্থিক কেলেঙ্কারির তদন্তে নেমে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী এবং সাবেক নির্বাহী পরিচালক শাহ আলমকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। তাদের গ্রেপ্তারের দাবি তুলে আতিকুর বলেন, ‘তারা বাইরে ঘুরে বেরাচ্ছেন। তারা অবসর সুবিধা নিচ্ছেন। তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাচ্ছি’।
আমানতকারী সামিয়া বিনতে মাহবুব বলেন, ‘পি কে হালদারকে কে? তা আমরা চিনি না। পিপলস লিজিংকে ব্যবসা করার অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এজন্যই আমরা অর্থ রেখেছি। এখন বাংলাদেশ ব্যাংকেই আমাদের অর্থ ফেরত দিতে হবে’।
দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আর্থিক কেলেঙ্কারির কারণে আমানতকারী আস্থার সংকটে পড়েছেন মন্তব্য করে আরেক গ্রাহক কবির খান বলেন, ‘আমি ২৫ বছর প্রবাসে ছিলাম। সেই টাকা আমি পিপলস লিজিংয়ে রেখেছি। কিন্তু চার বছর ধরে কোনো টাকা পাচ্ছি না। তাহলে প্রবাসীরা কেন দেশে এসে টাকা রাখবে? দুর্নীতি বাংলাদেশ ব্যাংকেই হচ্ছে’।
বীর মুক্তিযোদ্ধা শওকত হোসেন বলেন, ‘আমি ৮ নম্বর সেক্টরের অধীনে মুক্তিযুদ্ধ করেছি। আজ আমার টাকা পেতে রাস্তায় নামতে হয়েছে। আমি প্রধানমন্ত্রীকে বলব- আমাদের বাঁচান’।
পিপলস লিজিংয়ে আমানত রেখে বিপাকে পড়া ৮০ বছর বয়সী আব্দুল আহাদ মানববন্ধনে বলেন, ‘আমি এখন খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলি। আজ এভাবেই এসেছি- বাংলাদেশ ব্যাংক সমস্যার সমাধান না করা পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম চালাব’।
পিপলস লিজিংয়ের আমানতকারীদের অভিযোগের প্রতিক্রিয়া জানতে গভর্নর ফজলে কবিরকে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার সাড়া মেলেনি। খবর বিডিনিউজের
ব্যাংক বহিভর্‚ত আর্থিক প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিংসহ চারটি কোম্পানি থেকে ‘হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট’ করে ২০১৯ সালে দেশ ছেড়ে পালান পি কে হালদার। গত ১৪ মে ফেরারী আসামি পি কে হালদারসহ ছয়জনকে পশ্চিমবঙ্গ থেকে আটক করে ভারতের কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)।