খুনের মামলা দিয়ে ৬৫ বছরের বৃদ্ধকে হয়রানি

49

বিক্রি করা জায়গা ফেরত নিতে বাঁশখালী উপজেলার পুঁইছড়ি ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ৬৫ বছর বয়সের এক বৃদ্ধকে খুনের মামলা দিয়ে হয়রানি করে সম্পত্তি আত্মসাতের চক্রান্ত করছে প্রতিপক্ষ। মামলার ব্যাপারে প্রতিপক্ষের তেমন আগ্রহ না থাকলেও স্থানীয় ইউপি সদস্য নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য মামলার নেপথ্যে ভ‚মিকা পালন করছেন।
জানা যায়, ১৯৯৬ সালে অক্টোবর মাসের ১৭ তারিখ চাচাতো ভাই নওশা মিয়া, পিতা-মৃত বছু মিয়া থেকে বাড়িভিটা দাগের ২ গন্ডা জায়গা ক্রয় করেন জাফর আহমদ, পিতা-বদরুজ্জামান ও তার দুই ভাই। তারা উভয় পক্ষ বাঁশখালী উপজেলার পুঁইছড়ি ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা। জায়গা বিক্রি করার পর নওশা মিয়া তার ভাইদের সাথে পরামর্শক্রমে বাড়িভিটার পরিবর্তে নাল জমি জাফর আহমদকে দখলে দেন। সেই থেকে আজ পর্যন্ত নাল জমি ভোগ করে আসছেন জাফর। আর জমি সংক্রান্ত বিষয়ে চাচাতো ভাইদের সাথে কোনদিন ঝামেলা হয়নি তার। এদিকে ২০১৯ সালে জানুয়ারি মাসের ১৯ তারিখ নওশা মিয়ার বড় ভাই রাজা মিয়া রাত ৮টার দিকে হঠাৎ স্ট্রোক করে মারা যায়। এর পরের দিন সকালে মৃতের লাশ দাফনের সময় নির্ধারিত হয়। এমতাবস্থায় ওইদিন রাত ১টার দিকে ১১ নং পুঁইছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার ফৌজুর কবির ফজু, নওশা মিয়া, শাহাদাত হোসেন, হাবিবুর রহমান, জান্নাতুল ফেরদৌস, নবী হোসেন, বাদশা মিয়াসহ প্রতিপক্ষরা বিশেষ কথা আছে বলে তাদের ঘরে ডেকে নেয় জাফর আহমদকে। এসময় তারা জাফরকে জায়গা জমি সংক্রান্ত বিষয়ে মীমাংসা করার কথা বলে ৩টি ১০০ টাকার স্টাম্প এবং ১টি ৫০ টাকার খালি স্টাম্পে সই করতে বলে। তখন জাফর খালি স্টাম্পে কেনো স্বাক্ষর করবে জানতে চাইলে স্থানীয় ইউপি সদস্য ফৌজুল কবির ফজু ও শাহাদাত হোসেন তাকে বিভিন্ন রকম ভীতি প্রদর্শন করে হুমকি দিয়ে বলেন, ৪টি স্টাম্পে স্বাক্ষর না করলে থানায় জাফরের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা হবে। তখন জাফর নিরুপায় হয়ে খালি ৪টি স্টাম্পে স্বাক্ষর করেন। লাশ দাফন করার দীর্ঘ প্রায় দেড় মাস পর স্থানীয় ইউপি সদস্য ফৌজুল কবির ফজুর নেতৃত্বে সালিশী বৈঠক বসে। এই বৈঠকে স্টাম্প ফেরত দেওয়ার বিনিময়ে জাফরের কাছ থেকে এক লাখ টাকা দাবি করা হয়। আর ১৯৯৬ সালে অক্টোবর মাসের ১৭ তারিখে ৪৩৯৪ নং সাফ কবলা মূলে নওশা মিয়া, পিতা-মোহাম্মদ আলীর নিকট থেকে ক্রয়কৃত জায়গা প্রতিপক্ষের বরাবরে সাফ রেজিস্ট্রি করে দিতে বৃদ্ধ জাফরকে হুমকি প্রদান করতে থাকে। তখন ভুক্তভোগী জাফর আহমদ নিরুপায় হয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এর আদালত (দক্ষিণ) এ স্টাম্প ফেরতের জন্য মিচ মামলা করেন। মামলা নং হলো-১০২৯/১৯। এর প্রেক্ষিতে ২০১৯ সালে সেপ্টম্বর মাসের ৯ তারিখে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।
এদিকে ২০১৯ সালের ১৯ জানুয়ারি নওশার মিয়ার বড় ভাই রাজা মিয়া হঠাৎ স্ট্রোকে মারা যায়। কিন্তু দীর্ঘ আট মাস অতিবাহিত হওয়ার পর ২০১৯ সালে সেপ্টম্বর মাসের ৯ তারিখে মৃত রাজা মিয়ার স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস (৩৫) বাদী হয়ে জাফর আহমদ (৬৫) সহ আরও নয় জনকে আসামি করে নিহত রাজা মিয়াকে খুন করার কথা বলে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় যাদেরকে আসামি করা হয়েছে নওশা মিয়ার বড় ভাই রাজা মিয়া মারা যাওয়ার সময় তাদের চারজন বিদেশে অবস্থান করছিলেন। গত ২০১৯ সালে অক্টোবর মাসের ৭ তারিখে মামলার বাদী ও বিবাদী উভয়পক্ষের কাছ থেকে দামপাড়াস্থ সিআইডি অফিসে সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। বর্তমানে মামলটির তদন্তে রয়েছেন সিআইডি, চট্টগ্রাম এর উপ-পুলিশ পরিদর্শক আফসার আহম্মেদ।
এছাড়া রাজা মিয়ার স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস মামলার বিষয়ে তেমন আগ্রহ প্রকাশ না করলেও নিজেদের স্বার্থ আদায় করার জন্য মূল নেপথ্যে ভ‚মিকা রেখেছেন স্থানীয় ইউপি মেম্বার। তিনি নওশা মিয়া গংদের পক্ষ নিয়ে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে এসব অনৈতিক কাজ করে যাচ্ছেন। তার বিরুদ্ধে স্থানীয়ভাবে রয়েছে নানা অভিযোগ। তার সাথে এসব বিষয় জানতে একাধিকবার যোগযোগ করে মুঠোফোনে পাওয়া যায়নি।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, রাজা মিয়া মারা যাওয়ার সপ্তাহ খানেক পর তার স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌসকে বিয়ে করে মৃত রাজা মিয়ার ছোট ভাই জফির আহমদ, পিতা-মৃত মোহাম্মদ মীর। তাদের সাথে অনৈতিক সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। এই বিষয়টি স্বামী রাজা মিয়া জানার পর অপমানে স্ট্রোক করার কথাও জানা যায়। রাজা মিয়া স্ট্রোক করার পূর্বেও স্ত্রীর সাথে এ বিষয়ে ঝগড়ায় লিপ্ত হন। এরপর স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস বাপের বাড়ি চলে যায়। পরে ওইদিন রাতে স্বামী রাজা মিয়া মারা যাওয়ার খবর শুনে তিনি শ্বশুর বাড়ি চলে আসেন।