খালেদা জিয়াকে শুনানিতে হাজির করতে পরোয়ানা

31

এক দশক আগে দুদকের দায়ের করা গ্যাটকো দুর্নীতি মামলায় অভিযোগ গঠনের শুনানিতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে হাজির করতে পরোয়ানা জারি করেছে আদালত।
খালেদাকে আদালতে আনতে ‘প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট’ চেয়ে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বৃহস্পতিবার ঢাকার তিন নম্বর বিশেষ জজ আদালতে আর্জি জানান। এক্ষেত্রে তিনি শুনানিতে এই মামলা ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হাই কোর্টের নির্দেশের বিষয়টি তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ছয় মাসের মধ্যে এক মাস পার হয়ে গেছে। অথচ মামলাটির বিচারই শুরু করা যায়নি। তাই অল্প সময় অন্তর অন্তর তারিখ রাখা হোক। আসামিপক্ষের সময় চাওয়ায় আর কোনো অপযুক্তি মেনে নেওয়ার জায়গা নেই।
বৃহস্পতিবার মামলার অভিযোগ গঠন শুনানিতে আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার বিএনপিপ্রধানের বাই এজেন্ট হাজিরা দেন। পরে বিচারক আবু সৈয়দ দিলজার আহমেদ অভিযোগ গঠনের তারিখ ফের পিছিয়ে ১৬ জানুয়ারি দিন রাখেন।দুর্নীতির দুই মামলায় সাজা নিয়ে খালেদা জিয়া বর্তমানে কারাগারে আছেন।
সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর দুদকের উপ-পরিচালক গোলাম শাহরিয়ার চৌধুরী গ্যাটকো দুর্নীতি মামলা দায়ের করেন।
চারদলীয় জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া, তার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোসহ ১৩ জনকে সেখানে আসামি করা হয়। ওই বছর ১৮ সেপ্টেম্বর মামলাটি অন্তর্ভুক্ত করা হয় জরুরি ক্ষমতা আইনে। পরের বছর ১৩ মে খালেদা জিয়াসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। খবর বিডিনিউজের
অভিযোগপত্রে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গ্যাটকোকে ঢাকার কমলাপুর আইসিডি ও চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের কাজ পাইয়ে দিয়ে রাষ্ট্রের ১৪ কোটি ৫৬ লাখ ৩৭ হাজার ৬১৬ টাকার ক্ষতি করেছেন।
আসামিদের কয়েকজনের রিট আবেদনে প্রায় আট বছর এ মামলার কার্যক্রম পুরোপুরি আটকে থাকে। খালেদা জিয়ার করা রিট আবেদনের নিষ্পত্তি করে হাই কোর্ট ২০১৫ সালে মামলার তার অংশের ওপর থেকে স্থগিতাদেশ তুলে নিলে মামলার কার্যক্রম শুরুর পথ তৈরি হয়।
কিন্তু গালীব ও তানভীরের রিট আবেদনের নিষ্পত্তি না হওয়ায় জজ আদালতে এ মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানি শুরু করা যাচ্ছিল না। গ্যাটকোর দুই পরিচালকের রিট আবেদনে ২০০৮ সালের ২৯ জুলাই রুল জারির পাশাপাশি বিচারিক আদালতে মামলাটির কার্যক্রম স্থগিত করে দিয়েছিল হাই কোর্ট।
সেই রুলের ওপর শুনানি শেষে গত বছরের ২৫ নভেম্বর তা খারিজ করে রায় দেয় বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের হাই কোর্ট বেঞ্চ।
একই সঙ্গে নিম্ন আদালতে মামলাটি ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি এবং দুই সপ্তাহের মধ্যে আসামিদের বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দিশ দিয়েছিল হাই কোর্ট বেঞ্চ।
হাই কোর্টের ওই রায়ের ফলে বিচারিক আদালতে মামলাটি চলতে আইনগত কোনো বাধা নেই বলে তখন জানিয়েছিলেন দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল।
মামলার ২৪ আসামির মধ্যে সাবেক মন্ত্রী এম সাইফুর রহমান, আকবর হোসেন, আব্দুল মান্নান ভূঁইয়া, এমকে আনোয়ার এবং খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো মারা গেছেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামীও এই মামলার একজন আসামি ছিলেন।
মামলার বাকি আসামিরা হলেন- সাবেক মন্ত্রী এম শামছুল ইসলাম, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান কমোডর জুলফিকার আলী, আকবর হোসেনর স্ত্রী জাহানারা আকবর, দুই ছেলে ইসমাইল হোসেন সায়মন এবং একেএম মুসা কাজল, এহসান ইউসুফ, প্রাক্তন নৌ সচিব জুলফিকার হায়দার চৌধুরী, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রাক্তন সদস্য একে রশিদ উদ্দিন আহমেদ,
গ্লোবাল এগ্রোট্রেড প্রাইভেট লিমিটেডের (গ্যাটকো) পরিচালক শাহজাহান এম হাসিব, প্রাক্তন মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও প্রাক্তন জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী একেএম মোশাররফ হোসেন।