কেন্দ্র ভারি হচ্ছে চট্টগ্রামের নেতাদের নিয়ে

5

এম এ হোসাইন

নীতিনির্ধারণী ফোরাম থেকে শুরু করে শীর্ষ পর্যায়ের বিভিন্ন কমিটি পুনর্গঠনের আভাস পাওয়া যাচ্ছে বিএনপিতে। আনুষ্ঠানিক কোন আলোচনা না থাকলেও শীর্ষ পর্যায় পর্যন্ত দল পুনর্গঠন নিয়ে এসব গুঞ্জন চলছে। এতে চট্টগ্রামের এক ঝাঁক নেতার নাম রয়েছে। নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে আলোচনায় আছে আবদুল্লাহ আল নোমান, লায়ন আসলাম চৌধুরী এবং এম মোরশেদ খানের নাম।
শুধু স্থায়ী কমিটির সদস্য নয়, অন্যান্য পদেও স্থান পেতে পারেন চট্টগ্রামের এক ঝাঁক নেতা। উপদেষ্টার তালিকায় আছেন জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, গোলাম আকবর খোন্দকার, শাহজাহান জুয়েলের নাম। যুগ্ম মহাসচিব হিসাবে আলোচনায় আছেন বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম ও নগর বিএনপির আহবায়ক ডা. শাহাদাত হোসেনের নাম। তাছাড়া সাংগঠনিক সম্পাদকের আলোচনায় নগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্করের নাম। মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন ও ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানার নাম আছে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক সম্পাদকের তালিকায়। ভাইস প্রেসিডেন্টের আলোচনায় আছেন মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, এসএম ফজলুল হক, গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী, বেগম রুজি কবিরের নাম।
সর্বশেষ ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল করেছিল বিএনপি। দলটির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জাতীয় নির্বাহী কমিটি তিন বছরের জন্য নির্বাচিত হবে এবং পরবর্তী জাতীয় নির্বাহী কমিটি দায়িত্ব গ্রহণ না করা পর্যন্ত এ কমিটিই দায়িত্ব পালন করবে। এ অবস্থার মধ্যে ২০১৯ সালের মার্চে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির মেয়াদ শেষ হয়।
শূন্যপদ পূরণ করা নিয়ে জানতে চাইলে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, স্থায়ী কমিটির তিনটি পদ খালি আছে, আরো তিনটি খালি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। পদগুলো তো পূরণ করতে হবে। জ্যেষ্ঠ নেতাদের এ পদে স্থান দেয়া হবে। চট্টগ্রামের আবদুল্লাহ আল নোমান, মোরশেদ খান ও আসলাম চৌধুরী স্থায়ী কমিটিতে পদ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তরুণদের মধ্যে রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ও দলের জন্য ত্যাগ আছে এমন নেতাদের এর আগেও স্থায়ী কমিটিতে পদ দেয়া হয়েছে। সালাহউদ্দিন আহমেদকে যুগ্ম মহাসচিব থেকে সরাসরি পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। একইভাবে আসলাম চৌধুরীকেও পদোন্নতি দেয়া হতে পারে। সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব থেকেও পদোন্নতি আসতে পারে।
বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটি। যেকোন নেতার কাছে উক্ত ফোরামে থাকা আকর্ষণীয় ও মর্যাদাপূর্ণ। এ ফোরামে সাংগঠনিকভাবে যোগ্য, পরীক্ষিত, ত্যাগী ও দলের তুলনামূলক গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদেরই স্থান দেয়া হয়। প্রায় সব জ্যেষ্ঠ নেতাদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে স্থায়ী কমিটির সদস্যপদ লাভ। স্থায়ী কমিটির সুপারিশের আলোকেই বেশিরভাগ সময় বিএনপির শীর্ষ নেতারা সিদ্ধান্ত দিয়ে থাকেন। এ কমিটি নির্বাচনে প্রার্থী চূড়ান্ত করা, কর্মসূচি প্রণয়ন থেকে শুরু করে সার্বিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের কাজগুলো করে থাকে। ১৯ সদস্যের স্থায়ী কমিটিতে পাঁচটি শূন্যপদে নতুন মুখ আসার সম্ভাবনা রয়েছে। ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের পর দলের যে স্থায়ী কমিটি করা হয় তাতে দুটি পদ খালি রাখা হয়। পরবর্তীতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ এবং এম কে আনোয়ার মারা যাওয়ায় পাঁচটি পদ শূন্য হয়। গত বছর জুনে স্থায়ী কমিটিতে সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এরপরও ফাঁকা থেকে যায় তিনটি পদ। এদিকে বার্ধক্যজনিত অসুস্থতার কারণে স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান দলীয় কর্মকান্ডে কার্যত নিষ্ক্রিয় রয়েছেন। প্রবীণ নেতা ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকারের শারীরিক অবস্থাও ততটা ফিট নয়। অসুস্থ নেতাদের বাদ দিয়ে নতুনভাবে স্থায়ী কমিটির সদস্য বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। আর এ ক্ষেত্রে চট্টগ্রামের বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ আবদুল্লাহ আল নোমান, আসলাম চৌধুরী এবং এম মোরশেদ খানের জায়গা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি রয়েছে বলে জানায় একাধিক সূত্র। বর্তমানে আবদুল্লাহ আল নোমান বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এবং লায়ন আসলাম চৌধুরী যুগ্ম মহাসচিবের দায়িত্বে রয়েছেন। ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে আবদুল্লাহ আল নোমান স্থায়ী কমিটির সদস্য হওয়ার আলোচনায় থাকলেও বাদ পড়ে। সেবার আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে স্থায়ী কমিটির সদস্য করা হয়েছিল।
ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল শেষে দলটির জাতীয় স্থায়ী কমিটির ১৯ সদস্যের মধ্যে ১৭ জনের নাম ঘোষণা করা হয়েছিল। এর মধ্যে চারজন মারা গেছেন। তারা হলেন তরিকুল ইসলাম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ, এম কে আনোয়ার ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। এ ছাড়া রাজনীতি থেকে অবসর নিয়েছেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান। যদিও তার পদত্যাগপত্র বিএনপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ বা প্রত্যাখ্যান কোনোটিই করা হয়নি। এর মধ্যে ২০১৯ সালের জুনে সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে স্থায়ী কমিটির শূন্যপদে নিয়োগ দেওয়া হয়। সেই হিসাবে এখন সদস্য সংখ্যা ১৪ জন। এরমধ্যে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ও আইনি জটিলতায় রাজনীতিতে ফেরাটাও অনিশ্চিত। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও স্থায়ী কমিটির সদস্য তারেক রহমান লন্ডনে অবস্থান করছেন। মামলা জটিলতায় সালাহউদ্দিন আহমেদ রয়েছেন ভারতের শিলংয়ে। অসুস্থ আছেন ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া। বয়সের কারণে বৈঠকে নিয়মিত নন ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার।
এদিকে নেতাদের সাথে টানা তিনদিন (মঙ্গলবার, বুধবার ও বৃহস্পতিবার) বৈঠক করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রথমদিন দলের ভাইস চেয়ারম্যান ও দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের এবং দ্বিতীয়দিন যুগ্ম মহাসচিব-সাংগঠনিক সম্পাদক-সম্পাদকমন্ডলীর সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তৃতীয়দিন দলের অঙ্গসংগঠনসমূহ অর্থাৎ যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল, তাঁতী দল, ওলামা দল, মৎস্যজীবীদল সভাপতি ও সম্পাদকসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে বৈঠকে মিলিত হন। সেখানেও দলের আভ্যন্তরীণ বিষয়, সাম্প্রতিক রাজনীতি ও কর্মসূচিসহ সার্বিক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে এবং শূন্যপদ পূরণের আভাস দিয়েছেন বলে জানা গেছে।