কাজী মহসীন চৌধুরী আ ব ম খোরশিদ আলম খান

28

দেশ, মানুষ এবং সমাজের প্রতি দরদ ও দায়বোধ থেকেই গুণীজনরা নিজেদের জীবনকে উৎসর্গীত রাখেন। তেমন একজন বিরলপ্রজ গুণী- কীর্তিমান ব্যক্তিত্ব হলেন দেশের প্রাজ্ঞ জ্যেষ্ঠ কর আইনজীবী অ্যাডভোকেট কাজী মহসীন চৌধুরী। নিজ পেশার প্রতি সনিষ্ঠ ও নিবেদিত থাকার পাশাপাশি জনকল্যাণ, সমাজসেবায়ও তিনি সামনের কাতারে রয়েছেন। অন্যদিকে মাইজভান্ডারী তরিকা ও দর্শনের নিবিষ্ট অনুসারী হিসেবে তরিকত অঙ্গনেও তাঁর সরব উপস্থিতির কথা কারো অজানা নয়। তিনি মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন, তরিকত চর্চাই একজন মুসলমানের আধ্যাত্মিক উন্নতির সোপান। বিশুদ্ধ তরিকত চর্চা ও অনুশীলনের মাধ্যমে একজন মানুষ পরিপূর্ণ সফল মানুষ তথা ইনসানে কামেল হতে পারে। আর এই বোধ ও তাগাদা থেকেই অ্যাডভোকেট কাজী মহসীন চৌধুরী আজীবন তরিকত চর্চায় নিবেদিত থেকেছেন। মাইজভান্ডারী দর্শনের প্রতি বিশেষ অনুরাগ ও আত্মনিবেদনের কারণে দরবার শরিফের সাজ্জাদানশিন হযরত শাহ সূফি মাওলানা সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ আল হাসানী (মজিআ) কাজী মহসীন চৌধুরীকে সূফি ইউনিটি ফর ইন্টারন্যাশনাল সলিডারিটি (সূফীজ) এর চট্টগ্রাম জেলা কমিটির আহবায়ক পদে মনোনীত করেন। আওলাদে রাসূল (দ) হযরত শাহ সূফি মাওলানা সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ আল হাসানী (মজিআ) ২২ চৈত্র ১৪১৯ বাংলা সনে মাইজভান্ডার দরবার শরিফে আয়োজিত গাউসুল আজম মাওলানা সৈয়দ গোলামুর রহমান বাবা ভান্ডারীর (ক) আড়ম্বরপূর্ণ বার্ষিক ওরশ মাহফিলে কাজী মহসীন চৌধুরীকে খলিফায়ে গাউসুল আজম মাইজভান্ডারী (ক) হিসেবে মাইজভান্ডার দরবার শরিফের খলিফা পদে আনুষ্ঠানিকভাবে খেলাফত প্রদান করেন। তরিকতের খেদমতে নিজ মুরশিদের সন্তুষ্টি অর্জন করায় তাঁরই মুরশিদ হযরত শাহসূফি সৈয়দ মইনুদ্দীন আহমদ আল হাসানী (ক) নির্দেশনা মোতাবেক এ খেলাফত লাভ করেন কাজী মহসীন চৌধুরী। হযরত মইন বাবার (ক) খেলাফতপ্রাপ্ত আওলাদ রাহবারে শরিয়ত ও তরিকত শাহসূফি মাওলানা সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ আল হাসানী (মজিআ) এর কৃপাধন্য বিশিষ্ট ব্যক্তি হিসেবে কাজী মহসীন চৌধুরী মাইজভান্ডারী ঘরানার খেদমতগার হিসেবে আজ নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন। আপাদমসস্তক একজন সাংগঠনিক ব্যক্তিত্ব ও নিবেদিতপ্রাণ সমাজসেবী হলেন অ্যাডভোকেট কাজী মহসীন চৌধুরী। তিনি বহু সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ক্রীড়া সংগঠন ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত আছেন। চট্টগ্রাম হাটহাজারী উপজেলার ধলই গ্রামের কাটিরহাটে কাজী বাড়িতে ১৯৫৯ সনের ২০ মার্চ জন্ম নেয়া অ্যাডভোকেট কাজী মহসীন চৌধুরীর জীবন বর্ণাঢ্য, বর্ণিল ও বহুমাত্রিক গুণে সমৃদ্ধ। সফল আইনজীবী ও সমাজ সেবায় বিশেষ অবদানের জন্য ২০১৬ সনের ১৯ জুন জার্নালিস্ট সোসাইটি ফর হিউম্যান রাইটস কর্তৃক শেরে বাংলা গোল্ড মেডেল পদকে ভূষিত হন। তিনি হযরত সৈয়দ মইনুদ্দীন আহমদ মাইজভান্ডারী ট্রাস্টের মহাসচিব পদে আছেন।
তিনি ১৯৮৩ সনে আইন পেশা শুরু করেন। আইন পেশায় তিন যুগ পূর্তি উপলক্ষে ২০১৮ সনের ৬ আগস্ট বাংলাদেশ মেধা বিকাশ সোসাইটি কর্তৃক লিডারশিপ স্টার অ্যাওয়ার্ড ২০১৮ পদকে ভূষিত হন অ্যাডভোকেট কাজী মহসীন চৌধুরী। চট্টগ্রাম কর আইনজীবী সমিতিতে দীর্ঘ পেশাদারি জীবনে বিভিন্ন সময়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে বহুবার নির্বাচিত হয়েছেন। ১৯৯৫ সনে সাধারণ সম্পাদক, ২০০৪ সনে সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়ে চট্টগ্রাম কর আইনজীবী সমিতিতে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। কর আইনজীবীদের কেন্দ্রীয় সংগঠন বাংলাদেশ ট্যাক্স ল’ইয়ার্স এসোসিয়েশন (বাংলাদেশ) এর সাবেক ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল এবং সিনিয়র সহসভাপতির (চট্টগ্রাম বিভাগ) দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি এ এসোসিয়েশনের কর্যকরী পরিষদের সদস্য। তিনি নানা আইনজীবী সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে আইনজীবীদের অধিকার আদায় এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় অসামান্য অবদান রেখে চলেছেন। তিনি হাকিম দাদ চৌধুরী মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। বহু সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় ও ক্রীড়া প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তিনি নিবিড়ভাবে জড়িত রয়েছেন। আর্তপীড়িতদের সেবায় নিবেদিত সেবামূলক অরাজনৈতিক সংস্থা চিরায়িত শান্তি সোসাইটির মাধ্যমে অসহায় অসুস্থ মানুষদের বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ওষুধ বিতরণের জন্য তিনটি সেবাকেন্দ্র পরিচালনা করা হচ্ছে। তিনি এ সোসাইটির প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমানে কার্যকরী সদস্য। কাজী মহসীন চৌধুরী অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েট প্রতিষ্ঠা করে আইন পেশার মাধ্যমে জনকল্যাণে অগ্রণী ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন তিনি। কন্যাদায়গ্রস্ত পরিবারকে বিবাহ সহায়তা প্রদান, টাকার অভাবে পড়াশোনার সুযোগ থেকে বঞ্চিত বহু শিক্ষার্থীকে আর্থিকভাবে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন। মানবসেবাকে নিজের ব্রত হিসেবে নিয়েছেন তিনি। দেশ ও মানুষের সেবায় আজীবন নিজেকে উৎসর্গীত রাখার পাশাপাশি সুন্নিয়ত ও মাইজভান্ডারী তরিকার প্রচার-প্রসারে এবং এর বিশ্বজনীন বিস্তৃতিতে নিজেকে নিবেদিত রাখতে চান বিরলপ্রজ ব্যক্তিত্ব অ্যাডভোকেট কাজী মহসীন চৌধুরী।
লেখক : সাংবাদিক