কাজীর দেউড়ি এলাকা রণক্ষেত্র পুলিশ-বিএনপি দফায় দফায় সংঘর্ষ, গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ভাংচুর

54

নিজস্ব প্রতিবেদক
নগরীর কাজির দেউড়িতে মিছিলে বাধা দেয়ায় বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। এতে পুরো এলাকা পরিণত হয় রণক্ষেত্রে। এসময় পাঁচ পুলিশ সদস্য ও বিএনপির ১০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
গতকাল সোমবার বিকেল ৩টায় নগরীর কাজির দেউড়িতে বিএনপির দলীয় কার্যালয় নসিমন ভবনের সামনে বিদ্যুতের দামবৃদ্ধির প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলকে কেন্দ্র করে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
সংঘর্ষের পর অভিযান চালিয়ে বিএনপি’র ২০ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মোস্তাফিজুর রহমান।
এদিকে মহানগর বিএনপির আহŸায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন পূর্বদেশকে বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীদের মামলা দেয়ার জন্যই পুলিশ ব্যারিকেড দিয়েছে এবং লাঠিচার্জ করেছে।

নগরীর কাজীর দেউড়িতে পুলিশের উপর হামলা করে বিএনপির কর্মীরা
কাজীর দেউড়িতে সংঘর্ষকালে কয়েকজন বিএনপি কর্মীকে আটক করে পুলিশ। ছবি : পূর্বদেশ

আহত পুলিশ সদস্যরা হলেন- ট্রাফিক পরিদর্শক (আন্দরকিল্লা) বিপ্লব কুমার দে (৫২), চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের কনস্টেবল জলৎকার চাকমা (৫২), কনস্টেবল মো. ওসমান গণি (৩০), অজয় চাকমা (৫০) ও লীনা আক্তার (২৯)।
আহত পুলিশ সদস্যরা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে জানান চমেক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ নূর আলম আশিক।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির পূর্ব ঘোষিত বিক্ষোভ সমাবেশ চলছিল নসিমন ভবনের দলীয় কার্যালয়ের সামনে। সমাবেশে যোগ দিতে বিএনপির নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে নুর আহম্মদ সড়কের দলীয় কার্যালয়ে যাচ্ছিলেন। মিছিলটি কাজীর দেউড়ি মোড়ে আসতেই সেখানে থাকা পুলিশের ওপর হামলা করে। এসময় উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। ফুটপাতে থাকা ট্রাফিক পুলিশের একটি মোটরবাইকে আগুন দেন মিছিলকারীরা।
প্রথম দিকে পুলিশের সংখ্যা কম থাকায় তারা পিছু হটে। পরবর্তীতে অতিরিক্ত পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। আধা ঘণ্টার জন্য পুরো এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিকেল চারটার দিকে পুলিশ কাজীর দেউড়ির আশপাশে অভিযান চালিয়ে বিএনপির ২০ জন নেতাকর্মীকে আটক করে।
এদিকে জেলা পুলিশের একটি গাড়ি রেডিসন বøু’র সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় বিএনপির ষ পৃষ্ঠা ৭, কলাম ১.
ষ প্রথম পৃষ্ঠার পর
নেতাকর্মীরা সেখানেও হামলা চালায়। এতে এক পুলিশ সদস্য গুরুতর আহত হন। এসময় পুলিশ বক্স, সাংবাদিকসহ সাধারণ যাত্রীদের বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, শান্তিপ‚র্ণ সমাবেশের অনুমতি ছিল বিএনপির। তবে তারা সমাবেশের নামে বিশৃঙ্খলা করেছে। গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছে। আমরা অ্যাকশনে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছি। আমাদের অনেক পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। বাড়তি ফোর্স আনার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। এ ঘটনায় ২০ জনকে আটক করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহŸায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন পূর্বদেশকে বলেন, সমাবেশে সবাই সুশৃঙ্খলভাবে আসছিলো। কাজির দেউড়ি মোড় থেকে যখন যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল মিছিল নিয়ে আসছিল তখন পুলিশ ব্যারিকেড দেয়। ব্যারিকেড ডিঙিয়ে মিছিল আসলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। এতে করে সংঘর্ষে রূপ নেয়। পুলিশ লাঠিচার্জ করাতে এমন ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে। মনে হচ্ছে, মামলা দেয়ার জন্য পুলিশ পরিকল্পিতভাবে লাঠিচার্জ করেছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের সমাবেশ করতে বলেছে, কিন্তু সমাবেশে লোকজন তো আসতে দিতে হবে, অতিথিদের আসতে দিতে হবে। পুলিশ লাভলেনে ব্যারিকেড দিয়েছে। কাজির দেউড়ি দিয়ে লোক আসছিল, সেখানেও ব্যারিকেড দেয়। পরিকল্পিতভাবে পুলিশ লাঠিচার্জ করেছে। পুলিশের লাঠিচার্জের কারণে এমন ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে।
মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাসেম বক্কর পূর্বদেশকে বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি শুরু করেছিলাম। এতে প্রচুর লোক সমাগমও হয়েছে। এরমধ্যে কাজির দেউড়ি মোড়ে অঙ্গসংগঠনের মিছিলে পুলিশ লাঠিচার্জ করলে সংঘর্ষ বাঁধে। পুলিশ সহনশীল হলে এমন ঘটনা এড়ানো যেতো। কিছু কিছু অতি উৎসাহী পুলিশ আছে, যাদের কারণে এ রকম পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আমাদের কোনো কর্মসূচিতে এমন ঘটনা কখনও ঘটেনি। এটাতেও ঘটতো না। যতটুকু জেনেছি, পুলিশের অসহনশীল আচরণের কারণে এমনটা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের ১০ জন কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছে। দুই জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ২০ জনের বেশি নেতাকর্মীকে পুলিশ আটক করেছে।