কাঁচা খেজুরের কদর

1646

মধ্যপ্রাচ্যের সুস্বাদু কাঁচা খেজুর এখন পাওয়া যাচ্ছে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। একসময় শুধুমাত্র রমজান মাসে পাকা খেজুর আসলেও এখন পাকা খেজুরের পাশাপাশি কাঁচা খেজুরও আমদানি করছেন ব্যবসায়ীরা। গত ২০১৭ সালের অক্টোবরে আমদানি করা কাঁচা খেজুর বাজারে আসলেও সেসময় তেমন চাহিদা ছিলো না। দিনদিন চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় কাঁচা খেজুর আমদানির হার বেড়েছে। বর্তমানে তিন রঙের খেজুরই প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই হাজার কার্টন বিক্রি হচ্ছে বলে জানান ফলমন্ডী ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দ।
কাঁচা খেজুর গ্রাহকদের চাহিদায় অন্যান্য ফলের মত যুক্ত হয়েছে বলে জানালেন ব্যবসায়ীরা। আর এতে সারাদেশের পাশাপাশি চট্টগ্রামেও চাহিদা বেড়েছে এসব খেজুরের।
নগরীর ফলমন্ডী এলাকার ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বাজারে এখন তিন ধরণের কাঁচা খেজুর এসেছে। হলুদ, গোলাপী এবং লাল রঙের। তিনটার দাম এবং স্বাদ তিন রকম। তবে লাল আর গোলাপীর চেয়ে হলুদ খেজুরের দাম বেশি। লাল খেজুর বিক্রি হচ্ছে প্রতি ১০ কেজির কার্টন ৩ হাজার টাকায়। গোলাপী খেজুর প্রতি ১০ কেজির কার্টন ৩ হাজার ২০০ এবং হলুদ খেজুর প্রতি ১০ কেজির কার্টন বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায়।
কাঁচা খেজুর কিনতে আসা ইকবাল হোসেনের সাথে কথা বলে জানা যায়, মধ্যপ্রাচ্যের খেজুরগুলো একসময় প্রবাসী আত্মীয়রা আনতেন। তারা দেশে আসার সময় বিশেষ করে সৌদি আরব বা দুবাই থেকে এই খেজুর কিনে আনতেন। দেশে সাধারণ খেজুরের তুলনায় এই খেজুরের আকার বড়, স্বাদেও মিষ্টি হওয়ায় এ খেজুর খাওয়ার আকর্ষণ বেশি ছিল। এখন দেশের বাজারে দেখে খুব ভাল লাগছে।
আরেক ক্রেতা রাজু বলেন, বড় বড় সুপারশপগুলো ছাড়া দেশের খুচরা বাজারে কখনো এই কাঁচা খেজুর বিক্রি হতে দেখিনি। এখন তা জনসাধারণের নাগালে চলে আসাতে আমরাও স্বাচ্ছন্দ্যে ক্রয় করতে পারছি।
ক্রেতা কামরুন্নাহার বলেন, ডাক্তার পরামর্শ দিয়েছেন খেজুর খেতে। বাজারে কাঁচা খেজুর পাওয়াতে ভালোই হয়েছে। দাম একটু বেশি হলেও সমস্যা নেই।
ব্যবসায়ী আলী হোসেন জানান, প্রতি পাঁচ কেজির হলুদ খেজুরের কার্টন চট্টগ্রামের আড়তগুলোতে পৌঁছাতে সবমিলিয়ে খরচ হয়েছে ১ হাজার ৭০০ টাকা। ২০১৭ সালের দিকে আমরা প্রতি ৫ কেজির কার্টন ৩ হাজার ১০০ টাকায়ও বিক্রি করেছিলাম। পরে সেটি দাম কমে ১ হাজার ৬০০ টাকার মধ্যে আড়ত থেকে বিক্রি হচ্ছে। আড়তে প্রতিকেজির পাইকারি মূল্য ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায়।
বহদ্দারহাটের ফলবিক্রেতা নুরুল কবির বলেন, প্রথমদিকে আমরা প্রতি কেজি হলুদ খেজুর ৮০০ টাকা বিক্রি করলেও এখন প্রতিকেজি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি করছি। অনেকে আবার দাম শুনে এক কেজির প্যাকেট কিনতে চায় না তাই ক্রেতাদের সুবিধার কথা ভেবে আমরা কার্টন খুলে ছোট ২৫০ গ্রাম ও ৫০০ গ্রাম করে বিক্রি করছি। আর এতে ভালো সাড়াও পাচ্ছি।
বিক্রেতা মোহাম্মদ হোসেন বলেন, খেজুরে অনেক উপকারিতা রয়েছে আর খেজুর খাওয়া সুন্নত। আমাদের রাসুল (স.) নিয়মিত খাবারে খেজুর রাখতেন। এ ফলের পুষ্টিগুণ অনেক। তাই সবারই আগ্রহ থাকে খেজুরের প্রতি। রমজানের সময় দাম বাড়তি থাকলেও এখন দাম অনেক কম আছে।
ফলমন্ডী ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজী মো. আলমগীর বলেন, বাজারে প্রচুর চাহিদা রয়েছে কাঁচা খেজুরের। শুকনো এবং পাকা খেজুর দুবাই ও ইরান থেকে আসলেও বর্তমানে জর্দান ও মিশর থেকে আসছে এ তিন ধরণের কাঁচা খেজুর। তিনটিরই ভিন্ন ভিন্ন স্বাদ। বর্তমানে প্রতি পাঁচ কেজির কার্টন ১ হাজার ৭০০ থেকে ১ হাজার ৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতিদিন দুই হাজার কার্টন বিক্রি হচ্ছে আবার বৃহস্পতিবার এবং রবিবার আরও বেশি বিক্রি হয়। খেজুরগুলো কার্গো ফ্লাইটে করে দেশে আসছে, তাই আমদানি খরচ একটু বেশি পড়াতে দামও একটু বেশি।