করোনায় মৃত্যুঝুঁকি বেশি ধূমপায়ীদের

39

স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হওয়ায় ধূমপানে নিরুৎসাহিত করে আসছে সরকার। এর অংশ হিসাবে প্রথম দিকে ‘ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর’ এমন সতর্কবার্তা এবং পরবর্তীতে সিগারেটের প্যাকেটের গায়ে ভয়াবহ কিছু ছবি সংযোজন করা হয়। এতো কিছু পরও মানুষ তামাকপণ্য সেবন করছেন।
পরিসংখ্যান বলছে, তামাক সেবনকারীদের ১৫ শতাংশই তরুণ। সিগারেট কোম্পানিগুলোর কূটচালে পড়ে তরুণরা তামাক পণ্য সেবনে উৎসাহিত হচ্ছে।
বছরের পর বছর ধরে তামাক ও অন্য নিকোটিন পণ্যে শিশু-কিশোর এবং তরুণদের আকৃষ্ট করতে অত্যন্ত কৌশলী ও আগ্রাসী প্রচারণা চালিয়ে আসছে তামাক কোম্পানিগুলো। সম্প্রতি করোনা ভাইরাসের ত্রাসে কাঁপিয়ে দিচ্ছে গোটা বিশ্বকে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, এ ভাইরাস সংক্রমণ সকল বয়সীদের জন্য বিপদজনক হলেও ধূমপায়ীদের মৃত্যুঝুঁকি দ্বিগুণ বেশি। অন্য এক সমীক্ষা বলছে, বাংলাদেশে করোনায় বেশি আক্রান্ত হচ্ছে ধূমপায়ী তরুণরা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে রোগতত্ত¡, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও রোগ গবেষেণা কেন্দ্রের তথ্যও বলছে, ২১-৩০ বছর বয়সীদের করোনা শনাক্ত হচ্ছে বেশি। এ জনগোষ্ঠীর ২৬ শতাংশই করোনা আক্রান্ত। একদিকে করোনার প্রার্দুভাব, অন্যদিকে তামাককোম্পানি কৌশলী কার্যক্রমের ফাঁদেও আটকে যাচ্ছে তরুণরা।
বিটার এক গবেষণায় দেখা যায়, সিগারেট কোম্পানিগুলো রমারমা বিজ্ঞাপন ও লোভনীয় অফারের ফাঁদে ফেলছে স্কুল বয়সী তরুণদের। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আশেপাশে গড়ে তুলেছে তামাকপণ্যের দোকান। চট্টগ্রামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১০০ গজের মধ্যে বিক্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা ৫ হাজার ৫৩৬টি। এ অবস্থার মধ্যে আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস। ‘তামাক কোম্পানির কূটচাল রুখে দাও, তামাক ও নিকোটিন থেকে তরুণদের বাঁচাও’ এ প্রতিপাদ্য নিয়ে এ বছর দিবসটি পালন হচ্ছে।
এ বিষয়ে তামাকবিরোধী সংগঠন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব থিয়েটার আর্টস (বিটা) নির্বাহী প্রধান শিশির দত্ত বলেন, আমাদের জনগোষ্ঠীর ৪৬ শতাংশই তরুণ। তামাক কোম্পানির মূল টার্গেট কীভাবে এ বিশাল তরুণ সমাজকে তামাকে আসক্ত করে ব্যবসা বাড়ানো যায় সেটাই। বিভিন্নভাবে তরুণদের আকৃষ্ট করতে কাজ করছে তারা। তরুণের মধ্যে প্রায় ১৫ শতাংশ তামাকে আসক্ত হচ্ছে।
তিনি বলেন, করোনায় তরুণরা আক্রান্ত হচ্ছে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থাও বলছে ধূমপায়ীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। নারীদের চেয়ে পুরুষরা বেশি করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে। এখানেও আমরা দেখছি, ধূমপানের সাথে করোনার একটি সম্পর্ক আছে। সরকারের ভিশন আছে ২০৪০ সালের মধ্যে দেশকে তামাকমুক্ত করার। আমরা মনে করি তরুণদের তামাক থেকে দূরে রাখা উচিত। তরুণদের সচেতনতা করা প্রয়োজন। তরুণরা আকৃষ্ট না হলে কোম্পানিগুলো এমনিতেই ব্যবসা বন্ধ করে চলে যাবে।
তামাকের কারণে প্রতিবছর বিশ্বে ৮০ লাখ মানুষ প্রাণ হারায়, এরমধ্যে শুধু বাংলাদেশেই বছরে ১ লক্ষ ২৬ হাজার মানুষ মারা যায় তামাক ব্যবহারজনিত রোগে। তামাক এবং নিকোটিনযুক্ত পণ্যে আকৃষ্ট করতে ইচ্ছাকৃতভাবে নানা কারসাজির আশ্রয় নেয় কোম্পানিগুলো। বিশেষ করে শিশু-কিশোরদের লক্ষ্য করে উদ্ভাবনী বিজ্ঞাপন এবং আকর্ষণীয় ডিজাইনে নিত্য নতুন পণ্য বাজারজাতকরণ, সুগন্ধিযুক্ত তামাকপণ্য তৈরি, চলচ্চিত্র-টিভি-অনলাইন স্ট্রিমিং প্রোগ্রামগুলোতে তামাকের চিত্রায়ন, মিডিয়া সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারদের ব্যবহার, অনুষ্ঠানের ব্যয়ভার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আশেপাশে তামাকপণ্য সহজলভ্য করাসহ নানা কৌশল অবলম্বন করে থাকে তারা।
তামাক পণ্য নিয়ে কাজ করা সংগঠন কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, করোনার মাঝে ধূমপায়ীরা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। তামাক কোম্পানির কৌশলের কারণে তামাক উৎপাদন ও বিক্রি বন্ধ হয়নি। মাঝখানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় একটি প্রস্তাবও দেয়। শিল্পমন্ত্রণালয় সেটা বাতিল করে দেয়। তারা যে পরিমাণ টেক্স দিচ্ছে, তার দশগুণ তামাকের চিকিৎসা খাতে খরচ হচ্ছে। আমরা তামাকের ট্যাক্স বৃদ্ধি দাবি জানায়। দাম বাড়লে জনগণ কিছুটা হলেও নিরুৎসাহিত হবে। তরুণদের তামাক থেকে দূরে না রেখে, স্বাস্থ্যবান জাতি গঠন সম্ভব নয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, যারা কিশোর বয়সে ধূমপানে আসক্ত হয় তাদের অ্যালকোহলে আসক্ত হয়ে পড়ার সম্ভাবনা স্বাভাবিকের তুলনায় তিন গুণ বেশি, গাজায় আট গুণ ও কোকেইনের ক্ষেত্রে ২২ গুণ বেশি। করোনায় ধূমপায়ীরা বেশি সমস্যায় ভূগতে পারেন।