কমে আসছে করোনা সংক্রমণ খুলে দিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

17

 

বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে দীর্ঘ ১৭ মাস ধরে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এর ফলে প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা স্তর পর্যন্ত দেশের সাড়ে পাঁচ কোটি শিক্ষার্থী ‘গৃহবন্দি’ অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীদের মাঝে বৃদ্ধি পেয়েছে মানসিক অস্তিরতা ও শিক্ষা থেকে ঝরে পড়ার প্রবণতা। দীর্ঘদিন প্রতিষ্ঠানে গিয়ে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত না থাকায় অনেক শিক্ষকও শারীরিক এবং মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন-এমনটি খবর বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের। আমরা জানি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘ এ বন্ধের যুক্তিসংগত কারণ রয়েছে। কারণ ব্যাপক সংক্রমণযোগ্য কোভিড-১৯ কোনভাবে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা সংক্রমিত হলে পুরো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমনকি শিক্ষার্থীদের পরিবারের মধ্যেও ব্যাপক সংক্রমণের আশঙ্কা রয়ে যায়। এতে সরকার বিভ্রান্তে পড়তে পারে। ফলে ব্যাপক ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না খুলে অনলাইন, সংসদ টেলিভিশন ও অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। কিন্তু দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীসহ খেটে খাওয়া ও নিম্ন-মধ্যম আয়ের পরিবারের সন্তানরা আর্থ-সামাজিক বাস্তবতায় এ প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত হতে পারে নি নিশ্চিতভাবে বলা যায়। তবে অ্যাসাইনমেন্ট প্রক্রিয়ার সাথে অধিকাংশ শিক্ষার্থী যুক্ত হওয়ার দাবি শিক্ষা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের, যদিও অ্যাসাইনমেন্ট জমা ও মূল্যায়নের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতার প্রশ্ন রয়ে গেছে। এসব সমস্যার মধ্যে আশার আলো জেগেছে, সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রী কর্তৃক এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা নেয়ার প্রক্রিয়া ঘোষণার মাধ্যমে। বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, সংক্রমণ অনেকটা কমে আসায় এবং করোনার গণহারে টিকাদান কার্যক্রম শুরু হওয়ায় অবশেষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। আমরা মনে করি, করোনার চলমান নিম্নগতি অব্যাহত থাকলে সরকারের সদিচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে আর পেছনে ফিরতে হবে না। আগামী নভেম্বর ও ডিসেম্বরে দুটি পাবলিক পরীক্ষা সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে সম্পন্ন হবে-এমনটি প্রত্যাশা আমাদের। তবে পুরোপুরি শ্রেণি কার্যক্রম কখন শুরু হবে-তা স্পষ্ট না করায় শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকরা দুশ্চিন্তায় রয়েছে। সম্প্রতি কঠোর বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করে সরকার ব্যবসা-বাণিজ্য, অফিস-আদালতসহ গণপরিবহণ, ট্রেন, লঞ্চ ইত্যাদি চলাচলে অনুমতি দিয়েছে। পাশাপাশি পর্যটনকেন্দ্র, কমিউনিটি সেন্টারও শর্ত সাপেক্ষে খুলে দিয়েছে। যদিও পর্যটনকেন্দ্র, হোটেল-মোটেল, রেস্টুরেন্ট ও কমিউনিটি সেন্টার খোলার ব্যাপারে স্বাস্থ্য পরামর্শ কমিটির আপত্তি রয়েছে। সূত্র জানায়, পরামর্শ ও টেকনিক্যাল কমিটি সরকারকে আবারও উপরোক্ত শ্রেণির প্রতিষ্ঠানগুলোসহ রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানাদি এবং গণজমায়েতের উপর কঠোর বিধি নিষেধের পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা নিয়ে কোন পরামর্শ দিয়েছেন বলে জানা যায়নি। আমরা মনে করি, স্বাস্থ্য বিষয়ক পরামর্শ ও টেকনিক্যাল কমিটি যদি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার কোন পরামর্শ না দিয়ে থাকেন, তবে আগামী সেপ্টেম্বর থেকে পরীক্ষামূলক সীমিত আকারে হলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া যায়। এক্ষেত্রে অবশ্যই সরকারকে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আর তেমনটি সিদ্ধান্ত জাতির কল্যাণেই নেয়া জরুরি বলে আমরা মনে করি। বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও বিশেষজ্ঞরা ইতোমধ্যে আগের বছরগুলোর চেয়ে এবার ঝরেপড়ার হার নিশ্চিতভাবেই বাড়বে বলে মত দিয়েছেন। তাদের ধারণা, শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা করোনাকালে বিভিন্ন কাজে যুক্ত হয়েছে, তাদের অনেকেই আর স্কুলে ফিরবে না। আবার অনেকে স্কুলে ভর্তি হলেও ক্লাসে অনুপস্থিতির হার বাড়বে। গত বছরের তুলনায় এ বছর এখনো এক-তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থী ভর্তি হয়নি। এমনকি শিক্ষকরা বাড়িতে বাড়িতে গিয়েও শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারছেন না। এটি নিঃসন্দেহে শিক্ষার একটি অস্বস্তিদায়ক চিত্র। বিশেষ করে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যেখানে ভর্তিতে কোনো ধরনের টাকা নেওয়া হয় না, সেখানেও ভর্তির হার ব্যাপকভাবে কমেছে।
করোনাকালে সবচেয়ে বেশি দুরবস্থায় আছে কিন্ডারগার্টেনগুলো। জানা যায়, সারা দেশের ৬০ হাজার কিন্ডারগার্টেনে প্রায় ৮০ লাখ শিক্ষার্থী লেখাপড়া করে। এর অর্থ হলো, সরকারি প্রাথমিকে যে সংখ্যক শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে, তার প্রায় অর্ধেকসংখ্যক পড়াশোনা করে কিন্ডারগার্টেনে। কাজেই এ ব্যাপারে হেলাফেলা করার সুযোগ নেই। প্রতি বছর এ সময়ে স্কুলগুলো থাকে জমজমাট। কিন্তু এবার এসব স্কুলে এক লাখ শিক্ষার্থীও ভর্তি হয়নি। আশার কথা হচ্ছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর বেঁধে দেওয়া শর্তাবলি পালন করে দেশের ৬৫ হাজার ৬২০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় খুলে দেওয়ার জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ‘স্কুল রি-ওপেনিং প্ল্যান’ তৈরি করেছে বলে বিভিন্নসূত্রে জানা যায়। আমরা আশা করি, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মাউশি দ্রæত সময়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেয়ার উদ্যোগ নিবেন। একাজটি যত তাড়াতাড়ি করা যাবে, ততই জাতির মঙ্গল হবে।