বিশেষ প্রতিনিধি, কক্সবাজার
একের পর এক আকাশে উড়ে যাচ্ছে বর্ণিল ফানুস। সবার নজর আটকা পড়ছিলো ব্যতিক্রমী কিছু ফানুসের দিকে। কোনোটিতে ধর্মীয় চিহ্ন, কোনোটিতে লেখা শান্তির বাণী। এরমধ্যে ‘কোভিড-১৯’ লেখা একটি ফানুসও উড়ে যেতে দেখা যায়। গত বুধবার এরকম শত শত ফানুসের বর্ণিল আলোয় আলোকিত হয়ে উঠে সন্ধ্যার আকাশ। সাধু সাধু ধ্বনির সুরে এ ফানুস উড়ানো হয় আকাশে।
প্রবারণা পূর্ণিমার দিন গত বুধবার সন্ধ্যায় শহরের জাদিরাম, পিটাকেট, থংরো ও অগ্গমেধা ক্যাং সংলগ্ন কেন্দ্রীয় মাহাসিংদোগ্রী মন্দির প্রাঙ্গণে স্বর্গের উদ্দেশ্যে উড়ানো হয় শত শত ফানুস। জীর্ণতা মাড়িয়ে পরিশুদ্ধ জীবন ও করোনা ভাইরাস থেকে মুক্তির প্রার্থনায় মন্দির প্রাঙ্গণে মিলিত হয় হিন্দু, বৌদ্ধ, খিস্ট্রান, মুসলিমসহ বিভিন্ন ধর্মালম্বী হাজারো মানুষ। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সাথে হাতে হাত মিলিয়ে আকাশে তোলা হয় একের পর এক ফানুস।
বিকাল থেকে রাখাইন সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষ নতুন পোশাক ও খাবার নিয়ে বিহারে গমন করেন। সেখানে মহামারি করোনা ভাইরাস থেকে মুক্তি ও শান্তি কামনায় প্রার্থনা করেন সবাই। এবার বিহার এবং রাখাইন সামাজিক ও ধর্মীয় সংগঠনগুলো নজরকাড়া প্রায় ৫০টি নান্দনিক প্যান্ডেল তৈরি করেছে। প্যান্ডেলগুলোর মূল আকর্ষণ বুদ্ধ। জমকালোভাবে সাজানো হয়েছে এসব প্যান্ডেল। বিহারগুলোও সেজেছে নবরূপে। বর্ণিল আলোকসজ্জায় আলোকিত করা হয়েছে সর্বত্র। প্রবারণা পূর্ণিমা ঘিরে বৌদ্ধ পল্লীর ঘরে ঘরে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ও রামু বাঁকখালী নদীতে কল্প জাহাজ ভাসার মধ্য দিয়ে দুই দিনব্যাপী আয়োজিত এই উৎসবের সমাপ্তি ঘটে।
এবার মাহাসিংদোগ্রী মন্দিরে প্যান্ডেল করেছে কক্সবাজার সরকারি কলেজ বৌদ্ধ ছাত্র মৈত্রী, সিটি কলেজ বৌদ্ধ ছাত্র মৈত্রি, রাখাইন একতা সংঘ, বড় বাজার রাখাইন যুব সংঘ, বাংলাদেশ রাখাইন স্টুডেন্ট কাউন্সিল, ফ্রি স্টাইল রিলেশনশীপ, রাজধানী ফ্রেন্ডস সার্কেল, রাখাইন যুব ইউনিটি, হ্যাংগিং গার্ডেন, কে.আর ভিক্টোরিয়া, রাখাইন তরুণ সংঘ ও বৌদ্ধ মৈত্রি পরিষদ। এছাড়া জেলার মহেশখালী, উখিয়া, চকরিয়া, রামু, পেকুয়া, টেকনাফ উপজেলা ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতেও নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে প্রবারণা পূর্ণিমা উদযাপিত হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা উ থান্ট অংক বলেন, প্রবারণার মূল প্রতিপাদ্য আত্মশুদ্ধি, শুভ, সত্য ও সুন্দরকে বরণ করে অসত্য ও অসুন্দরকে বর্জন করা। মানুষের অন্তর থেকে সব মলিনতা দূর করে অহিংসা, সাম্য, মৈত্রী, প্রেম ও দয়া জাগ্রত হোক এই কামনা করি।
কক্সবাজার রাখাইন একতা সংঘের সভাপতি উসেন থোয়েন (উসেনমি বাবু) বলেন, সিদ্ধার্থ যখন বুদ্ধিসত্ত রূপে শ্রাবন্তী নগর থেকে গৃহত্যাগ করেন। তখন অনুমাদ্ধর্শী নদী তীরে অবস্থানকালে অধিষ্ঠান করে নিজ চুলকে কর্তন করে উপরে দিকে নিক্ষেপ করেন। সে চুল গুচ্ছ মহাতাবতিংস স্বর্গের প্যাগোডা হিসেবে স্থির আছে। তাই চুলামনি নামে প্যাগোডা উদ্দেশ্যেই পূঁজা এবং প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করতে ফানুস উড়ানো হয় বলে জানা গেছে। তথাগত ভগবান বুদ্ধের আড়াই হাজার বছর পূর্বে সময়ের তাবতিংসা স্বর্গের তিন মাস বর্ষাবাস করে কার্ত্তিকী পূর্ণিমাকে ঘিরে মানবকুলের মহাপৃথিবীতে অবতরণ করেন। এই স্মৃতিকে অমলিন করে রাখতে বৌদ্ধ সম্প্রদায় উদযাপন করছে শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা।
