‘এত কিছুর পরও স্বস্তি পাচ্ছেন না’ ওবায়দুল কাদের

16

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, তার মন্ত্রণালয়ের অধীনে দেশে ‘মেগা’ প্রকল্পের মাধ্যমে বিস্তর উন্নয়নের পরও সড়ককে নিরাপদ না রাখতে পেরে ‘স্বস্তিতে নেই’ তিনি। গতকাল শুক্রবার ঢাকার তেজগাঁওয়ের সড়ক ভবনে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবসের আলোচনায় মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, এত কিছু করার পরও আমি স্বস্তি পাচ্ছি না। আমরা সড়কে শৃঙ্খলা কেন আনতে পারব না? খবর বিডিনিউজের
এবারের জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবসের স্লোগান ঠিক করা হয়েছে ‘গতিসীমা মেনে চলি, সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করি। গত ৯ মাসে সড়কে ট্রাফিক আইন ভঙ্গের জন্য কী পরিমাণ জরিমানা আদায় করা হয়েছে, সেই পরিসংখ্যান অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি মল্লিক ফখরুল ইসলাম। পরে সে প্রসঙ্গ টেনে ওবায়দুল কাদের বলেন, কত টাকা জরিমানা তুলেছেন, এটার হিসাব দিয়ে কোনো লাভ নেই। এটা কোনো বিষয় নয়। আমার কাছে বিষয় সড়ক নিরাপদ আছে কি না। গাড়িগুলো নিয়ম মত চলছে কি না, গাড়ির ফিটনেস আছে কি না, চালকের ফিটনেস- গাড়ির চালক গাড়ি চালাবার যোগ্য কি না, গাড়ি ওভারলোডেড কি না, গাড়ি বেশি গতিতে চলছে কি না আমি এটাই দেখব। আমার কাছে বিষয় হল দুর্ঘটনা কমেছে কি না।
দুর্ঘটনা ‘অবিরাম দুর্ভাবনার কারণ হয়ে আছে’ মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, প্রতিদিনই ঘটছে। পাখির মত মানুষ মরে, মাছির মত মানুষ মরে। এ মর্মান্তিক দৃশ্যপট মানুষ হিসেবে সইতে পারি না। অনেক কষ্ট হয়। অনেকগুলো ত্রæটি আমাদের আছে সেটা তো অস্বীকার করে লাভ নেই। সুন্দর সুন্দর ব্যানার পোস্টার করলেই আমাদের দায়িত্ব শেষ হয় না। নিরাপদ সড়ক দিবস করতে হবে প্রতিদিন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, এত উন্নয়ন হল, কিন্তু অনেকে বলেন, এই কাজটি হয় না কেন। সড়কে শৃঙ্খলা কেন আনতে পারব না। এখন সংকট শৃঙ্খলা, পরিবহন ও সড়কের। এখানে ব্যর্থ হলে আমাদের উন্নয়ন ম্লান হয়ে যাবে। এটাই আমাদের চ্যালেঞ্জ। কাজের মান ও গতি দুটোই ঠিক রাখতে হবে।
প্রতিদিন সড়কে মৃত্যুর খবর মনে ওপর কতটা চাপ ফেলে সেই বর্ণনা দিতে গিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাদের বলেন, সবার দিন শুরু হয় একভাবে, আর আমার দিন শুরু হয় অন্যভাবে। কাগজের পাতার অপ্রত্যাশিত মর্মান্তিক দুর্ঘটনার খবর পড়ে আমার দিন শুরু হয়। মন্ত্রী হলেও আমি তো মানুষ। আমারও কষ্ট হয়। আমিও দগ্ধ হই অদেখা দহনে। মনে হয় আমিও সেই অসহায় পরিবারের একজন। যে পরিবারের কয়েকজনও এক সঙ্গে পথের বলি হয়। কখনো দুই পরিবহনের সংঘর্ষে। কখনো তিন চাকার গাড়ি ইজিবাইকে, নসিমন, করিমনে।
আগামী বছর সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের কয়েকটি বড় প্রকল্পের উদ্বোধন হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, অবকাঠামোগতভাবে পরিবর্তন দৃশ্যমান। আগামী বছর সড়কে আমি তো বলব বৈপ্লবিক পরিবর্তন পুরোপুরি দৃশ্যমান হবে। পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজ শেষ পর্য়ায়ে, আমি গর্ব করে বলব, আমার মন্ত্রণালয়ে মেগা প্রকল্পগুলো আগামী বছর উদ্বোধন হবে। সেগুলো হলো- পদ্মা সেতু, এমআরটি লাইন ৬, মেট্রোরেল, বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ও চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধু কর্ণফুলী টানেল।
চট্টগ্রামের মিরসরাই থেকে আরেকটি মেরিনড্রাইভের উদ্বোধন করা হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আগামী ২৪ অক্টোবর পায়রা সেতুর উদ্বোধন হবে। আর দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা ঢাকা-সিলেট ও সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের ভিত্তি প্রস্তর দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক পরিবহনের সচিব নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের ইলিয়াস কাঞ্চন, সড়ক ও জনপদ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী আব্দুস সবুর, হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি মল্লিক ফখরুল ইসলাম আলোচনায় অংশ নেন।