একদলীয় শাসনক্ষমতার অবসান চায় বিএনপি

0
একদলীয় শাসনক্ষমতার অবসান চায় বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক

একদলীয় শাসনক্ষমতার অবসানের মাধ্যমে জবাবদিহিতামূলক রাষ্ট্র গঠন করতে চায় বিএনপি। এজন্য নির্বাচনোত্তর জাতীয় সরকার ও দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ প্রতিষ্ঠা করতে চায় দলটি। ছোট-বড় সব দলকে সাথে নিয়ে দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ প্রতিষ্ঠার কথা জানান দলটির নেতারা।
‘জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থা গঠনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন পরবর্তীতে জাতীয় সরকার ও দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট জাতীয় সংসদ অপরিহার্য’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় দলটির নেতারা এমন মত দেন। গতকাল শুক্রবার বিকেলে চট্টগ্রাম ক্লাব মিলনায়তনে বিএনপির মিডিয়া সেলের পক্ষ এ সভার আয়োজন করা হয়।
মিডিয়া সেলের আহŸায়ক জহির উদ্দিন স্বপনের সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন সদস্যসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি। সভায় জাতীয় সরকার নিয়ে মতামত দেন পেশাজীবী ও বিশিষ্টজনরা।
সভায় বিএনপির মিডিয়া সেলের আহবায়ক সাবেক এমপি জহির উদ্দিন স্বপন বলেন, দেশে একদলীয় শাসনক্ষমতা যেন কেউ কোনদিন প্রতিষ্ঠা করতে না পারে, সেজন্যই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেয়া নির্বাচনোত্তর জাতীয় সরকার ও দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ প্রতিষ্ঠা করতে চায় বিএনপি। একটি মানবিক রাষ্ট্র গঠনে জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্র গঠন এখন সময়ের দাবি। এজন্য আওয়ামী লীগ সরকারকে অপসারণ করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদব্যবস্থার ধারণা বাস্তবায়ন করা সম্ভব।
তিনি বলেন, বিএনপি শুধু ক্ষমতার পালাবদল নয়, রাষ্ট্রকাঠামোতে গুণগত পরিবর্তন চায়। রাষ্ট্রের মালিকানা জনগণের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার লক্ষ্যে এবং মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র গণতন্ত্র, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ঘোষিত ভিশন-২০৩০ এর আলোকে বিএনপি রাষ্ট্র রূপান্তরমূলক সংস্কার পরিকল্পনা করছে। এজন্যই তারেক রহমান গণতন্ত্রকামী সকল দল ও শক্তিসমূহকে নিয়ে নির্বাচনোত্তর একটি ফ্যাসিবাদ বিরোধী জাতীয় সরকার গঠন এবং জনগণের সর্বস্তরের প্রতিনিধিত্বশীল দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা প্রতিষ্ঠার রোডম্যাপ উপস্থাপন করেছেন।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনে সাবেক এমপি শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেন, শত শত ভাই, বন্ধু, সহকর্মীর সন্তান পিতার খোঁজে কান্নাভেজা চোখে আকুতি জানাচ্ছে, আমার পিতা কি বেঁচে আছেন না কি মারা গেছেন? গুম হওয়া পিতা বা ভাইয়ের জন্য কোমলমতি সন্তান-স্বজনের এমন আর্তনাদই প্রমাণ করে, বছরের পর বছর ধরে বিনাভোটে দেশের রাষ্ট্রক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখা চলমান ফ্যাসিবাদি শাসনের ভয়াবহতা।
তিনি বলেন, দেশে আজ মানুষের ভোটাধিকার হরণ করে বিনাভোটের ক্ষমতা দীর্ঘমেয়াদী করার জন্য গোয়েন্দা বাহিনীর তত্ত¡াবধানে গোপন ‘গুম কেন্দ্র’ ও টর্চার সেল বানানো হয়েছে। গণমাধ্যমে তথ্য প্রমাণ হাজির করে অত্যাচারের এই গোপন কেন্দ্রগুলোকে ‘আয়নাঘর’ নামে অভিহিত করেছে। গণতন্ত্রকামী কিংবা ভিন্ন দল-মতের মানুষকে এই আওয়ামী লীগ এখন বছরের পর বছর ধরে এই ‘আয়নাঘরে’ গুম করে রাখে। জনগণ নয়, এই ‘আয়নাঘর’ই সরকারের অবৈধ ক্ষমতার উৎস।
দলটির সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, দেশে অনেক ছোট-বড় দল আছে। এসব দল বা দলের নেতারা একেবারে আমজনতার কাছে তেমন পরিচিত নয়, কিন্তু মেধাবী এবং প্রাজ্ঞ। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে তাদের নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করবে। কারণ গত ১৫ বছরে রাষ্ট্রের যে ক্ষতি হয়েছে, বিএনপি মনে করে সেসব মেরামত বিএনপির একা করা সমীচীন হবে না। যদিও বিএনপি চাইলে করতে পারে। কিন্তু করবে না। কারণ বিএনপি বহুদলের বিশ্বাস করে। এজন্য জাতীয় সরকারের কনসেপ্ট নিয়ে আমরা এগোচ্ছি।
দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ নিয়ে বিএনপির এ নেতা বলেন, রাষ্ট্রের তিনটি বিভাগ- আইন বিভাগ, বিচার বিভাগ এবং নির্বাহী বিভাগ। এর মধ্যে আইন বিভাগের কাজ হলো শুধু আইন প্রণয়ন নয়, সেই সঙ্গে রাষ্ট্র প্রণয়নও। দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট ধারণাটা তারেক রহমান সাহেব নিয়ে আসছেন। এটির মাধ্যমে রাষ্ট্রের চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স চলে আসবে।
মিডিয়া সেলের সদস্য ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিনের সঞ্চালনায় আলোচনায় আরও অংশ নেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও মিডিয়া সেলের সদস্য কাদের গণি চৌধুরী, বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহবায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন, চবি রসায়ন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক হায়াত হোসেন, বিশিষ্ট চিসিৎসক অধ্যাপক ডা. জসিম উদ্দিন, এড. এএসএম বদরুল আনোয়ার, অধ্যাপক আবদুল আলিম, ড. ছিদ্দিক আহমেদ চৌধুরী, এড. আবদুস সাত্তার, ডা. তমিজ উদ্দিন আহমেদ মানিক, সাংবাদিক জাহিদুল করিম কচি, ডা. খুরশিদ জামিল চৌধুরী, এড. মফিজুল হক ভুঁইয়া, অধ্যাপক এস এম নসরুল কদির, এড. এনামুল হক, সাংবাদিক মো. শাহনওয়াজ, ইঞ্জি. সেলিম জানে আলম, ডা. কামরুন্নাহার দস্তগীর, এড. নাজিম উদ্দীন চৌধুরী।