উন্নয়নে বছরে এক হাজার কোটি টাকা চান পেয়ারুল

17

নিজস্ব প্রতিবেদক

চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম বলেছেন, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদে গত দশ বছরে এক হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন হয়েছে। আমি মনে করি এতবড় একটি জেলায় প্রতি বছরেই এক হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রয়োজন। এডিবির দেয়া তিন থেকে চার কোটি টাকার বরাদ্দে কাক্সিক্ষত উন্নয়ন সম্ভব নয়। চট্টগ্রাম বন্দরের আয় থেকে শতকরা এক ভাগ, ভূমি উন্নয়ন কর থেকে এক ভাগ এবং চট্টগ্রামের ভূমি ট্রান্সফারের আয়ের শতকরা দুই ভাগ প্রদানের জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানাবো। যদি জেলা পরিষদের বরাবরে এই বরাদ্দ পাওয়া যায়, তাহলে সর্বোচ্চ শ্রম, মেধা ও ঐকান্তিকতা দিয়ে কাজ করে প্রধানমন্ত্রীর মুখ উজ্জ্বল করবো। গতকাল দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভায় বক্তব্যকালে তিনি এসব কথা বলেন।
এটিএম পেয়ারুল ইসলাম বলেন, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের মানোন্নয়নে সবার সাথে কর্মযজ্ঞে শরিক হয়ে প্রাচ্যের রানী চট্টগ্রাম এই অঙ্গীকারে এগিয়ে যেতে চাই। আমাদের চট্টগ্রামকে আমাদেরকেই ভালোবাসতে হবে। এই চট্টগ্রাম ৫০ বছর আগের চট্টগ্রাম নাই। এই চট্টগ্রামকে প্রাচ্যের রানী বানানোর জন্য চেষ্টা চালাবো। আমরা সবাই সামনের দিকে চলতে চাই।
সাংবাদিকদের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, সাংবাদিকরা সুস্থ থাকলে চট্টগ্রাম ও দেশ সুস্থ থাকবে। মেধাবী সাংবাদিক দরকার আমাদের। সেজন্য মানোন্নয়নে সিনিয়র সাংবাদিকদের সাথে পরামর্শ করে প্রশিক্ষণের আয়োজন করবো। ফটোসাংবাদিক, রিপোর্টারদের শ্রেষ্ঠত্বের জন্য এ্যাওয়ার্ড দিব। চট্টগ্রামের জন্য অনেকেই কলম ও ক্যামেরা ধরে। প্রধানমন্ত্রীও অনেককে সাহায্য করেন। আমিও সাংবাদিক বন্ধুদের চিকিৎসার জন্য অনুদান দেয়ার চেষ্টা করবো। প্রেস ক্লাবের সাথে আমার সম্পর্ককে আরোও গভীরে নিয়ে যেতে চাইছি।
কৃষি উন্নয়নে কাজ করার ঘোষণা দিয়ে পেয়ারুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের মেরুদন্ড এখনো কৃষি ও কৃষক। তাঁদের বাঁচাতে হবে। সেজন্য ডেইরি, পোল্ট্রি, হ্যাচারি, মৎস্য, দুগ্ধ, ফলজ ও বনজ গাছ বাড়াতে হবে। আমি নিজেও একজন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত কৃষক। আমি এমএ পাস করে মৎস্য চাষে গেলে সাকা চৌধুরীসহ অনেকেই মাছ ব্যাপারি উপাধি দিয়েছিল আমাকে। অথচ এখন ফটিকছড়ির প্রতিটি মৎস্য প্রজেক্টে ৩০-৪০ জন কর্মরত আছে। আমি আম, কাঁঠালও বিক্রি করেছি। প্রযুক্তি সমৃদ্ধ লেখাপড়া করাতে চাই। মাদক থেকে সরাতে সমস্ত স্কুল-কলেজের মাঠ সংস্কার করে ইনডোর আউডোরে খেলাধুলার ব্যবস্থা করতে চাই। প্রবাসে যারা যাচ্ছে তাদেরকে দক্ষ ড্রাইভার হিসেবে পাঠাতে চাই। এসব কাজ করতে গেলে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।
প্রশাসনে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা আছেন জানিয়ে পেয়ারুল বলেন, প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে কিছু দুর্নীতিবাজ ও জামায়াত-শিবিরের প্রেতাত্মারা রয়ে গেছে। তারা অনেক শক্তিশালী। তাদেরকে আমাদের খুঁজে বের করে প্রশাসনের উর্ধ্বতন মহলকে জানাতে হবে।
তিনি বলেন, এবার আমার বিজয়ের জন্য চট্টগ্রামের সকল রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এক জায়গায় এসে কাজ করেছেন। শেখ হাসিনার হাতেই নিরাপদ থাকবে দেশ। প্রধানমন্ত্রী যাকেই মনোনয়ন দিবে তাকেই জয়ী করবো। আগামী নির্বাচনে ১৬টি আসনে জয়লাভ করতে হবে। প্রত্যেক সংসদীয় আসনে জয়ের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত।
চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সভাপতি আলহাজ আলী আব্বাস তার বক্তব্যে চট্টগ্রামের প্রবেশদ্বারগুলোতে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের উদ্যোগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফটো সম্বলিত তোরণ নির্মাণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম পারিবারিকভাবেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর। একইসঙ্গে তার সাথে সদস্য হিসেবে দুইজন বীরমুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন। সবার সহযোগিতায় চট্টগ্রামের উন্নয়নে জোরালো ভূমিকা রাখবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ। যুগ্ম সম্পাদক নজরুল ইসলামের সঞ্চালনায় শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সিনিয়র সহ সভাপতি সালাহউদ্দিন মো. রেজা, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি শহীদ উল আলম, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. রুবেল খান, জেলা পরিষদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী আবদুল ওহাব ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম চিশতী। এসময় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সদস্যবৃন্দ ছাড়াও জেলা পরিষদের নবনির্বাচিত অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।