উখিয়ায় মানা হচ্ছে না নির্বাচনী আচরণবিধি

4

উখিয়া প্রতিনিধি

প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে কক্সবাজারের উখিয়ায় ইউপি নির্বাচনকে ঘিরে প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণায় সরগরম হয়ে উঠেছে পুরো উপজেলা। তবে মানা হচ্ছে না নির্বাচনী আচরণবিধি। গভীর রাত পর্যন্ত মাইকিংয়ে চলে প্রচারণা। প্রচারণার শব্দ দূষণে নাকাল পরীক্ষার্থী ও ধর্মপ্রাণ মানুষ। প্রার্থীদের কাউকে কাউকে প্রচারণায় জীবিত ঘোড়া ব্যবহার করতে দেখা গেছে। নানান অভিযোগ তুলে প্রার্থীরা একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ তুলছেন। তবে অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে কাজ করছে প্রশাসন- এমনটাই জানিয়েছেন নির্বাচনী দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
অভিযোগ উঠেছে, রতœাপালং ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান খাইরুল আলম চৌধুরী নিজের বৈধ ও অবৈধ অস্ত্রের মহড়া দিয়ে স্বতন্ত্রপ্রার্থীর কর্মীদের মারধর করেছেন। সমর্থক ভোটারদের মিথ্যা মামলা-মোকদ্দমায় জড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে। গতকাল শনিবার বিকেলে সাংবাদিকদের কাছে এমন অভিযোগ করেন রতœাপালং ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও আগামি ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য ইউপি নির্বাচনে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী (ঘোড়া প্রতীক) নুরুল কবির চৌধুরী। তিনি বলেন, বর্তমান চেয়ারম্যান খাইরুল আলম চৌধুরী’র আমলে দেশের বহুল আলোচিত একই পরিবারের ফোর মার্ডারসহ ১৪টি হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় পর্যায়ে ন্যায় বিচার ব্যবস্থাপনা না থাকার কারণে খুনের ঘটনাগুলো ঘটেছে। এছাড়াও খাইরুল আলম চৌধুরীর আমলে রতœাপালং ইউনিয়ন মাদকের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। নানা দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও ঋণখেলাপীর দায়ে জনপ্রিয়তা হারিয়ে এবারের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছে সে। ইতোপূর্বেও সে কারচুপি করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়।
তিনি এও বলেন, ব্যক্তি জীবনে খাইরুল আলম চৌধুরী বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত এবং দলটির অর্থের যোগানদাতা। রাষ্ট্র বিরোধী নানা অপকর্ম এবং বিরোধী দলের জ্বালাও-পোড়াও রাজনীতির গডফাদার সে। নানা অনিয়মের কারণে নির্বাচনে অংশ নিতে না পেরে অন্য প্রার্থীর পক্ষে গিয়ে আমার বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছে। বিভিন্ন সভা-সমাবেশে আমাকে প্রাণনাশের হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। ইতোমধ্যেই আমার কয়েকটি নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর করেছে তার লোকেরা।
সরেজমিনে পরিদর্শন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাধারণ মানুষের নানান মতামতেও নির্বাচনী আচরণবিধি না মানার বিষয়টি উঠে এসেছে। এরমধ্যে শফিউল ইসলাম নামে একজন তার ফেসবুকে লিখেছেন, উখিয়ার কোথাও মানা হচ্ছে না নির্বাচনী আচরণবিধি, রাতভর সভা-সমাবেশ ও মাইকিং করতে দেখা গেছে। এধরণের পরিস্থিতি বজায় থাকলে যে কোনো সময় নির্বাচনী এলাকার শান্তিপূর্ণ পরিবেশ অশান্ত হয়ে উঠতে পারে। পক্ষে-বিপক্ষে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হতে পারে এমনটি মনে করেছেন শহীদুল ইসলাম নামে একজন।
অভিযুক্ত রতœাপালং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান খাইরুল আলম চৌধুরীর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত থাকায় সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
তবে এর আগে রতœাপালং ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান খাইরুল আলম চৌধুরী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাইভে এসে, স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী নুরুল কবির চৌধুরী বৌদ্ধ মন্দির হামলার অন্যতম হোতা উল্লেখ করে বিভিন্ন অপপ্রচার চালান।
দীর্ঘ ৯ বৎসর পর এসে স্পর্শকাতর বৌদ্ধ বিহারে হামলার ঘটনায় তৎকালীন চেয়ারম্যান নুরুল কবির চৌধুরীকে অভিযুক্ত করার বিষয়টি ষড়যন্ত্রমূলক বলে তিনি দাবি করেন। তিনি বলেন, রতœাপালং ইউনিয়নে ১১ টির মতো বৌদ্ধ বিহার ছিল। এরমধ্যে ১০টি তার দায়িত্বে নিরাপদে ছিল। কোটবাজার স্টেশনের একটি বিহার নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী নুরুল হুদার দায়িত্বে ছিল। যা ওই দিন হামলার শিকার হয়।
অপরদিকে আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে জীবিত প্রাণী নিয়ে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে অভিযোগ তুলেছে কয়েকটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থীরা। তবে ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থীরা বলেছেন- তারা কাগজের ঘোড়া নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন, জীবিত ঘোড়া নিয়ে নয়। আবার অনেকে মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে শত শত মোটর সাইকেলের বহর নিয়ে নির্বাচনী শো-ডাউন করতেও দেখা গেছে। তবে এসব দেখার চেয়ে অবাধ, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রত্যাশা করছেন সাধারণ ভোটারেরা।
উখিয়া উপজেলা নির্বাচন অফিসার মো. ইরফান উদ্দিন বলেন, নির্বাচনী আচরণবিধি লক্ষ্য করার জন্য মাঠে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছেন। হুমকি-ধমকি এবং জীবিত প্রাণী নিয়ে প্রচারণার বিষয়ে লিখিত কোনো অভিযোগ পাইনি আমরা। অভিযোগ পেলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য, সারাদেশের মতোই আগামি ১১ নভেম্বর উখিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন ৩৪ জন। সংরক্ষিত মহিলা সদস্যপদে লড়ছেন ৫৪ জন। আর সাধারণ সদস্য পদে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন ২৮০ জন।
এবারের ইউপি নির্বাচনে মোট ৩৬৮ জন প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন। উখিয়ার পাঁচটি ইউনিয়নে মোট ভোটার সংখ্যা ১ লক্ষ ৩০ হাজার ৬১৩ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ৬৭ হাজার ২১৯ জন, মহিলা ভোটার ৬৩ হাজার ৩৯৪ জন। মোট ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৫০টি। ভোট কক্ষের সংখ্যা ৩৩১টি।