ইনস্টিটিউিট বন্ধে কি চারুকলার সমাধান মিলবে?

14

শাহরিয়াজ মোহাম্মদ, চবি

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নির্দেশের পর গত বৃহস্পতিবার রাতেই হোস্টেল আর ক্যাম্পাস ত্যাগ করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা।
গত বছরের ২ নভেম্বর থেকে নানাবিধ সমস্যা নিয়ে আন্দোলন করে আসছিলেন চবি চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। এ পরিস্থিতির মাঝেই গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির আশংকায় মধ্যরাতে পুলিশ সাথে নিয়ে ইনস্টিটিউটে অভিযান চালায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি। এসময় ইনস্টিটিউটের শিল্পী রশিদ চৌধুরী হোস্টেলের (ছাত্র) ১০৫ নম্বর কক্ষ থেকে ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের এক ছাত্রীকে আটক এবং পাশের রুম থেকে গাঁজা উদ্ধার করা হয় বলে জানায় প্রশাসন।
এ ঘটনার পরদিনই বৃহস্পতিবার উপাচার্যের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের এক জরুরি সভায় আগামী একমাসের জন্য সশরীরে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাস ত্যাগের নির্দেশ দেয় সিন্ডিকেট। অনলাইনে ক্লাস চলবে বলে জানানো হয়। তবে হুট করে ক্যাম্পাস ত্যাগের নির্দেশ দেয়ায় বিপাকে পড়েন শিক্ষার্থীরা।
মাস্টার্সের শিক্ষার্থী সুসময় বড়ুয়া বলেন, ‘হুট করেই আমাদের হোস্টেল এবং ক্যাম্পাস ত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্ষদ এ নির্দেশ দিয়েছে তাই আমরা তা মেনে নিয়েছি। এমতাবস্থায় আমরা আশপাশে পরিচিতজনদের মেসে বা বাসায় অবস্থান করছি।’
তবে ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা করলেও শিক্ষার্থীরা তাদের অনশনের ঘোষণা থেকে সরে আসেননি। তারা বলেন, চারুকলার ক্যাম্পাস বন্ধ করা হয়েছে। মূল ক্যাম্পাসতো আর বন্ধ করা হয়নি। দরকার হলে মূল ক্যাম্পাসে গিয়ে অনশন কর্মসূচি পালন করা হবে।
গত বছরের ২ নভেম্বর ২২ দফা দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য সংস্কার আন্দোলনের ডাক দেয় চারুকলার শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে এ আন্দোলন রূপ নেয় চারুকলাকে ক্যাম্পাসে ফেরানোর এক দফা দাবিতে। পরবর্তীতে গত ২১ জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠক করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। এর পরদিন দ্বিতীয় দফায় জেলা প্রশাসক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন শিক্ষার্থীদের আশ্বাস দিলে তারা আন্দোলন এক সপ্তাহের জন্য স্থগিত রেখে খোলা মাঠে ক্লাস করার সিদ্ধান্ত নেন। এরপর এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও কোনো পদক্ষেপ না দেখে আবারও আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। তবে হঠাৎ করে ক্যাম্পাস ত্যাগের নির্দেশ আসায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে ইনস্টিটিউটের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ফাহিম বলেন, ‘আমাদের আন্দোলনকে দমাতেই মূলত সিন্ডিকেটের এ সিদ্ধান্ত। আমরা আগামী রবিবার অনশনের ঘোষণা দেওয়ায় প্রশাসন এ সিদ্ধান্ত দিয়েছে। তবে আমরা আমাদের আন্দোলন চলমান রাখবো এবং অনশনও করবো তবে কবে করবো এ বিষয়ে আপাতত সিদ্ধান্ত নিইনি।’
এমতাবস্থায় চারুকলা ইনস্টিটিউটের চলমান এ সংকটের সমাধান কী হতে যাচ্ছে তা নিয়ে ধোয়াশা তৈরি হয়েছে। শিক্ষার্থীরা চাচ্ছেন চারুকলাকে অতিসত্বর মূল ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে নেয়া হোক। অপরদিকে এ সংকট নিরসনের লক্ষ্যে প্রশাসন এখনও সুষ্ঠু কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর মো. ইয়াকুব বলেন, ‘চারুকলা নিয়ে সরকারের সাথে একটি চুক্তি হয়েছে। সেটা শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন। আপাতত চারুকলা একমাস বন্ধ থাকবে। এই একমাস সংস্কার করা হবে। তাদের ক্যাম্পাসে ফেরা নিয়ে যে সিদ্ধান্ত সেটা ক্যাম্পাস চালু হওয়ার পর জানানো হবে।’
এদিকে এক মাসের পর ক্যাম্পাস খুলবে কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তা প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। তারা বলেন, এক মাস বন্ধের কথা বললেও আদৌ কি একমাস পর খুলবে কিনা তা বলা যাচ্ছে না। সামনে আবার রমজান আছে। মনে হয় না ৩ মাসের আগে ক্যাম্পাস খুলতে পারবে।
অপরদিকে চারুকলাকে মূল ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের প্রক্রিয়াটি দীর্ঘ ও জটিল বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, চারুকলাকে ক্যাম্পাসে ফেরানোর সিদ্ধান্তটি প্রথমত আসতে হবে ইনস্টিটিউটের একাডেমিক কমিটি থেকে। সেখান থেকে শিক্ষকরা সিদ্ধান্ত দেয়ার পর পর্যায়ক্রমে বাকি পর্ষদে তা পাস হতে হবে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয়েরও একটি ভূমিকা রয়েছে। এ প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে দীর্ঘ একটি সময়ের প্রয়োজন।
এছাড়া চারুকলার দলিলে বলা আছে, শহরের জায়গাটা শুধু চারুকলা ইনস্টিটিউটকে পরিচালনার জন্য সরকার বিশ্ববিদ্যালয়কে দান করেছে। এখন ক্যাম্পাসে আসতে হলে দলিলটাও সংশোধন করতে হবে। এসব প্রক্রিয়া অনুসরণ না করলে আইনি জটিলতা দেখা দেবে।
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাস শহর থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে হাটহাজারীতে অবস্থিত। ২০১০ সালে চবি চারুকলা বিভাগ ও চট্টগ্রাম সরকারি চারুকলা কলেজকে একীভূত করার মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে একটি চারুকলা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ২০১১ সালের ২ ফেব্রæয়ারি নগরীর বাদশাহ মিয়া চৌধুরী সড়কে বর্তমান চারুকলা ইনস্টিটিউটের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়।