ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়

36

গোপাল নাথ বাবুল

সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকটি গ্যাং রেফ এর ঘটনা ঘটেছে। তার মধ্যে সবচেয়ে নৃশংস ও ভয়ঙ্কর ঘটনা হলো-খাগড়াছড়ির বলপাইয়া আদামের ডাকাতিসহ বুদ্ধিপ্রতিবন্ধি ২৬ বছরের এক চাকমা যুবতীকে ৮/৯ জনের উপর্যুপরি গণধর্ষণ ও নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের একলাসপুরে এক নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ভিডিও প্রকাশ। সমাজের কত অধঃপতন হলে ভাইয়ের কাছ থেকে ¯েœহের বোনকে কেড়ে নিয়ে ছুরিকাঘাতে হত্যা (সাভার) এবং স্বামীর কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে স্ত্রীকে গণধর্ষণ করে (এমসি কলেজ), তা ভাবতেও গা শিউরে ওঠে।
কোথাও আজ নারীরা নিরাপদ নয়। এমন কি নিজের ঘরেও না। পিতা কর্তৃক মেয়ে, শ্বশুর কর্তৃক পুত্রবধূ, ইমাম, মোয়াজ্জিন, মাদ্রাসা, স্কুল-কলেজের শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রছাত্রী, ৮০ বছরের বৃদ্ধ কর্তৃক ১২ বছরের শিশু, যুবক কর্তৃক ৭০ বছরের বৃদ্ধা এমনকি যাদের দেখলে শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে আসে, তারাও রেহাই পাচ্ছে না এ কুলাঙ্গারদের হাত থেকে।
তাই ধর্ষণ নিয়ে লেখার যেন শেষ নেই। ক্লান্তির ছায়া পরিদৃশ্যমান। বর্তমানের বাংলাদেশ যেন চেতনাহীন একটি দেশ। এটা কী সেই পূণ্যভূমি বাংলাদেশ ? যেখানে সাধু-সন্যাসী ও পীর-ফকিরেরা মানবতার জয়গান গেয়েছিলেন ? এমন কত প্রশ্ন প্রতিনিয়ত বিবেককে দংশন করছে। একের পর এক হিংস্র ও নারকীয় ঘটনা ঘটেই চলছে। এরপরও আমাদের চেতনাকে শাণিত করতে পারছি না। কারণ, সকল স্থানে ভোটের রাজনীতি। এমসি কলেজের ছাত্রলীগ নেতা থেকে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের গৃহকর্মী থেকে মামা বাহিনীর প্রধান বনে যাওয়া পাÐারা পর্যন্ত। নাহয়, যে সময়ে মানুষের বেডরুমের ঘটনা পর্যন্ত ফাঁস হয়ে যাচ্ছে, সে সময়ে কোন শক্তির ঈশারায় নোয়াখালীর ঘটনা ৩৩দিন পর্যন্ত গোপন ছিল ? ১২টি ধর্ষণ ও ৩টি হত্যা মামলাসহ মোট ১৭ মামলার আসামি দেলোয়ার কীভাবে শার্টের বোতাম খুলে বুকে হাওয়া লাগিয়ে সন্ত্রাস করে বেড়াতো ? সভ্যদেশে এসব ধর্ষক নামক অসভ্যদের বিরুদ্ধে বিচার পাওয়ার আশা দিনদিন ক্ষীণ হয়ে আসছে বলেই তো চারদিকে অন্ধকূপের নারকীয়তা। আজ অসভ্যদের মিছিলে দাঁড়িয়ে আমরা নির্লজ্জের মতো মানবতার বুলি আওড়াচ্ছি বলেই সারাদেশে বিরাজ করছে অনিশ্চয়তার এক চরম আবহ। মানুষরূপী শকুনেরা মানুষেরই দেহ খুবলে খুবলে খাচ্ছে। সরকার ধর্ষণের শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদন্ড ঘোষণা করার পরও আইনকে একপ্রকার বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে তারা আরো দ্বিগুণ উৎসাহে নৃশংসতা, হিংস্রতায় জড়াচ্ছে। এত অনিশ্চয়তার মধ্যেও আশা জাগানিয়া ঘটনা হলো-বাগেরহাট নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিজ্ঞ বিচারক জেলা ও দায়রা জজ জনাব নূরে আলম মাত্র ৬ দিনে ৭ বছরের এক শিশুর ধর্ষণের বিচার কাজ শেষ করে গত ১৯ অক্টোবর ধর্ষক বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার মাকোড়ডোন গ্রামের ভূমিহীন আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকার মৃত আহমদ সরদারের ছেলে পঞ্চাশোর্ধ আব্দুল মান্নান সরদারকে যাবজ্জীবন কারাদÐে দÐিত করেছেন।
কথায় আছে-ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়। সে বাক্যটির প্রমাণ আবারও দিলেন সম্মানিত বিজ্ঞ বিচারক জেলা ও দায়রা জজ জনাব নূরে আলম। এতো স্বল্প সময়ে শিশু ধর্ষণের বিচার করে তিনি বিচার কাজে নজির সৃষ্টি করেছেন। তাই বিজ্ঞ বিচারককে হাজারো অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।