আমাজন বনভূমি বিক্রি হচ্ছে ফেসবুকের মার্কেটপ্লেসে

22

ব্রাজিলে আমাজনের উষ্ণমন্ডলীয় বনভূমির কিছু অংশ অবৈধভাবে ফেসবুকের মার্কেটপ্লেসে বিক্রি করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। যেসব এলাকা বিক্রি হচ্ছে এগুলো সংরক্ষিত এলাকা। যার মধ্যে আছে জাতীয় বনভূমি এবং আদিবাসীদের জন্য নির্ধারিত এলাকা। ফেসবুকে ‘ক্লাসিফায়েড এ্যাড’ সেবার মাধ্যমে তালিকাভুক্ত আমাজনের এসব প্লটের কোনো কোনোটি এক হাজার ফুটবল মাঠের সমান বড়।
ফেসবুক বলছে, তারা এ ব্যাপারে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সাথে কাজ করার জন্য প্রস্তুত আছে, কিন্তু এই বাণিজ্য বন্ধ করার জন্য তারা নিজেরা স্বাধীনভাবে কোন পদক্ষেপ নেবে না বলে তারা আভাস দিচ্ছে।
তারা বলছে, ‘আমাদের বাণিজ্য সংক্রান্ত নীতিমালা এমন যে সেখানে ক্রেতা ও বিক্রেতাকে আইন-কানুন মেনে চলতে হয়।’ তবে এজন্য ক্ষতিগ্রস্ত আদিবাসী জনগোষ্ঠীগুলোর একটির নেতা ফেসবুককে এ ব্যাপারে আরো বেশি কিছু করার আহবান জানিয়েছেন। পরিবেশবাদী আন্দোলনকারীরা দাবি করেছেন যে দেশটির সরকার এসব বিক্রি বন্ধ করতে ইচ্ছুক নয়।
পরিবেশ বিষয়ক একটি বেসরকারি সংস্থা ‘কানিন্দে’র প্রধান ইভানেইদ বানদেইরা বলছেন, ‘ভূমি দস্যুরা এখন নিজেদের এতই ক্ষমতাবান মনে করছে যে তারা ফেসবুকে এসব অবৈধ জমি বেচাকেনার চুক্তি করতে লজ্জা বোধ করছে না।’
ফেসবুক মার্কেটপ্লেসের ‘সার্চ’ ব্যবহার করে কেউ যদি পর্তুগীজ ভাষায় ‘বনভ‚মি’ বা ‘দেশীয় জঙ্গল’ এ জাতীয় শব্দ লেখেন এবং আমাজনিয়ান রাজ্যগুলোকে ‘লোকেশন’ হিসেবে বেছে নেন, তাহলে যে কেউ এসব অবৈধভাবে দখল করা প্লটের সন্ধান পেতে পারেন। তালিকাভুক্ত কোন কোন বনভ‚মির উপগ্রহ থেকে তোলা ছবি এবং জিপিএসের অক্ষাংশ-দ্রাঘিমাংশও দেয়া আছে।
এগুলো যারা বিক্রি করছেন- তারা খোলাখুলি স্বীকার করেন যে তাদের এসব জমির মালিকানার কোন দলিলপত্র নেই। যা ব্রাজিলীয় আইন অনুযায়ী কোন জমির মালিকানার প্রমাণ। ব্রাজিলে এখন যে ‘ক্যাটল র‌্যাঞ্চিং’ বা বড় আকারে গবাদিপশুর খামার শিল্প গড়ে উঠেছে, তা এই অবৈধ কর্মকান্ডকে উৎসাহিত করছে বলে মনে করা হয়।
গত ১০ বছরের মধ্যে ব্রাজিলিয়ান আমাজনে এখন বনভ‚মি ধ্বংসের পরিমাণ সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছে। বনভূমি বিক্রেতাদের একজন হচ্ছেন ফ্যাব্রিসিও গিমারেস। তিনি বনভ‚মির একটি অংশ আগুনে পুড়িয়ে খোলা প্রান্তরে পরিণত করেছেন। এটা করা হয়েছে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে এবং জমিটি এখন চাষাবাদের জন্য তৈরি। এখানে রাষ্ট্রীয় কোন কর্মকর্তার পরিদর্শনের কোন ঝুঁকিই নেই। তিনি জায়গাটির প্রাথমিক দাম হেঁকেছিলেন ৩৫ হাজার মার্কিন ডলার। তবে এখন সে দাম তিনগুণ বেড়ে গেছে।
ফ্যাব্রিসিও নিজে কৃষক নন। তিনি মধ্যবিত্ত শ্রেণির, একটি শহরে ভালো চাকরি করেন। তিনি এই উষ্ণমন্ডলীয় বনভূমিকে দেখেন একটা বিনিয়োগের সুযোগ হিসেবে।
ব্রাজিলের আমাজন বনভূমি সবচেয়ে বেশি উজাড় হচ্ছে যেখানে- সেই রাজ্যটির নাম রন্ডনিয়া। ফেসবুকের বিজ্ঞাপনের অনেকগুলোই আসে এই এলাকা থেকে।
বিবিসি এখানকার চারজন বিক্রেতার সাথে বৈঠকের ব্যবস্থা করেছিল। এজন্য একজনকে ছদ্মবেশী আইনজীবী হিসেবে পাঠানো হয়, যিনি নিজেকে কয়েকজন ধনী বিনিয়োগকারীর প্রতিনিধি হিসেবে পরিচয় দেন।
একজন জমি বিক্রেতার নাম আলভিম সুজা আলভেস। তিনি স্থানীয় মুদ্রায় ১৬,৪০০ পাউন্ড দামে একটি প্লট বিক্রির চেষ্টা করছিলেন। এই জায়গাটি উরু ইউ ওয়াউওয়াউ নামে একটি সংরক্ষিত আদিবাসী এলাকায়। খবর বিবিসি বাংলা
এখানে ২০০ জনেরও বেশি উরু ইউ ওয়াউ ওয়াউ জনগোষ্ঠীর লোক বাস করে। এছাড়া ব্রাজিল সরকারের তধ্যমতে এখানে অন্তত আরো পাঁচটি জনগোষ্ঠী বাস করে যাদের সাথে বাইরের বিশ্বের কোন যোগাযোগই হয়নি। কিন্তু আমাদের সাথে বৈঠকে আলভেস দাবি করলেন, তার জায়গাটিতে কোন ‘উরু ইউ ওয়াউ ওয়াউ’ সম্প্রদায়ের লোক নেই। তার জমিটা যেখানে, সেখান থেকে ৩১ মাইল দূরে বাস করে ‘উরু ইউ ওয়াউ ওয়াউ’ সম্প্রদায়ের লোক। তবে এমন নয় যে সেখানে আপনি তাদের আনাগোনা দেখতে পাবেন না।
উরু ইউ ওয়াউ ওয়াউ সম্প্রদায়ের নেতা বিতাতে উরু ইউ ওয়াউ ওয়াউ-কে বিবিসি ফেসবুকের বিজ্ঞাপনটি দেখিয়েছিল।
তিনি জানালেন, প্লটটি এমন এক জায়গায় যেখানে তারা শিকার, ফল সংগ্রহ ও মাছ ধরার জন্য ব্যবহার করেন। এখানে সম্মানের অভাব আছে। আমি এসব লোককে চিনি না। আমার মনে হয় তারা আদিবাসীদের জমির বন উজাড় করতে চায়, বলতে পারেন তারা আমাদের জীবনটাই উজাড় করতে চায়।
তিনি বলেন – এখানে কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ করা উচিত এবং ফেসবুকের প্রতিও তিনি আহ্বান জানান স্বত:প্রণোদিত হয়ে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে।
অবৈধ জমির বাজার চাঙ্গা হয়ে ওঠার পেছনে আরেক কারণ হলো- ক্ষমা পেয়ে যাবার সম্ভাবনা বেড়ে যাওয়া উল্লেখ করে আলভেস বলেন, তিনি অন্য কয়েকজনের সাথে মিলে কাজ করছেন যেন চুরি করা এসব জমির বৈধ মালিকানা পাবার জন্য রাজনীতিকদের সহায়তা পাওয়া যায়।
তিনি বলছেন, ‘সত্যি কথাটা হলো, বোলসোনারোর সময় যদি এর সমাধান না হয়- তাহলে আর কখনোই হবে না।’