আমরা সংক্ষিপ্ত আন্দোলন করলে তারা সংক্ষিপ্ত সময়েই চলে যাবে

8

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, সরকার বিদ্যুতের নামে বিদ্রæপ করে জনগণের টাকা লুটপাট করেছে। গতকাল শনিবার নগরীর পুরাতন রেল স্টেশন চত্বরে মহানগর বিএনপি আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ক্ষমতায় আসার পর শেখ হাসিনা বলেছিলেন শতভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদন করবেন। সেজন্য রাতারাতি কুইক রেন্টাল করলেন। কুইক রেন্টালের মাধ্যমে কুইক কমিশন বিদেশে টাকা পাচার করেছে। যে বিদ্যুৎ তারা দিয়েছে, তার মূল্য কত? তাদের কাছে পাওনা কত? এই বিদ্যুতের নামে বিদ্রæপ করে জনগণের টাকা লুটপাট করেছে, তার পরিমাণ ১০ লাখ কোটি টাকার বেশি। তা বিদেশে পাচার করা হয়েছে। এই টাকা তো নতুন করে ছাপিয়ে বিদেশে পাচার করা হয়নি। কোনো না কোনো প্রজেক্ট থেকে হাতিয়ে নিয়ে বিদেশে পাচার করা হয়েছে। এই টাকার হিসাব জনগণের নেওয়ার অধিকার রয়েছে। গয়েশ্বর রায় বলেন, কিছুদিন আগে বলেছিলাম, এই সরকার জনগণের হাতে হারিকেন ধরিয়ে দিয়েছে। বিদ্যুৎ নাই, কিন্তু আমাদের টাকা গেল কই? বিদ্যুতের জন্য যত টাকা ঋণ করেছে, সেই টাকা তো আমাকে অর্থাৎ জনগণকে পরিশোধ করতে হবে। কেন আমরা এই ঋণ পরিশোধ করব? দ্রুত চাহিদা মেটানোর জন্য কাকে কাকে কুইক রেন্টাল প্রজেক্ট দেওয়া হয়েছে, তাদের নাম মনে হয় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে ফাইলবন্দি আছে। কোম্পানিগুলো কী পরিমাণ টাকা ঋণ নিয়েছে, কী পরিমান জ্বালানি ফুয়েল দেওয়া হয়েছে এবং কী পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে, এ নিয়ে যে প্রতিবেদন সরকারকে দিয়েছে, তার হিসাবটা দেন।
তিনি বলেন, শুনতে পাচ্ছি বিদ্যুৎ সাশ্রয় করার জন্য সপ্তাহে তিন দিন স্কুল কলেজ বন্ধ রাখবে, জেনারেটর চলতে পারবে না, ডিজেল খুচরা বাজারে দেবেন না, তাহলে মানুষ কী করে বাঁচবে? শিল্প কলকারখানা কীভাবে চলবে? কৃষি, পোশাকখাতসহ সামগ্রীক উৎপাদনে কী পরিমাণ ঘাটতি হবে? সেই ঘাটতি পূরণ করে বিদেশি বাজার ধরে রাখা কঠিন হবে। তাহলে দেশ কীভাবে চলবে?
গয়েশ্বর বলেন, চাল-ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সবকিছুর দাম বেশি, তবে শেখ হাসিনার দাম ক্রমান্বয়ে কমছে। এই ফ্যাসিস্ট সরকারের মূল্য প্রতিদিনই কমছে। শেয়ার মার্কেটে ধস নেমেছে। আমরা যদি রাস্তায় সংক্ষিপ্ত আন্দোলন করি, তাহলে সরকার সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যেই চলে যাবে।
তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রীও পার্লামেন্টে এরকম আইন পাশ করলো। আমার মনে হয়, আপনারা অর্থনীতি বোঝেন না। আপনি যে টাকা পাচার করেছেন সেটাতো বৈধভাবে নেন নাই, এই টাকা বৈধভাবে আনবেন কিভাবে? শ্রীলঙ্কার পাচারকৃত টাকা বাজেয়াপ্ত হওয়ায় আজকে তাদের এই দুর্দশা। মুদ্রা পাচারের মধ্যদিয়ে ব্যাংক শেষ। রিজার্ভের কথা শোনা যায়, অবস্থা এমন যে, হয়তো দুই-তিন মাস পরে দেশের আমদানিকারকরা এলসি খুলতে পারবে না। ডলারের দাম ঊর্ধ্বগতি, খোলাবাজার থেকে যদি ডলার কিনে পণ্য আমদানি করতে হয়, তাহলেও ২০ শতাংশ এ কারণেই বেড়ে যাবে।
গয়েশ্বর রায় বলেন, ওবায়দুল কাদের বলেছেন, খালেদা জিয়াকে টুস করে পানিতে ফেলে দেওয়া, এটা একান্তই হিউমার। অর্থাৎ শেখ হাসিনা ঠাট্টাও জানে। ঠাট্টা খালেদা জিয়ার সাথে করেন কিন্তু জাতির সামনে যে ঠাট্টা ১৪ বছর যাবৎ করছেন, এটার হিসাব জনগণ একদিন নিবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ভোটাধিকার হরণকারী সরকার অনুগত প্রশাসনকে অপব্যবহার করে অনৈতিকভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। সরকারের পায়ের নিচে মাটি নাই, মাথার ওপর থেকে ছায়াও সরে যাচ্ছে। সরকার নার্ভাসনেসে ভুগছে। সেজন্য তারা একেক জন একেক রকম কথা বলছে, তাদের কথা ও কাজ অসংলগ্ন ও প্রতারণামূলক।
মহানগর বিএনপির আহবায়ক ডা. শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্করের পরিচালনায় সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম। বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় শ্রম সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দীন, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক জালাল উদ্দিন মজুমদার।
বক্তব্য রাখেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সুফিয়ান, কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক সি. সহ সভাপতি মোরতাজুল করিম বাদরু, মহানগর বিএনপির সি. যুগ্ম আহবায়ক এম এ আজিজ, যুগ্ম আহবায়ক মোহাম্মদ মিয়া ভোলা, এড. আবদুস সাত্তার, সেয়দ আজম উদ্দীন, এস এম সাইফুল আলম, এস কে খোদা তোতন, মহানগর যুবদলের সভাপতি মোশাররফ হোসেন দিপ্তী, সাধারন সম্পাদক মোহাম্মদ শাহেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এইচ এম রাশেদ খান, সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন বুলু, মহানগর ছাত্রদলের আহবায়ক সাইফুল আলম, সদস্য সচিব শরিফুল ইসলাম তুহিন প্রমুখ।