আগামী বর্ষায় জলাবদ্ধতা মুক্ত না হলেও দুর্ভোগ কমবে

10

নিজস্ব প্রতিবেদক

জলাবদ্ধতা নিরসনে ৩৬ খাল ও ৩০২ কিলোমিটার নালা সংস্কারে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। প্রকল্পের বাইরে থাকা ২১ খাল নিয়ে আর প্রকল্প নেওয়ার আগ্রহ নেই সংস্থাটির। তাই খালগুলো নিয়ে আলাদা প্রকল্প প্রস্তাবের প্রস্তুতি নিচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। সামনের বর্ষা মৌসুমের আগেই জলাবদ্ধতাপ্রবণ এলাকায় ১৮ থেকে ২০টি খালের সংস্কার করবে সিডিএ। সমন্বয় করে খালের সাথে সংযুক্ত শাখা খাল ও নালা পরিষ্কার করে দিবে চসিক। যাতে পানি প্রবাহ স্বাভাবিক হয়ে জলাবদ্ধতা নিরসন না হলেও প্রশমন হয়, জনদুর্ভোগ কমে।
গতকাল রবিবার সকালে টাইগারপাসস্থ চসিক অস্থায়ী কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে চট্টগ্রাম মহানগরীর জলবদ্ধতা সংক্রান্ত অগ্রগতি পর্যালোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব তথ্য জানান।
নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকার প্রকল্প সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। আরও প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে দু’টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সিটি কর্পোরেশন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড। এসব প্রকল্পের আওতায় নগরীর ৩৬টি খাল সংস্কারের কথা আছে।
প্রকল্পগুলো নিয়ে আয়োজিত সমন্বয় সভায় সূচনা বক্তব্যে চসিকের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, সিডিএ’র জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় ৩৬টি খাল থেকে অবৈধ স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ করা হয়েছে। কিন্তু বাকি খালগুলোতে অনেক অবৈধ স্থাপনা রয়ে গেছে। এগুলো উচ্ছেদ করতে হবে। সব খালে কাজ করা গেলে ভালো ফল আসবে। বর্ষা মৌসুমের আগেই খালগুলোর ভেতর থেকে অস্থায়ী বাঁধ ও মাটি সরিয়ে নেওয়ার জন্য প্রকল্পসংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের অনুরোধ জানানো হয়েছে। নির্মাণ কাজের জন্য অনেক খাল ভরাট করে ফেলা হয়েছে। উপকরণ সামগ্রী নেওয়ার জন্য খালের ভেতর ভরাট করতে হবে, তবে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা যাতে বাধাগ্রস্ত না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। গতবার অস্থায়ী বাঁধের কারণে কিছু কিছু এলাকায় ৫-৭ দিন পর্যন্ত পানি জমে ছিল। এতে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। সরকারের ভাবম‚র্তি ক্ষুন্ন হয়। তাই এবার তা যাতে না হয়।
সভায় চসিক মেয়র মেয়র প্রকল্পভুক্ত ৩৬টি খালের বাইরেও আরও ২১টি খাল প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দেন। তবে প্রস্তাব গ্রহণ করেননি সিডিএ কর্মকর্তারা।
সিডিএ সচিব আনোয়ার পাশা বলেন, এই ২১ খাল নিয়ে সিটি কর্পোরেশন আলাদা প্রকল্প নিতে পারে। কেননা সেনাবাহিনীর জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ আগামি বছরের মধ্যে শেষ হতে যাচ্ছে। এই অবস্থায় খালগুলো অন্তর্ভুক্ত করে পরবর্তী পর্যায়ে একনেকের অনুমোদন নিয়ে আসা বড় চ্যালেঞ্জের কাজ। তাই এসব খালে কাজ করার ব্যাপারে সিটি কর্পোরেশন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের কারিগরি সহায়তা নিতে পারে।
সভায় জলাবদ্ধতা নিরসনে সিডিএ’র নেওয়া দুই প্রকল্পের আওতায় ১৭ খালের মুখে স্লুইচগেট নির্মাণের কাজ আগামি মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে শেষ হবে বলে জানিয়েছেন সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস।
এছাড়াও সভায় বে-টার্মিনাল নির্মাণ, চসিক নির্মিত সড়কগুলোতে ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত ওজনের পরিবহন চলাচলের কারণে সৃষ্ট সমস্যা এবং চলমান প্রকল্পগুলো দ্রুততার সাথে শেষ করার বিষয়ে আলোচনা হয়।
সিডিএ’র চেয়ারম্যান জহুরুল আলম দোভাষ চট্টগ্রাম বন্দর সচল রেখে সকল উন্নয়ন কাজ করা, কর্ণফুলী রক্ষায় পলিথিনের উৎপাদন ও ব্যবহার নিষিদ্ধকরণ, সিডিএ কর্তৃক সম্পন্নকৃত নালাসমূহ চসিককে বুঝে নিতে অনুরোধ জানান।
মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন সংস্থার প্রকল্প পরিচালক লে. কর্ণেল মো. শাহ আলী প্রকল্পের ৬০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে জানিয়ে আসন্ন বর্ষা মৌসুমের আগেই নগরীর ১৮-২০টি খালের কাজ সম্পূর্ণরূপে শেষ করা, ৪২টি সীল্টট্রেপ স্থাপনের কাজ, ঢাকনাবিহীন ঝুঁকিপূর্ণ ড্রেন-খালে স্ল্যাব বসানোসহ রেলিং করার কথা জানান।
সভায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী মাহমুদুল হাসান খান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের শিবেন্দু খাস্তগীর, ওয়াসার তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম, সিএমপি’র উপ পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. তারেক আহম্মেদ বক্তব্য রাখেন।
চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুল আলমের সঞ্চালনায় এতে আরো বক্তব্য রাখেন চসিক সচিব খালেদ মাহমুদ, প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মানিক, চউক সচিব মো. আনোয়ার পাশা, প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামছ, বন্দরের সিনিয়র হাইড্রোগ্রাফার মো. নাছির উদ্দিন, জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি রায়হান মাহবুব, পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মিয়া মাহমুদুল হক। উপস্থিত ছিলেন মেয়রের একান্ত সচিব মুহাম্মদ আবুল হাশেম, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. কামরুল ইসলাম, মনিরুল হুদা, আবু ছালেহ, সুদীপ বসাক, নির্বাহী প্রকৌশলী বিপ্লব দাশ, ফরহাদুল আলম, রাজীব দাশ, অতিরিক্ত প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা হুমায়ুন কবীর চৌধুরী প্রমুখ।