অশোক কুমার বড়ুয়া

5

বাঙালি ঘনবস্তু পদার্থবিদ এবং শিবপুরে অবস্থিত ভারতীয় প্রকৌশল বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তিবিদ্যা প্রতিষ্ঠান সম্মানসূচক এমেরিটাস অধ্যাপক। তিনি মূলত আলোকবিজ্ঞান এবং আলোকতড়িত বিজ্ঞান (অপ্টোইলেকট্রনিক্স) বিষয়ে গবেষণা করেন। তিনি ২০০৩ সালে ভারত সরকার কর্তৃক চতুর্থ সর্বোচ্চ ভারতীয় বেসামরিক পুরস্কার পদ্মশ্রী পদকে ভূষিত হন। তিনি ৩০ মে ২০২১ সালে মৃত্যুবরণ করেন।
অশোক কুমার বড়–য়া ১৯ জুলাই ১৯৩৬ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি হেয়ার স্কুলে প্রারম্ভিক পড়াশোনা করেছিলেন এবং পরবর্তীকালে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে সম্মান সহ পদার্থবিদ্যায় স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন। ১৯৫৬ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজাবাজার বিজ্ঞান কলেজ থেকে তিনি স্নাতকোত্তর অধ্যয়ন সম্পন্ন করেছিলেন। তারপর ১৯৬০ সালে অধ্যাপক বি. এন. শ্রীবাস্তবের নির্দেশনায় তিনি ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কালটিভেশন অব সায়েন্স (আইএসিএস) থেকে পিএইচডি অর্জন করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ডক্টরাল-উত্তর গবেষণা শেষ করার পরে ১৯৬৪ সালে তিনি আইএসিএসে পাঠক হিসেবে যোগ দিয়ে তার কর্মজীবন শুরু করেছিলেন। পরবর্তীতে ১৯৭১ সালে তিনি আইএসিএসের অধ্যাপক হিসেবে। ১৯৮২ সালে পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত তিনি সেখানে কাজ করেছিলেন। বড়–য়া আলোকবিজ্ঞান এবং আলোকতড়িত বিজ্ঞান (অপটোইলেকট্রনিক্স) নিয়ে গবেষণা করেছেন। তিনি উৎপাদন প্রযুক্তি ও সরঞ্জামাদিসহ অকেলাসিত সিলিকন সৌর কোষ এবং সৌর মডিউলের দেশীয় পদ্ধতিতে উন্নয়নের জন্য কৃতিত্ব অর্জন করেছেন। তিনি বিমানের ক্যানোপিজ বা চাঁদোয়া এবং উইন্ডশীল্ডগুলোর রাডার অস্বচ্ছভাবে আবৃতকরণের জন্যও একটি প্রক্রিয়া তৈরি করেছিলেন বলে জানা যায়। তার গবেষণাগুলো আন্তর্জাতিক মাপের সমকালীন পর্যালোচিত জার্নালগুলোতে ৩০০ টিরও বেশি প্রকাশিত বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্রের মাধ্যমে নথিভুক্ত করা হয়েছে। অধিকন্তু তিনি বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর ডক্টরাল গবেষণা ও অধ্যয়ন তত্ত¡াবধান করেছেন।
বড়–য়া ২০১০ সাল থেকে শিবপুরে অবস্থিত ভারতীয় প্রকৌশল বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তিবিদ্যা প্রতিষ্ঠানের সম্মানসূচক অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত রয়েছেন। তিনি বেঙ্গালুরুতে অবস্থিত ভারতীয় বিজ্ঞান একাডেমী এবং পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি একাডেমির ফেলো নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি সোলার ফটোভোলটিকস সম্পর্কিত জওহরলাল নেহেরু জাতীয় সৌর অভিযানের অধীনে নতুন ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের গবেষণা ও উন্নয়ন কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত সৌর গবেষণা উদ্যোগের টাস্কফোর্সের সদস্য ছিলেন। তিনি এশিয়া প্যাসিফিক একাডেমি অব মেটেরিয়ালের সদস্য হিসাবে ষষ্ঠ আন্তর্জাতিক ফটোভলটিক বিজ্ঞান ও প্রকৌশল সম্মেলনের সভাপতি এবং ভারতীয় পদার্থবিজ্ঞান সমিতির হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। পাশাপাশি তিনি বিড়লা শিল্প ও প্রযুক্তি জাদুঘরের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এছাড়াও তিনি এইচএইচভি সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড ফটোভোলটাইক টেকনোলজিস-এর সাথেও অতিরিক্ত পরিচালক হিসাবে যুক্ত রয়েছেন।
২০০২ সালে ভারতীয় ভৌত গবেষণা সমিতি (মেটেরিয়ালস রিসার্চ সোসাইটি অব ইন্ডিয়া) থেকে বর্ষসেরা বিশিষ্ট ভৌত গবেষক পুরস্কার পেয়েছিলেন। ভারত সরকার ২০০৩ সালে তাকে অন্যতম সর্বোচ্চ ভারতীয় বেসামরিক পুরস্কার পদ্মশ্রী পদকে সম্মানিত করে। এছাড়াও তিনি ভারতের সৌরশক্তি সমিতি থেকে ফটোভোলটাইক বিজ্ঞান ও প্রকৌশল সম্মেলন পুরস্কার এবং ভারতের ম্যাটেরিয়ালস রিসার্চ সোসাইটি থেকে আইসিএসসি-পদার্থ বিজ্ঞান পুরস্কার পেয়েছিলেন। সূত্র: বাংলাপিডিয়া