অর্থনীতির স্বার্থে প্রকৃত লকডাউন জরুরি : আহসান এইচ মনসুর

56

দেশের মানুষকে বাচাঁতে এবং অর্থনীতিকে স্বাভাবিক করতে খুবই অল্প সময়ের মধ্যে কারফিউয়ের মতো শক্ত লকডাউন চান বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান মনসুর। তিনি মনে করেন- যে উদ্দেশ্যে সব কিছু খুলে দেওয়া হয়েছে, সেই উদ্দেশ্য পূরণ হবে না, বরং সব কিছু খুলে দেওয়ার কারণে দীর্ঘমেয়াদে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়বে দেশ।- বাংলা ট্রিবিউন
রবিবার (৩১ মে) তিনি বলেন, ‘সব খুলে দেওয়াতে মনে হবে হয়তো অর্থনীতির কিছুটা উপকার হচ্ছে, কিন্তু রোগ নিয়ন্ত্রণ না করে এই সময়ে খুলে দেওয়ার ফলে দীর্ঘ মেয়াদে এর খেসারত দিতে হবে।’ তিনি আরও বলেন করেন, ‘আমাদের দেশে শক্তভাবে লকডাউন দেওয়া হয়নি। সাধারণ ছুটি দেওয়া হয়েছে। ফলে মানুষ সুযোগ পেয়ে ছুটি কাটিয়েছে আর করোনায় আক্রান্ত হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘অর্থনীতির স্বার্থে এই মুহূর্তে সেনা বাহিনীর নেতৃত্বে পূর্বঘোষিত প্রকৃত লকডাউন জরুরি। এক্ষেত্রে দেশবাসীকে আগে থেকেই বলে দিতে হবে- যাতে কেউ ঘর থেকে না বের হয়। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতে পারেন।’ আহসান এইচ মনসুর উল্লেখ করেন, কারফিউয়ের জন্য আগে থেকেই মানুষের প্রস্তুতি নেওয়া থাকবে, প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী কিনে রাখবে। আর যাদের খাদ্য কেনার সামর্থ্য নেই, তারা বিশেষ নম্বরে ফোন করলে সরকার স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী বা সেনাবাহিনীর মাধ্যমে তাদের খাবার পৌঁছে দেবে। শেষ চেষ্টা হিসেবে সরকার ইচ্ছে করলে শক্তভাবে কারফিউ দিতে পারে। তিন থেকে চার সপ্তাহ শক্ত লকডাউন হলে রোগ নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। তারপর ধীরে ধীরে সব খুলে দিতে হবে।
আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘যেসব দেশ শক্তভাকে লকডাউন করেছে, সেসব দেশে করোনাও নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে।’ এই সময়ে সরকারের বাজেট ঘোষণা করার কোনও প্রয়োজনীয়তা নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘এই আতঙ্ক-ভয়ের মধ্যে অর্থনীতি সচল হবে কী করে? কে বিনিয়োগ করবে? কোথা থেকে বিনিয়োগ করবে? টাকা পাবে কোথায়? আর কার জন্য কী পণ্য উৎপাদন করবে? কে সেই পণ্য কিনবে?’ ঈদের পরই শক্তভাবে লকডাউন দেওয়া জরুরি ছিল বলে মনে করেন তিনি।
তিনি বলেন, যদি ঈদের পর থেকে শক্তভাবে লকডাউন হতো, তাহলে অল্প দিনের মধ্যেই এর ইতিবাচক ফল পাওয়া যেত। আহসান মনসুর আরও বলেন, ‘এই যে অর্ডার আছে, অর্ডার আছে বলে পোশাক কারখানা খুলে দেওয়া হলো। কিন্তু তাতে কী হলো? গত এপ্রিলে মাত্র ৪০ কোটি ডলার পোশাক রফতানি করা গেছে। এটা কয় টাকা? মাত্র তিন হাজার কোটি টাকা। এই তিন হাজার কোটি টাকার জন্য কী বিপদটাই না ডেকে আনলাম আমরা। তার মাশুল দিতে হচ্ছে এখন গোটা দেশবাসীকে।
প্রসঙ্গত, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে দুমাস সাধারণ ছুটি শেষ হওয়ার পর ৩১ মে থেকে বিধিনিষেধ শিথিল করে সবকিছু খুলে দেওয়া হয়েছে। যদিও ৬৬ দিনের সাধারণ ছুটি শেষে প্রথম দিনেই সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড হয়েছে। রোগী শনাক্তের ১৩তম সপ্তাহে এসে করোনায় সর্বোচ্চ ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এনিয়ে করোনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ৬৫০। আর গত ২৪ ঘণ্টায় আরও দুই হাজার ৫৪৫ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এটিও এখন পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্ত। এনিয়ে এখন পর্যন্ত মোট ৪৭ হাজার ১৫৩ জন করোনা শনাক্ত হলেন।
এই পরিস্থিতিতে অর্থনীতি বিষয়ক গবেষক আহসান এইচ মনসুর মনে করেন- বর্তমান পরিস্থিতিতে অফিস, গণপরিবহন ও অর্থনৈতিক কর্মকাÐ চালু করা হচ্ছে যে উদ্দেশ্যে, তা সফল না হয়ে উল্টো বিপদ আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। তার মতে, দুই মাসে লকডাউন যথাযথভাবে কার্যকর করা যায়নি বলেই ভাইরাসের বিস্তার এখনও বাড়ছে। তিনি বলেন, পরিস্থিতি এতটাই খারাপের দিকে যাচ্ছে যে, এখন দিনে ২ হাজার আক্রান্ত নিয়েই আমরা হিমসিম খাচ্ছি, হয়ত অচিরেই আমাদের দেখতে হবে দিনে ২০ হাজার মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। লাখ লাখ মানুষকে আইসিইউতে রাখতে হচ্ছে। দুই হাজার মানুষকে চিকিৎসা দেওয়ার সুযোগ নেই, ২০ হাজার মানুষ কীভাবে চিকিৎসা পাবে। সেই স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কী আমাদের আছে? তাহলে কী সত্যিকারের মহামারিই আমাদের দেখতে হবে?
তিনি বলেন, শুধু কী মানুষ মরবে? শুধু কী অর্থনীতির ক্ষতি হবে? আর্থ-সামাজিকসহ অন্যান্য ক্ষেত্রেও দেখা দেবে অস্থিরতা। তখন সরকারের ওপর চাপ আরও বাড়বে। প্রসঙ্গত, ঈদ সামনে রেখে গত মে মাসের মাঝামাঝি সময়ই সরকার বেশ কিছু বিধিনিষেধ শিথিল করে। তখন থেকেই কারখানা, দোকান-পাট খোলা ও মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়ার অনুমতি দেওয়া হয়। এরপর গত বৃহস্পতিবার ঘোষণা আসে, ৩১ মে থেকে অফিস খুলবে, বাস-লঞ্চ-ট্রেন-বিমান চলবে, খুলবে পুঁজিবাজার, ব্যাংকে লেনদেন হবে আগের মতোই। অবশ্য সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, অর্থনীতি সচল করতে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই এসব খোলা হবে।
১৫ জুন পর্যন্ত পরিস্থিতি দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।