অবশেষে নরক যন্ত্রণার অবসান হতে যাচ্ছে

60

চট্টগ্রাম ওয়াসার মদুনাঘাট (শেখ রাসেল) প্রকল্পের পাইপলাইন বসানোর জন্য কয়েক বছর আগে খোঁড়াখুঁড়ি করা হয় আরাকান সড়কে। তাছাড়াও কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্পের ফেজ-১ ও ২ এর জন্যও কাটা পড়ে সড়কটি। এ অবস্থায় বহদ্দারহাট থেকে কাপ্তাই রাস্তার মাথা পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার সড়কের একপাশে যানচলাচল বন্ধ রাখা হয়। অন্যদিকে সড়কে গর্ত, মাটির স্তূপ, ধূলোবালি এসবের কারণে অতিষ্ঠ এ পথের যাত্রীরা। অবশেষে সড়কটি সংস্কারে হাত দিচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন।
মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এ সড়কটির সংস্কার নিয়ে নানা কথা উঠছে। ওয়াসা আমাদের বুঝিয়ে দেওয়ার পর সড়কটি সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ২৪ জুলাই সংস্কার কাজের উদ্বোধন করা হবে। দ্রæত কাজ শেষ করার জন্য একযোগে ১৪টি পয়েন্টে কাজ চলবে। সড়কের দুরবস্থা নিয়ে এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের ক্ষোভ আছে। তাই দ্তু সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
২০১১ সালে চট্টগ্রাম ওয়াসার কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্পের কাজ শুরু হলে বহদ্দারহাট-কাপ্তাই রাস্তার মাথা সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি শুরু হয়। এরপর মদুনাঘাট প্রকল্প, কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প ফেজ-২ এর জন্যও কাটা পড়ে সড়কটি। এরমধ্যে ২০১৫ সালে মদুনাঘাট প্রকল্পের কাজ করতে গিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সড়কটির একপাশ বন্ধ করে দেয়। কাজ না করে দীর্ঘ সময় সড়কের একপাশ বন্ধ রাখায় যানবাহন চলাচলে বিঘœ ঘটে। তাছাড়া উন্মুক্তভাবে সড়কে যন্ত্রাংশ রাখা, খুঁড়ে রাখা এবং মাটি-বালি তুলে রাখায় পুরো এলাকা ধূলোয় ভরে যায়। চরম দুর্ভোগে পড়া এলাকাবাসী এমন নরক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে সংস্থায় সংস্থায় ধরনা দেয়। মানববন্ধন করে সড়কের পাশে ও প্রেস ক্লাবের সামনে দাঁড়িয়ে। এমনকি সংবাদ সম্মেলনও হয়েছে সড়ক বন্ধ রাখার বিষয় নিয়ে। এরপরও দীর্ঘ সময় ধরে সড়কটির একপাশ বন্ধই রয়েছে।
চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহ বলেন, সড়কটিতে আমাদের কাজ অনেক আগে শেষ হয়েছে। আমরা সিটি কর্পোরেশনের কাছে হস্তান্তর করেছি। এখন আমাদের কোনো কাজ ওখানে বাকি নেই। গ্যাস, পিডিবি, টিএন্ডটি তাদের কাজ হতে পারে। এখন সড়কটি সিটি কর্পোরেশন সংস্কার করবে।
নগরের ব্যস্ততম এই সড়কের দুই পাশে রয়েছে কালুরঘাট শিল্প এলাকা, চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা, বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল ও বিনোদনকেন্দ্র স্বাধীনতা কমপ্লেক্স। এই সড়ক দিয়ে চলাচল করে নগরীর মোহরা ও চান্দগাঁও ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। এ ছাড়া উত্তর চট্টগ্রামের হাটহাজারী, রাউজান ও রাঙ্গুনিয়া উপজেলার একাংশ, কাপ্তাই উপজেলা এবং দক্ষিণ চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর মানুষের নগরের সঙ্গে যোগাযোগ এই পথে। এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন যাত্রীবাহী বাস-টেম্পো, পণ্যবাহী ট্রাক-মিনিট্রাক, সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চলাচল করে। সড়কটির একপাশ বন্ধ থাকার কারণে নিত্য যানজট লেগে থাকে। যানজটে নষ্ট হয় শ্রমঘণ্টা।
চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শামসুদ্দোহা বলেন, বহদ্দারহাট থেকে কাপ্তাই রাস্তার মাথা পর্যন্ত আরাকান সড়ক সংস্কারের জন্য ৭১ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের কাজ শুরুর জন্য মেয়র মহোদয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাথে কথা বলেছেন। দ্রæত কাজ শেষ করে জনদুর্ভোগ লাঘবের নির্দেশনা দিয়েছেন। মেয়র মহোদয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী ঠিকাদাররা কাজ করবেন।
বহদ্দারহাট থেকে কাপ্তাই রাস্তার মাথা পর্যন্ত সড়কের ভয়াবহ অবস্থা দেখে রাস্তায় নেমে এসেছিলেন স্থানীয় সাংসদ মইন উদ্দিন খান বাদল। ২০১৭ সালের আগস্টে তিনি একটি মানববন্ধনে অংশ নেন। তাছাড়া ২০১৪ সালের অক্টোবরে সংস্কারের দাবিতে সড়কে কই মাছের পোনা ছেড়ে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন যাত্রীসেবা পরিবহন মালিক সমিতি।