নতুন বছর প্রত্যাশা আর প্রাপ্তি যেন সমান হয়

104


চলে গেলো ২০১৯ সাল। অনেক প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, হাসি-কান্নার মাধ্যমে বছরটি সমাপ্ত হলো। নানা আলোচনা সমালোচনার বছরটি বিদায় দিয়ে ২০২০ সালে পদার্পণ করেছে বিশ্বের সকল দেশ। বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়। এদেশেও নতুনের কদর রয়েছে। রয়েছে নতুন বছরে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়।
আমার কাছে নতুন বছর মানেই নতুন কিছু। তাই আমার প্রত্যাশার পাল্লাটাও একটু ভারী। আমরা যখন নতুন কিছু নিতে যাই, তখন সবসময় ভালোটাই চাই। আমরা সবসময় পুরাতন জিনিসটার চাইতে আরো আপডেট এবং ভালো জিনিসটাই খুঁজি এবং সেটাই নিই। ঠিক সেভাবে ২০১৯ সালের সব ভুল-ভ্রান্তি ভুলে গিয়ে আমরা পেতে চাই আরো সুন্দর এবং সাজানো গোছানো একটি বছর। বছরটির শুরুতেই প্রয়োজন পরিকল্পনা। আমরা জানি পরিকল্পনা ছাড়া কিছুই সঠিকভাবে সফল করা যায় না। তাই নতুন বছরটা শুরু করতে হবে সুন্দর পরিকল্পনা দিয়ে। আর এই পরিকল্পনায় থাকতে হবে সকলের চাওয়া। তবে চাওয়া আর পাওয়ার মধ্যে যদি বিস্তর ব্যবধান থেকে যায়, সেই চাওয়ার আর মূল্য থাকে না। তাই নতুন বছরে সকলের প্রত্যাশাগুলো যেন প্রাপ্তিতে সমাপ্ত হয় সেটা মাথায় রেখে কাজ শুরু করতে হবে।
সেই সাথে বর্তমান সরকারকারের ভাবনায় রাখতে হবে এ প্রজন্মের চাওয়া। তরুণদের প্রত্যাশা যদি প্রাপ্তিতে পরিণত হয় তবে দেশটা হবে অনেক সুন্দর এবং গোছানো। তরুণদের নিয়ে সোনার বাংলা সাজাতে হবে সরকারকে। দেশের উন্নয়ন করতে হলে অবশ্যই তরুণদের সঙ্গে নিয়ে এগুতে হবে। সেইসাথে বেকার তরুণ যুবকদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে হবে নতুন বছর দিয়ে। এবারের নতুন বছরটি বাংলাদেশের মানুষের কাছে নতুন স্বপ্নের সিঁড়ি। সেই সিঁডি বেয়ে এগুতে হবে সকলের।
শুধু তা-ই নয়, আমাদের একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, একটা দেশের মূল চালিকাশক্তি এবং ভবিষ্যৎ হচ্ছে তরুণরাই। সোনার বাংলা গড়ার কারিগর জাতির জন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজেই তার তরুণ বয়সে দেখিয়েছেন তরুণরা কতটা করতে পারে দেশের জন্য। আমরা বঙ্গবন্ধুর জীবনী পড়লেই জানতে পারব তরুণ বঙ্গবন্ধু কতটা সফল ছিলেন। সেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বর্তমান তরুণ প্রজন্মেরও সফল হতে হবে। এজন্য তারুণ্যের চাওয়াগুলো প্রাধান্য দিতে হবে সকলের।
এ ছাড়া আমাদের দেশে আজ খেলার মাঠের বড় সঙ্কট। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে সব বয়সের মানুষ খেলতে পছন্দ করে। অবসর সময়ে খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকার অন্যতম উপায় খেলাধুলা। অথচ একের পর এক মাঠের জায়গা বেদখল হয়ে গড়ে উঠছে দালানকোটা। তরুণদের জন্য প্রতিটি এলাকায় একটি করে উন্মুক্ত খেলার মাঠের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে মাদকের আগ্রাসন থেকে বাঁচতে চাইলে খেলার মাঠের বিকল্প নেই। আমরা যদি আশপাশে লক্ষ করি, তাহলে দেখতে পাব তারাই ভালো আছে যারা খেলাধুলা করে।
তাছাড়া আমাদের দেশে বর্তমানে মাদকের ছড়াছড়ি। প্রতিটি স্থানেই এখন মাদক পাওয়া যায়। চাইলেই এখন মাদক সংগ্রহ করা যায়। ইয়াবা থেকে শুরু করে গাঁজা, মদসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য এখন হাতের নাগালে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাদকের এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। সমাজে ভালো মানুষের মুখোশ পরে আড়ালে মাদকের ব্যবসা করাটাই এখন অনেকের আদর্শ, যা আমরা খালি চোখে দেখি না। তবে যারা দেখি তারাও বলতে পারি না ভয়ে। তবে এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরো দক্ষ হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। তা না হলে মাদকবিরোধী অভিযান চললেও মাদকের আগ্রাসন কখনো থামবে না। তাই তরুণসমাজকে রক্ষা করতে হলে মাদকের ছড়াছড়িও বন্ধ করতে হবে। এছাড়াও আমাদের দেশে সড়ক দুর্ঘটনার যে প্রচণ্ড প্রতিযোগিতা তা রুখতে হবে।
প্রতিদিন অসংখ্য মানুষের মৃত্যু হচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনায়। তাই নতুন বছরে সরকারের কাছে অন্যতম প্রত্যাশা হচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করা। পরিশেষে বলতে চাই, তারুণ্যের চাওয়া এবং প্রত্যাশাগুলো যেন প্রাপ্তি দিয়ে পূরণ হয়। তবেই দেশ এবং দেশের মানুষ উপকৃত হবে।

লেখক : প্রাবন্ধিক