হবুবধূকে ঘরে তোলা হলো না ফাহাদের

104

এক বছর তিন মাস পূর্বে পারিবারিকভাবে আকদ সম্পন্ন হয় ডা. জান্নাতুন নাঈম শারমিন ও ডা. জোবাইদুল হক ফাহাদের। শারমিন হাটহাজারী পৌরসভার রেলস্টেশন রোডস্থ মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসী মো. আজাদের বড় মেয়ে এবং ফাহাদ চান্দগাঁও এলাকার নুরুল হক ঠিকাদার বাড়ির মঞ্জুরুল হকের পুত্র। মাসখানেকের মধ্যে তাদের বিবাহোত্তর অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে বধূ ডা. শারমিনকে নিজের বাড়িতে তুলে নেওয়ার কথা ছিল ডা. ফাহাদ পরিবারের। এ উপলক্ষে ডা. শারমিনের প্রবাসী পিতা আজাদ সম্প্রতি দেশেও আসেন। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস বুধবার রাত পৌনে ১০টার দিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের সাতকানিয়ার হাসমতের দোকান এলাকায় হানিফ পরিবহনের একটি বাসের ধাক্কায় ডা. ফাহাদ মারা যান। একটি মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনার মধ্য দিয়ে দুই পরিবারের সকল রঙিন স্বপ্নের অবসান ঘটল।
জানা গেছে, উভয়ের পরিবারে চলছিল বিবাহোত্তর অনুষ্ঠান আয়োজন। এই নিয়ে কতই না স্বপ্লের জাল বুনেছিল ফাহাদ। মাত্র একটি বছরের জন্য কাছে পাওয়া মনের মানুষটিকে এভাবে চিরদিনের জন্য যে হারাতে হবে তা কখনও কল্পনাও করেনি চিকিৎসক শারমিন। মুহূর্তের মধ্যেই যেন তার কল্পিত সেই স্বপ্নগুলো এলোমেলো হয়ে গেল। একটি মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় তার স্বামীর অকাল মৃত্যুর মধ্য দিয়ে ডা শারমিনের রঙিন স্বপ্নের যবনিকা ঘটালো।
এ ব্যাপারে দোহাজারী হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, চিকিৎসক ফাহাদ কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দায়িত্ব পালন শেষে মোটর সাইকেলে করে চট্টগ্রামে ফিরছিলেন। তিনি হাসমতের দোকান এলাকায় পৌঁছালে ওই মহাসড়কের চলাচলকারী হানিফ পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসকে পাশ কাটাতে গেলে সেটি ধাক্কা দেয়। এতে তিনি ছিটকে পড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান। বাসটি আটক করা হলেও চালক পালিয়ে গেছে। ঘটনার দিন ডা. ফাহাদ কক্সবাজার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে তার স্ত্রী ডা. শারমিনের ফুফাত ভাই ডা. রিসাতের বিয়েতে যোগ দিতে চট্টগ্রামে ফিরছিলেন।
নিহত ডা. জোবাইদুল হক ফাহাদ কক্সবাজারের কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরে একটি এনজিও’র নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসক ছিলেন। তার বাড়ি হাটহাজারী উপজেলায় হলেও তিনি তার পরিবারের সাথে নগরীর চান্দগাঁও এলাকায় বাস করতেন। কোরআন হাফেজ ডা. ফাহাদ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ৫৩তম ব্যাচের ছাত্র ছিলেন। এছাড়াও তিনি লাইটার ইয়ুথ ফাউন্ডেশনের কো-অর্ডিনেটরের দায়িত্বপালনসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
তার আকস্মিক মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছেনা তার স্বজনরা। এ সময় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। পিতা-মাতা, ভাই, আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের আহাজারীতে এলাকার পরিবেশ ভারি হয়ে উঠে।