সৎ মায়ের নির্মমতা!

37

মাত্র এক বছর বয়সী ফুটফুটে শিশু আয়ান। চারপাশ সম্পর্কে সে কিছুই জানে না, জীবন কি জিনিস তা তো বোঝার প্রশ্নই আসে না। এত ছোট্ট বয়সের এই শিশুরটির ওপরই বর্বর নির্যাতন চালিয়েছে তার সৎ মা!
শিশুটিকে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু সৎ মায়ের নির্মমতা তার ছোট্ট শরীরের ওপর এতই বেশি হয়েছে যে, তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হয়ে দাঁড়ায়। তার জরুরি রক্তের দরকার হয়। জরুরিভাবে নিজে শরীরের রক্ত দিয়ে শিশুটির জীবন রক্ষা করেন আফরোজা নামের একজন চিকিৎসক। গত সোমবার রাতের এমন ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ভাইরাল হয়েছে।
জন্মের তিন মাসের মাথায় ক্যান্সারে মা মারা যায় আয়ানের মা। মা মৃত্যুর কয়েক মাস পর শিশুটি অসুস্থ হলে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। তখন আয়ানের বাবা সদ্য স্ত্রী হারা স্বামী মোহাম্মদ হাসান। হাসানের ছেলে হাসপাতালে ভর্তি অবস্থায় পরিচয় হয় শাপলা নামের এক রোগীর আত্মীয়া মেয়ের সাথে, পরিচয়টা কিছু দিনের মধ্যে গড়ায় প্রেমে, এর কয়েক মাস হতে না হতেই তারা বিয়ে করে! আয়ান নিজের মা মৃত্যুর বছর না পুরাতেই পেয়ে যায় সৎমা। বিয়ের কয়েক মাস যেতে না যেতেই ১ বছরের নিষ্পাপ শিশু আয়ানকে পাশবিক নির্যাতন করেন সৎ মা।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, শিশুটিকে দুই হাত ও বাম পা ভাঙা, মাথা ফাটা, শরীরে বেশ আচড়ের রক্তাক্ত দাগ অবস্থায় চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে নিয়ে আসে তার বাবা। তার পুরো শরীর ফুলে গেছে। অর্থোপেডিক ওয়ার্ডে ভর্তির পর শিশুটির হাত, পা ও মাথায় ব্যান্ডেজ করানো হয়। বাবা ডাক্তারদের শিশুর আহত হওয়া নিয়ে বেশ অসঙ্গতি কথাবার্তা বলেন। তিনি একবার বলেন, শিশুটি বিছানা থেকে পড়ে হাত পা ভেঙে গেছে। আবার বলেন, চেয়ার থেকে পড়ে মাথায় ও মুখে আঘাত পেয়েছে। কিন্তু ডাক্তাররা শিশুর অবস্থা দেখেই নিশ্চিত হয় এক বছরের শিশুটির ওপর পাশবিক নির্যাতন হয়েছে। সময় যতই যাচ্ছিলো শিশুটির অবস্থা অবনতির দিকে যাচ্ছিলো। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে শিশুটির হিমোগ্লোবিন খুবই কমে যায়। বিকেল থেকেই বাবাকে বারবার তাগিদ দেওয়া হচ্ছিলো এ নেগেটিভ রক্ত ব্যবস্থা করার জন্য। কিন্তু তার বাবা বেশ দায়সারা। সংশ্লিষ্টদের কাছে বাবার অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়েছে চিকিৎসা দিতেই আগ্রহী নন তিনি। রক্ত ম্যানেজের অজুহাতেই কয়েক ঘন্টা চলে যায়। গভীর রাতে শিশুর শরীর নীল হয়ে যায় রক্তের অভাবে। এ সময় ওই ওয়ার্ডের কর্তব্যরত মেডিক্যাল অফিসার ডা. আফরোজা বাবাকে জরুরি রক্তের কথা বললে তিনি সাফ জানিয়ে দেন, তিনি রক্ত জোগাড় করতে পারবেন না। কিন্তু চিকিৎসক আফরোজা খেয়াল করলেন তা কিছুক্ষণের মধ্যে রক্ত না দিলে শিশুটির মারা যেতে পারে। এ অবস্থায় তার স্মরণে পড়লো তারও রক্তের গ্রুপ এ নেগেটিভ। তিনি দ্রুতই নিজের শরীর থেকে রক্ত দিয়ে শিশুটির শরীরে তা পুশ করেন। এতে শিশুটি যেন প্রাণ ফিরে পেল।
বর্তমানে শিশুটিকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
হাসপাতালের চিকিৎসকরা শিশুটির ওপর আঘাতের বিষয়ে নিশ্চিত হয়েই বাবা ও সৎমাকে জানালে তারা তা অস্বীকার করে। নির্যাতনের বিষয়টি জানাজানি হয়ে পড়ায় তারা স্বামী-স্ত্রী এসে নানা অজুহাতে শিশুটিকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে যেতে উদ্যত হয়। কিন্তু দায়িত্বশীল চিকিৎসক মিশু তালুকদার বাবা ও সৎমার মতলব বুঝতে পেরে সাথে সাথেই হাসপাতালের উপ পরিচালক ডা. আশরাফুল করিমকে পুরো বিষয়টি অবহিত করেন। কতৃপক্ষ ডবলমুরিং থানাকে অবহিত করলে পুলিশ এসে বাবা ও সৎমায়ের সাথে কথা বলে। শিশুটি সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত পুলিশ বাবা ও সৎমাকে নজরদারিতে রাখবে বলে জানায়।