সেন্টমার্টিনের প্লাস্টিক বর্জ্য পরিষ্কারে যাচ্ছে টিওবি

42

দেশের অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ সেন্টমার্টিন দ্বীপ থেকে প্লাস্টিক এবং বিভিন্ন ধরনের অপচনশীল বর্জ্য অপসারণে যাচ্ছে ট্রাভেলার্স অব বাংলাদেশ (টিওবি)। আগামী অক্টোবর মাসের ৪ ও ৫ তারিখ দু’দিনব্যাপী দ্বীপ থেকে এসব বর্জ্য সংগ্রহ এবং অপসারণে কাজ করবে ভ্রমণ বিষয়ক ফেসবুকভিত্তিক গ্রুপ টিওবি’র একদল স্বেচ্ছাসেবী।
সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে এ পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার জন্য ইতোমধ্যে চূড়ান্ত করা হয়েছে ২৫ সদস্যের একটি দল। তবে টিওবি সংশ্লিষ্টদের অনুমান, শেষ পর্যন্ত স্বেচ্ছাসেবকের সংখ্যা ৫০ ছাড়িতে যেতে পারে। এর আগেও গত বছরও টিওবি’র উদ্যোগে এমন পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালিত হয়। সেবার ৫৪ জন পর্যটক এবং স্বেচ্ছাসেবক দু’দিনে সেন্টমার্টিন এবং ছেড়াদ্বীপ থেকে ১৪০ কেজি অপচনশীল বর্জ্য সংগ্রহ এবং অপসারণ করে। গতবার একটি ট্রলারে এসব বর্জ্য টেকনাফে মূল ভূখন্ডে এনে ডাম্পিং করা হয়। তবে পর্যটক মৌসুম এবং জাহাজ চলাচল শুরুর আগেই এবার আরও বেশি পরিমাণ বর্জ্য অপসারণের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে টিওবি। এর জন্য দু’টি ট্রলারে বর্জ্য টেকনাফে নিয়ে আসার পরিকল্পনা রয়েছে সংগঠকদের। খবর বাংলানিউজের
এদিকে ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এ কমিউনিটি গ্রুপ ইতোমধ্যে দেশের সর্ববৃহৎ এবং জনপ্রিয় ভ্রমণ বা ট্রাভেল বিষয়ক গ্রুপে পরিণত হয়েছে। প্রায় ১০ লাখ সদস্যের কাছে ভ্রমণ বিষয়ক যেকোনো তথ্যের নির্ভরযোগ্য প্লাটফর্মে পরিণত হয়েছে গ্রুপটি। এছাড়াও সাধারণ মানুষদের মধ্যে ভ্রমণের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টিতে, পর্যটকদের সচেতন করতে এবং পর্যটক ও পর্যটন খাত সংশ্লিষ্টদের সেতুবন্ধন তৈরিতে দারুণভাবে কাজ করছে টিওবি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র এবং বর্তমানে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত গ্রুপটির প্রতিষ্ঠাতা রাহাত খান বলেন, ২০০৮ সালে ইন্টারনেটের ব্যবহার সেভাবে ছিল না। ফেসবুকও নতুন নতুন এসেছিল। আমরা বন্ধুরা মিলে প্রায়ই ঘুরতে যেতাম বা যেতে চাইতাম। কিন্তু ভ্রমণ বিষয়ক বিভিন্ন দরকারি তথ্য গুগল বা ইন্টারনেটে পেতাম না। মূলত তথ্যের সেই চাহিদা থেকেই এই গ্রুপটি খোলা হয়। গ্রুপটা যে আজকের এমন অবস্থানে আসবে শুরুতে এভাবে ভাবিনি। প্রথম মাসে আমাদের সদস্য ছিল মাত্র ৩০ জন। আমাদের শুধু পরিকল্পনা ছিল ভ্রমণ বিষয়ক যে তথ্যই পাওয়া যায় সেগুলোকে এক জায়গায় জমা করে রাখা, যেন সবাই তা জানতে পারে।
তবে গ্রুপটির এমন সফলতায় গ্রুপ সদস্যদের আসল কৃতিত্ব বলে মনে করেন রাহাত খান। তিনি বলেন, আসলে গ্রুপের সদস্যরাই ভ্রমণ করেন এবং অন্য সদস্যদের জন্যেই অভিজ্ঞতা বিনিময়ে ভ্রমণ কাহিনী লেখেন। কারও কিছু জানার থাকলে সদস্যরাই পোস্ট করেন। আবার সেগুলোর উত্তর অন্য সদস্যরাই দেন। আমাদের কাজ হচ্ছে শুধু পোস্ট বুঝে এপ্রুভ করা। এটি করতেই হিমশিম খেতে হয়। প্রতিদিন হাজারের ওপর পোস্ট আসে গ্রুপে। ১৫ জনের একটি মনিটরিং এসব পোস্ট সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাশ্রমে যাচাই-বাছাই এর কাজ করে। আমাদের মূল চ্যালেঞ্জটা আসলে এখানে।
সেন্টমার্টিনের মতো প্রতিবছর দেশের ৬-৭টি পর্যটন কেন্দ্রে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করা হয় টিওবি’র উদ্যোগে। তবে স্বেচ্ছাশ্রমের এসব কাজেও আছে তিক্ত অভিজ্ঞতা। রাহাত খান বলেন, আমরা যে এসব উদ্যোগ নেই এখনও অনেক মানুষ আছে শুনলে আমাদের পাগল বলে। যেখানে যাচ্ছি সেখানকার স্থানীয় প্রশাসন বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সেভাবে সাড়া পাই না। তবুও আমরা কাজ করে যাচ্ছি এবং করব।
ভালো ভ্রমণ অভিজ্ঞতা পেতে পর্যটকদের আরও সচেতন হতে হবে বলে মনে করেন রাহাত খান। তিনি বলেন, আমাদের দেশের মানুষের মাঝে ভ্রমণে আগ্রহ বাড়ছে কিন্তু তাদের মাঝে সচেতনতা এখনও সেভাবে নেই। কোথাও বেড়াতে গিয়ে আমরা যদি পরিবেশ দূষিত করি তাহলে কিছুদিন পর আমরাই আবার সেখানে গিয়ে মানসম্পন্ন পর্যটন অভিজ্ঞতা পাব না। ট্রাভেলস এথিক্স বলে কিছু জিনিস আছে। আমরা এখন সেগুলোকেও প্রোমোট করার জন্য কাজ করছি।
একই সঙ্গে অনলাইন প্লাটফর্মের মাধ্যমে পর্যটন খাতে ব্যবসা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই এই খাতের জন্য এখনই সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়নের পরামর্শ দেন এ ট্রাভেলার। রাহাত বলেন, পর্যটন বা ট্রাভেলিংয়ের একটি বড় অংশ এখন হচ্ছে অনলাইন প্লাটফর্ম। আমরা নিজেরাও টিওবি’তে একটি প্লাটফর্ম হিসেবে পরিচিতি দিতে পছন্দ করি। এসব প্লাটফর্ম তথা অনলাইনের জন্য এখনই একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করা দরকার। তাহলে এটিকে সুনির্দিষ্ট পন্থায় নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। নইলে এখন বলতে গেলে যে যেভাবে পারছে কাজ করছে। এতে অনেক নেতিবাচক অভিজ্ঞতাও হচ্ছে পর্যটকদের। এগুলো কাটিয়ে উঠতে হবে।