সেনাদের হাতে ‘কঠিন’ দায়িত্ব : ড. কামাল

47

ভোটের মাঠে সেনা নামায় সন্তুষ্ট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষনেতা কামাল হোসেন আশা করেছেন- এখন দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের ‘পরিবেশ’ সৃষ্টি হবে। ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য গতকাল সোমবার সারাদেশে সেনা মোতায়েনের পর এক সংবাদ সম্মেলনে এই আশাবাদ প্রকাশ করেন তিনি।
কামাল বলেন, ‘আজকে সেনাবাহিনী এসেছে। দেশে নিরাপদ পরিবেশে অবাধ সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে জাতি তাদের কাছে অতীতের মতো গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা প্রত্যাশা করে। সারাদেশে নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টির কঠিন দায়িত্ব সেনাবাহিনীর উপর ন্যস্ত। আমরা আশা প্রকাশ করছি যে, এই মুহুর্তে দেশবাসীর পাশে দাঁড়াবে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী। অতীতে তারা যেভাবে একটা নিরপেক্ষ ও কার্যকর ভূমিকা রেখেছে। সেই ঐতিহ্যকে তারা ধরে রাখবে’। খবর বিডিনিউজের
বিএনপিকে সঙ্গে নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গড়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিপক্ষে ভোটের লড়াইয়ে নামা কামাল আরও আগে সেনা মোতায়েনের দাবি জানিয়ে আসছিলেন, সেই সঙ্গে তাদের বিচারিক ক্ষমতা দেওয়ার দাবিও জানিয়েছিলেন। তফসিল ঘোষণার পরও পুলিশের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তার-হয়রানির অভিযোগ করে আসছিলেন বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। তারা আশা করছিলেন, সেনাবাহিনী নামলে
অবস্থার পরিবর্তন ঘটবে।
গতকাল সোমবারও বিভিন্ন স্থানে সহিংসতার বিষয়টি তুলে ধরা হলে কামাল বলেন, ‘এখনও কিছু ঘটনা ঘটছে, এটা একদমই অপ্রত্যাশিত। সেনাবাহিনীর একটা অতীতে ইতিহাস আছে। আমরা আশা করি, তারা নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার ব্যাপারে ভূমিকা রেখেছে’।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর; তিনি দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়সহ উত্তরাঞ্চলে দু’দিন প্রচার চালিয়ে সোমবারই ঢাকায় ফেরেন। মাঠ পর্যায়ের পরিস্থিতি সম্পর্কে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে ফখরুল বলেন, ‘সরকার ও নির্বাচন কমিশন যৌথভাবে এই নির্বাচনকে একটা প্রহসনে পরিণত করেছে। মানুষ চিন্তাই করতে পারে না যে এই ধরনের একটা নির্বাচন হতে পারে। সেই দিকে তারা নির্বাচনকে নিয়ে গেছে, নির্বাচনকে একটা তামাশায় পরিণত করেছে’।
সংবাদ সম্মেলনে কামালের লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান নাগরিক ঐক্যের আহব্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। এতে বলা হয়, নির্বাচনের মাঠে ‘একতরফা সশস্ত্র হামলার’ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগের পাহাড় জমলেও কার্যকর উদ্যোগের অভাবে পরিস্থিতির কাঙ্খিত উন্নতি ঘটেনি। নির্বাচন কমিশন কোনো মতেই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টির অন্তরায় হিসেবে চলমান নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির দায় এড়াতে পারে না। সব রকমের সাংবিধানিক সুযোগ ও ক্ষমতা থাকা সত্তে¡ও তারা কেন সক্ষম হচ্ছে না, সে প্রশ্ন তাড়া করছে সচেতন দেশবাসীকে’।
তফসিল ঘোষণার পর থেকে এই পর্যন্ত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রায় ৭ হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়। বিভিন্ন স্থানে পুলিশের উপস্থিতিতে পরিস্থিতির অবনতি ঘটানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন কামাল।
বিদেশি পর্যবেক্ষকদের ভিসা না দেওয়ার অভিযোগ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের আগে দেশ-বিদেশি সম্ভাব্য পর্যবেক্ষকদের জন্য সরকার কর্তৃক সৃষ্ট প্রতিবন্ধকতা অবিলম্বে দূর করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে আহব্বান জানাচ্ছি’।
ঢাকার ফকিরাপুলের জামান টাওয়ারে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে জাফরুল্লাহ চৌধুরী, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি আবদুল কাদের সিদ্দিকী, গণফোরামের নেতা জগলুল হায়দার আফ্রিক, আ ও ম শফিকউল্যাহ, মোশতাক আহমেদ, জাকারিয়া চৌধুরী, বিকল্প ধারার নুরুল আমিন ব্যাপারী, শাহ আহমেদ বাদল, ঐক্যফ্রন্টের মিডিয়া সমন্বয়ক লতিফুল বারী হামিম, জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু উপস্থিত ছিলেন।