সুশাসনে ফিরছে দেশের দুই শেয়ারবাজার

17

সপ্তাহের শেষ দিন সূচক এবং লেনদেন কমেছে দেশের দুই পুঁজিবাজারে। তারপরও এই বাজার নিয়ে প্রচন্ড আশাবাদী বিনিয়োগকারীরা। তারা মনে করছেন, ১০ বছর পর শেয়ারবাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠা শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) আল্টিমেটাম অনুসারে ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে ন্যূনতম ২ শতাংশ শেয়ার ধারণে ব্যর্থ হওয়ায় পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ১০ কোম্পানির ১৭ পরিচালককে পদ হারাতে হচ্ছে। এসব পরিচালককে অপসারণ করতে ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত আদেশে সই করেছেন বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম। আগামি রবিবার (২০ সেপ্টেম্বর) এ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি হতে পারে।
এর আগে গত ২ জুলাই তালিকাভুক্ত ২২ কোম্পানির ৬১ জন পরিচালককে ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে ন্যূনতম ২ শতাংশ শেয়ার ধারণে আল্টিমেটাম দেয় বিএসইসি। কমিশনের আল্টিমেটাম পাওয়ার পর ২৫ জন পরিচালক ২ শতাংশ শেয়ার ধারণ করেছেন। ১৯ জন পরিচালক পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। আর ১৭ জন পরিচালক ২ শতাংশ শেয়ার ধারণ কিংবা পর্ষদ থেকে পদত্যাগ কোনোটাই করেননি। এখন এই পরিচালকদের অপসারণে উদ্যোগ নিলো বিএসইসি।
এ প্রসঙ্গে ডিএসই ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাবেক সভাপতি আহমেদ রশিদ লালী বলেন, ‘যে কোনো বাজারে সুশাসন থাকলে, সেই বাজার ঘুরে দাঁড়াবেই। বর্তমান কমিশন বাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এখন আস্থা ফিরে এসেছে। এরই মধ্যে বড় বিনিয়োগকারী ও ছোট বিনিয়োগকারীরা বাজারে আসতে শুরু করেছে, যার প্রভাব পড়েছে সার্বিক বাজারের ওপর।
এদিকে গত আগস্ট মাসে ‘বিশ্বসেরা’ খেতাব পেয়েছে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার। ওই মাসে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার বিশ্বের মধ্যে সব থেকে ভালো পারফরম্যান্স করেছে। পারফরম্যান্সে শুধু শীর্ষ স্থানটিই দখল করেনি বাংলাদেশের পুঁজিবাজার, দ্বিতীয় স্থানে থাকা ভিয়েতনামের থেকে অনেকে এগিয়ে রয়েছে। বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান ব্র্যাক ইপিএলের প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
এদিকে বিগত ১২ সপ্তাহের মতোই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার মধ্য দিয়ে গত সপ্তাহ পার করেছে দেশের শেয়ারবাজার। গত সপ্তাহজুড়ে লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। ফলে বেড়েছে সবক’টি মূল্য সূচক। সেই সঙ্গে বেড়েছে বাজার মূলধনও। এর মাধ্যমে টানা ১৩ সপ্তাহ ঊর্ধ্বমুখী থাকলো দেশের শেয়ারবাজার।
বাজারের তথ্য বলছে, গত সপ্তাহজুড়ে সূচক ও বাজার মূলধন বাড়ার পাশাপাশি লেনদেনের পরিমাণও বেড়েছে। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গড়ে প্রতিদিন হাজার কোটি টাকার ওপরে লেনদেন হয়েছে। গত সপ্তাহে বাজারটিতে গড় লেনদেন বেড়েছে ৬ দশমিক ৪৩ শতাংশ। বিপরীতে ডিএসই’র প্রধান সূচক বেড়েছে প্রায় দুই শতাংশ। গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ৬ হাজার ৬৯১ কোটি টাকা।
সপ্তাহ শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৮৫ হাজার ৬৩২ কোটি টাকা, যা তার আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৩ লাখ ৭৮ হাজার ৯৪১ কোটি টাকা।
তথ্য বলছে, সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ১২৭ কোটি ৬ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ১ হাজার ৫৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন বেড়েছে ৬৮ কোটি ১১ লাখ টাকা বা ৬ দশমিক ৪৩ শতাংশ। আর গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ৫ হাজার ৬৩৫ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয় ৫ হাজার ২৯৪ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। সে হিসাবে মোট লেনদেন বেড়েছে ৩৪০ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। খবর বাংলা ট্রিবিউনের
অবশ্য গত বৃহস্পতিবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের চেয়ে ১২ দশমিক ১৫ পয়েন্ট বা দশমিক ২৪ শতাংশ কমে পাঁচ হাজার ১০৪ দশমিক ৬৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
এদিকে, গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসই’র প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ৯৩ দশমিক ৩৬ পয়েন্ট বা এক দশমিক ৮৬ শতাংশ। এর মাধ্যমে টানা ১৩ সপ্তাহ সূচকটি বাড়লো। ১৩ সপ্তাহের টানা এই উত্থানে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক বেড়েছে এক হাজার ১৪১ পয়েন্ট।
প্রধান মূল্য সূচকের পাশাপাশি টানা ১৩ সপ্তাহ বেড়েছে ডিএসইর শরিয়াহ সূচক। শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত এ সূচকটি গত সপ্তাহে বেড়েছে ৪ দশমিক ৫৩ পয়েন্ট। এর মাধ্যমে টানা ১৩ সপ্তাহের উত্থানে সূচকটি বাড়লো ২৪৫ পয়েন্ট।
বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচকটি গত সপ্তাহে বেড়েছে ২১ দশমিক ৩৭ পয়েন্ট। এর মাধ্যমে এই সূচকটি টানা ৯ সপ্তাহ বাড়লো।
এদিকে, গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২১২টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। দাম কমেছে ১১৯ টির। আর ২৮টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।