সমাজে নারী-পুরুষের সমান অবদান রয়েছে

43

‘রিং দ্যা বেল ফর জেন্ডার ইক্যুয়েলিটি’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচেনায় বক্তারা বলেছেন, সমাজে নারী ও পুরুষের সমান অবদান রয়েছে। একে অপরের পরিপূরক। কাউকে ছোট করে দেখার অবকাশ নাই। তারা বলেন, নারীরা এখন আর ঘরে বসে নেই। প্রতিটি সেক্টরে কাজ করে যাচ্ছেন। দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখছেন। উচ্চ পদেও আসিন হয়েছেন।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) এ গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য বেগম সাবিহা মুসা। সঞ্চালনা করেন চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম সাইফুর রহমান মজুমদার।
আলোচনায় সানশাইন গ্রামার স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ সাফিয়া গাজী রহমান বলেন, আমি একজন নারী। আমার জীবন নিজের জন্য নয়। এ জীবন দেশ, মানুষ ও সমাজের জন্য। আমার ক্যান্সার ধরা পড়ার পর সিঙ্গাপুরে যাই। ডাক্তার বললেন, কেমো দিলে চোখ খুলতে পারব না, কষ্ট পাবো। ১০ দিনে হাসপাতাল ছেড়েছিলাম। যতদিন বেঁচে আছি মানুষের কল্যাণে কাজ করে যেতে চাই।
সাফিয়া গাজী রহমান বলেন, একজন নারী কারও সন্তান, কারও মা, কারও স্ত্রী। যে নারী চাকরি করে না, ঘরেও সে অবদান রাখে। তার মধ্যে অনেক গুণাবলি আছে।
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর শাহেদা ইসলাম বলেন, মনোজগত ও বোধের জায়গা উন্নত করতে হবে। নারীও মানুষ- এ সচেতনতা আনতে হবে। সব সাসটেইনেবল হবে যদি সবাই শিক্ষিত হয়। এ শিক্ষা মানে সনদ নয়, আত্মোপলব্ধি। চেতনার জগত উন্নত করার প্রথম ধাপ পরিবার।
তিনি বলেন, অনেক প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে এ জায়গায় এসেছি। এ প্রতিবন্ধকতার বেশিরভাগই মানসিক, যা জয় করে এগিয়ে যেতে হবে।
তিনি বলেন, প্রতিটি নারীকে সুশিক্ষিত হতে হবে। যাতে দেশ ও জাতির জন্য কিছু করতে পারে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি বাহ্যিক জ্ঞানও অর্জন করতে হবে।
বাংলাদেশ রাবার বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. নাজনীন কাউসার চৌধুরী বলেন, শিক্ষিত নারীরা অর্থনৈতিক কাজে পিছিয়ে আছেন। গ্রামের গরিব নারীরা অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। পরনির্ভরশীল হলে ক্ষমতায়ন হবে না। গৃহিণীরা নিজেদের ছোট ভাবলে হবে না। তার কাজটা আরেকজন করলে টাকা খরচ হতো। আপনার বেড়ে ওঠা ও পড়াশোনায় রাষ্ট্রের বিনিয়োগ আছে। তা কাজের মাধ্যমে রিটার্ন দিতে হবে।
তিনি বলেন, আমি লক্ষ্য করেছি মেয়েদের সৌন্দর্য নিয়ে ব্যবসা হচ্ছে। বিশেষ করে বিজ্ঞাপনে। একে নিরুৎসাহিত করতে হবে।
তিনি বলেন, নারীকে পণ্য বানানো যাবে না। নারীদের দেশের সম্পদ হতে হবে। যাতে তারা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।
শিক্ষাবিদ দিলরুবা আহমেদ বলেন, নারীকে বুঝতে হবে তার মধ্যে ‘পাওয়ার’ আছে, তা তুলে ধরতে হবে। নারী দুর্বল হবে কেন? তাদের মধ্যে শক্তি আছে। নারীরা সৎ, চেয়ারে বসালে সবাইকে নিয়ে কাজ করতে পারে। এখন আমরা নারীর ক্ষমতায়নের কথা বলি না, বলি ইক্যুয়েলিটির কথা। নারী-পুরুষ হাতে হাত ধরে এগোতে হবে।
তিনি বলেন, নারীরা কোনো অংশেই কম নয়। কাজও কম করে না। পুরুষের মতই কাজ করে যাচ্ছে।
ব্যাংকার মুনিজা বশির বলেন, এখনো সমাজে কন্যা সন্তান জন্মালে পরিবারের সদস্যরা অখুশী হন। সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
চট্টগ্রাম উইম্যান চেম্বারের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আবিদা সুলতানা বলেছেন, নারী পুরুষের অবদান ছিল বলে সমাজ এতটা এগিয়েছে। নারীদের ঘরের ভেতর আটকে রাখা হয়েছিল। ক্রমে তারা বেরিয়ে আসছেন। প্লেন চালানো থেকে সব কাজে দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছেন। নারী সম্মিলিতভাবে এগিয়ে গেলে কোনো বাধাই বাধা থাকবে না।
চট্টগ্রাম উইম্যান চেম্বারের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট রোকসানা আকতার চৌধুরী রুহী বলেন, নারীরা এক সময় পিছিয়ে ছিল কিন্তু দিন পাল্টেছে। এখন তারা সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তাদের পিছনে ফেলার কোনো সুযোগ নাই।
ভাইস প্রেসিডেন্ট ডা. মুনাল মাহবুব বলেন, একদিন আমরা পুরুষ দিবস উদযাপন করবো। মাতৃত্বকালীন ছুটি থাকলে কেন পিতৃত্বকালীন ছুটি থাকবে না। ছয় মাস মাতৃত্বকালীন ছুটির কারণে মেয়েরা কর্মক্ষেত্রে ছয় মাস পিছিয়ে যাচ্ছেন বলে মনে করি। এর বিকল্প হিসেবে কেন আমরা নারীবান্ধব কর্ম পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারছি না।
তিনি বলেন, সিএসইর অনলাইন ট্রেডিং সুবিধা নিতে পারেন নারীরা। এক্ষেত্রে ঘরে বসে ট্রেডিং করতে পারবেন।
ডিজাইনার আইভী হাসান বলেন, নারীরা এখনো নিরাপদ নয়। এখনো শিশু থেকে শুরু করে নারীরা ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন। নারী মানে ভোগ্যপণ্য- এ ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
সাবেক কাউন্সিলর রেখা আলম চৌধুরী বলেন, নারীরা সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। কেউ কেউ নারীকে টেনে ধরার চেষ্টা করেন। কিন্তু এসব বাধা অতিক্রম করে সামনের দিকে যেতে হবে।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম সাইফুর রহমান মজুমদার বলেন, সমতার ভিত্তিতে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পারলে জাতীয় অগ্রগতি ত্বরান্বিত হবে।
তিনি বলেন, আমাদের উদ্দেশ্য বিশ্বব্যাপী যে স্লোগান ‘থিংক ইক্যুয়েল, বিল্ড স্মার্ট, ইনোভেট ফর চেঞ্জ’ থেকে যেন আমরা পিছিয়ে না পড়ি। এই থিম আমাদের অর্থনৈতিক জাগরণের জন্য খুবই প্রাসঙ্গিক। ব্যবসার যে অগ্রগতি ও প্রতিযোগিতা তাতে ইনোভেশনের বিকল্প নেই। ব্যবসায় টিকে থাকা ও সার্ভিস প্রোভাইডের মাধ্যমে জনগণকে সর্বোচ্চ সেবা দিতে হবে।
তিনি বলেন, সাসটেইনেবল গোলসের অন্যতম হচ্ছে জেন্ডার ইক্যুয়েলিটি। এর জন্য সচেতনতা তৈরি করতে হবে যার যার অবস্থান থেকে। সিদ্ধান্ত গ্রহণে নেতৃত্বের সমান সুযোগ তৈরি করতে হবে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর ভাষণে উজ্জীবিত হয়ে বাঙালি জাতি নয় মাস যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছেন। দেশ স্বাধীন হয়েছে বলেই নারীরা এগিয়ে যাচ্ছেন।
অনুষ্ঠানে শিক্ষাবিদ, নারী উদ্যোক্তা, সংগঠকসহ বিভিন্ন পেশার শতাধিক প্রতিনিধি এ মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন।