শোকজ নোটিশ পাচ্ছেন আ.লীগের দেড়শ নেতা

29

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে যারা প্রার্থী হয়েছেন কিংবা দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে কাজ করেছেন, এমন দেড়শ জনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক কাদের।
গতকাল শনিবার দলের ধানমন্ডি কার্যালয়ে যুগ্ম সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে যারা বিদ্রোহী ছিল, তাদের শোকজ করার সিদ্ধান্ত আগে থেকেই ছিল। আজকে (শনিবার) সেটা বাস্তবায়নের প্রসেস কীভাবে দ্রুত করা যায়, সেটা আলোচনা করেছি। আগামীকাল (আজ) থেকে ১৫০ এর মতো শোকজ নোটিস ইস্যু হবে। শোকজের জবাবের জন্য তিন সপ্তাহ সময় দেওয়া হবে। বিদ্রোহী প্রার্থীর মদদদাতা হিসেবে মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ এসেছিল। খবর বিডিনিউজের
তারা নোটিস পাচ্ছেন কি না- জানতে চাইলে কাদের বলেন, এমপি-মন্ত্রী যারা মদদদাতা, তারাও শোকজ পাবে। মদদদাতাদের মধ্যে কেন্দ্রীয় নেতাও থাকতে পারেন। যাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা ও মদদ দেওয়ার অভিযোগ আছে, তারা সবাই শোকজ পাবেন ।
জাপা দুর্বল হলে আ. লীগের করার কিছু নেই :
জাতীয় পার্টির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব নিয়ে আবারও প্রশ্নের মুখে পড়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, মহাজোট শরিক ওই দলটির অভ্যন্তরীণ বিষয়ে তাদের করার কিছু নেই।
এইচ এম এরশাদের মৃত্যুর পর তার স্ত্রী রওশন এরশাদ ও ভাই জি এম কাদেরের দ্ব›েদ্ব আবারও ভাঙনের মুখে পড়েছে সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি।
গত তিনটি নির্বাচন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের হয়ে অংশ নেওয়া জাতীয় পার্টিতে দ্বন্দ্ব নিয়ে বারবারই সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়ছেন ওবায়দুল কাদের।
সংবাদ সম্মেলনে আবারও জাতীয় পার্টি নিয়ে তাকে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা। জবাবে তিনি বলেন, নিজেদের দ্বন্দ্বে জাতীয় পার্টি দুর্বল হয়ে গেলে এখানে তো আমাদের কিছু করার থাকে না।
জাতীয় পার্টিতে বিবাদমান দুই পক্ষই আওয়ামী লীগের দিকে তাকিয়ে আছে- এমনটা বলা হলে ওবায়দুল কাদের বলেন, জাতীয় পার্টি তো আওয়ামী লীগের কোনো শাখা সংগঠন নয় যে এটা আওয়ামী লীগকে দেখতে হবে। এটা তাদের বিষয়, তারাই দেখবে। এখানে প্রধানমন্ত্রীর কোনো দায়িত্ব নেই।
আওয়ামী লীগের সঙ্গে মহাজোট গড়ে সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া জাতীয় পার্টিকে ‘গৃহপালিত বিরোধী দল’ বলে আসছেন বিএনপির নেতারা।
দশম সংসদে রওশন বিরোধীদলীয় নেতা থাকাকালে সংসদে বক্তব্যে তার দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ চেয়েছিলেন।
এবার সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা ও দলের চেয়ারম্যান পদ নিয়ে কাদের-রওশন দ্ব›দ্ব নিয়ে বিএনপি নেতারা বলছেন, এক্ষেত্রেও শেখ হাসিনা যা চাইবেন, তাই হবে।
তবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক তা নাকচ করে বলেন, জাতীয় পার্টির অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে মাথা ঘামানোর আমাদের তো দরকার নেই। জাতীয় পার্টিতে কী হয়েছে, সেটা আমাদের দেখার বিষয় নয়।
এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের প্রত্যাশা জানিয়ে তিনি বলেন, এখন জাতীয় পার্টি বিরোধী দল। সত্যিকার অর্থে তারা বিরোধী দল হিসেবে শক্তিশালী থাকুক, এটা আমরাও চাই। আমরা চাই জাতীয় পার্টির যে ব্যাপারগুলো, এটা তারা নিজেরাই মীমাংসা করুক।
হাওয়া ভবনের মতো লুটপাট নেই :
দুর্নীতি নির্মূল না হলেও এখন তার সঙ্গে মন্ত্রী-এমপিদের সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবি করেছেন সড়ক পরিবহনমন্ত্রী কাদের। রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের আবাসন প্রকল্পে বালিশ কেনা, ফরিদপুর মেডিকেলের পর্দা কেনা নিয়ে বিএনপি নেতারা দাবি করেছেন, সরকারের দুর্নীতি ও লুটপাট এখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে।
তার জবাবে কাদের বলেন, এ ধরনের ছিঁচকে কাজগুলো যারা করে, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা কিন্তু কোনো এমপি কিংবা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী নন।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলের হাওয়া ভবনকেন্দ্রিক দুর্নীতির বিষয়গুলো তুলে ধরে তিনি বলেন, এখানে তো হাওয়া ভবনের মতো লুটপাটের বিষয় নেই। লুটপাটের কোনো ভবন এই সরকারের আমলে নেই। বালিশ আর পর্দার সঙ্গে তো হাওয়া ভবনের লুটপাটের বিষয় মেলালে চলবে না।
পুলিশকে লক্ষ্য করে সাম্প্রতিক হাতবোমা হামলা নিয়ে কাদের বলেন, জঙ্গি তৎপরতা একেবারে থেমে গেছে, এমন দাবি আমরা কখনও করব না।
এগুলো বিচ্ছিন্ন-বিক্ষিপ্তভাবে হলেও ওরা (জঙ্গি) হয়ত টেস্ট কেস করছে বড় ধরনের কোনো ঘটনা ঘটানোর জন্য। ওরা বড় ধরনের কোনো প্রস্তুতি নিচ্ছে, এমন আশঙ্কা করছি। কাজেই আমরা সতর্ক আছি।
সংবাদ সম্মেলনে কাদেরের সঙ্গে ছিলেন যুগ্ম সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম, এনামুল হক শামীম, মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, বি এম মোজাম্মেল হক ও উপ দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া।