শঙ্খনদীর কবি কমরুদ্দিন আহমদ ‘চট্টগ্রামের কবি-সাহিত্যিক’ একপ্রস্থ ‘ব্যক্তি-গবেষণা’

158

লেখালেখির ধরন অনুযায়ী সাহিত্যচর্চার ব্যাপারটি নানা শাখা-প্রশাখায় বিভক্ত হয়েছে। এ কারণে লেখকদের সম্বোধনের ক্ষেত্রেও কবি, প্রাবন্ধিক, রম্যলেখক, কলামিস্ট, গবেষক-এ ধরনের নানা উপাধি যুক্ত হয়ে যায়। সাহিত্যের শাখা বলতে বুঝাতে চাইছি, কেউ কবিতা লিখলে বা চর্চা করলে আমরা তার নামের আগে ‘কবি’ উপাধি যুক্ত করি, প্রবন্ধ লিখলে তার পরিচয় দিচ্ছি ‘প্রাবন্ধিক অমুক’ হিসেবে। সাহিত্যচর্চার ক্ষেত্রে প্রতিটি শাখাই গুরুত্বপূর্ণ, কোনো লেখক সাহিত্যের কোনো একটি শাখায় বিচরণ করেন আবার কেউ সাহিত্যের নানা শাখায় বিচরণ করে বহুমুখী প্রতিভার পরিচয় দেন।
লেখালেখির জগতে প্রবন্ধ হলো মননশীল সাহিত্যের ধারা। এ সাহিত্য সৃষ্টি অনেক পরিশ্রমলব্ধ এবং গবেষণার বিষয়। প্রবন্ধ লেখার ক্ষেত্রে বিষয় নির্ধারণ যেমন জটিল, সে বিষয়টি পাঠকের সামনে সঠিকভাবে ফুটিয়ে তোলার কাজটিও কঠিন। তাই প্রবন্ধ সাহিত্যকে সাহিত্যচর্চার ক্ষেত্রে আলাদা মর্যাদা দেওয়া হয়।
চট্টগ্রামের কৃতী লেখক, শঙ্খনদীর কবি কমরুদ্দিন আহমদ এবার সে ধরনের একটি কঠিন কাজ সম্পন্ন করেছেন। তিনি ‘চট্টগ্রামের কবি সাহিত্যক’ নিয়ে বই রচনা করে এ অঞ্চলের কবি-সাহিত্যিকদের নিয়ে এক ধরনের ‘গবেষণাই’ সম্পন্ন করেছেন। কোনো ব্যক্তিকে নিয়ে মানসম্মতভাবে প্রবন্ধ লিখতে হলে সেই ব্যক্তির জীবনাচরণ ও মনন নিয়ে দীর্ঘ গবেষণার প্রয়োজন পড়ে। কবি কমরুদ্দিন সেই কাজটি সম্পন্ন করেছেন। এবার অমর একুশে বইমেলায় কমরুদ্দিন আহমদের বই ‘চট্টগ্রামের কবি সাহিত্যক’ প্রকাশিত হয়েছে।
বইটিতে কবি ও প্রাবন্ধিক কমরুদ্দিন আহমদ এ অঞ্চলের শ্রেষ্ঠ লেখকদের নিয়ে প্রবন্ধ রচনা করে তাদের সৃষ্টিশীলতা ও মননকে পাঠকের সামনে অসাধারণভাবে তুলে ধরেছেন। বইটিতে এ অঞ্চলের বারোজন কৃতী লেখকের সাহিত্যকর্মের সন্ধান করেছেন, তাদেরকে অন্যরকম আবেগে পাঠকের সামনে উপস্থাপন করেছেন।
কমরুদ্দিন আহমদের বইয়ে উঠে এসেছে রবীন্দ্র গবেষক অধ্যক্ষ যোগেশ চন্দ্র সিংহ, রম্য কথাসাহিত্যিক আসহাব উদ্দিন আহমদ, ড. আবদুল করিম, আলাউদ্দিন আল আজাদ, আহমদ ছফা, অধ্যক্ষ মোহাম্মদ হোসেন খান, ড. মনিরুজ্জামান, কবি ফাউজুল কবির, ময়ূখ চৌধুরী, হরিশংকর জলদাস, কবি ওমর কায়সার ও ড. আজাদ বুলবুলের সৃষ্টিকর্মের নৈপুণ্য।
বইটি প্রসঙ্গে কবি কমরুদ্দিন আহমদ বলেন, ‘চট্টগ্রামের কবি-সাহিত্যিক বলতে এ অঞ্চলের সব কবি-সাহিত্যিককে বুঝাইনি। এ গ্রন্থে নির্দিষ্ট ক’য়জন গুরুত্বপূর্ণ লেখক স্থান পেয়েছে যারা স্ব স্ব ক্ষেত্রে বিশিষ্ট। বাংলা সাহিত্যের সকল চট্টগ্রামী লেখককে নিয়ে গ্রন্থটি তৈরি করতে পারলে এবং প্রাচীন-মধ্য-আধুনিক যুগে সবাইকে স্থান দিতে পারলে আমার ভালো লাগতো। কিন্তু তা সম্ভব শুধু সাহিত্যের ইতিহাস রচনায়। প্রবন্ধগ্রন্থে কাজটা প্রায় অসম্ভব।’
এবার লেখক সম্পর্কে একটু বলি কমরুদ্দিন আহমদ একাধারে কবি, প্রাবন্ধিক, অধ্যাপক, সাংবাদিক, ছড়াকার, গীতিকার, সুরকার এবং গবেষক। ঝর্না, খাল, নদী, পাহাড়, সমুদ্রের মিতালীতে সমৃদ্ধ প্রকৃতির নন্দন আলয় বাঁশখালী উপজেলার পুকুরিয়া ইউনিয়নের চাঁদপুর গ্রামে তার জন্ম। প্র-পিতামহ জমিদার শেখ আশরফ আলী, পিতামহ মাস্টার ছালেহ আহমদ, পিতা মাস্টার শামছুদ্দিন আহমদ। পিতাই তার প্রথম শিক্ষাগুরু। তিনি ১৯৮৭ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হতে বাংলা সাহিত্যে অনার্সসহ এম এ ডিগ্রি অর্জন করেন। পেশা হিসেবে শিক্ষকতাকে বেছে নেন পারিবারিক ঐতিহ্য-সূত্রে। মাধ্যমিক স্কুল, মাদরাসা, উচ্চ-মাধ্যমিক কলেজসহ বেশকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। পরে বাঁশখালী ডিগ্রি কলেজে ১৯৯২ সালে যোগদান করে দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে অধ্যাপনা করছেন। বর্তমানে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন।
১৯৯৫ সাল থেকে চট্টগ্রামের দৈনিক পূর্বকোণ ও দৈনিক আজাদী পত্রিকার সাহিত্য সাময়িকীতে প্রবন্ধ লিখে প্রাবন্ধিক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। ২০১২ সালে তিনি দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার সহকারী সম্পাদক (খন্ডকালীন, সাহিত্য ও ফিচার সম্পাদক) হিসেবে যোগদান করেন, বর্তমানে কর্মরত। ২০১৩ সালে ‘হৃদয় শঙ্খতীরে’ কাব্য, ১৯৯৫ সালে বলাকা প্রকাশন থেকে তার দ্বিতীয় গবেষণামূলক প্রবন্ধগ্রন্থ ১ ‘আল মাহমুদ : কবি ও কথাশিল্পী’, ২০১৭ সালে ছড়াকবিতার বই ‘গন্ধরাজের ঘ্রাণ’, ২০১৯ সালে ‘বিলবোর্ডে শব্দনুপুর’, ২০২০ সালে সালফি পাবলিকেশন থেকে ‘কাব্যনিলয়’ কাব্যগ্রন্থ, গলুই প্রকাশন হতে ‘চট্টগ্রামের কবি সাহিত্যিক’ এবং আমাদের অক্ষরবৃত্ত প্রকাশন থেকে ‘অসাম্প্রদায়িকতার শ্রেষ্ঠ কবি ও অন্যান্য প্রবন্ধ’ প্রকাশিত হয়েছে।