লামা-আলীকদমে গম চাষের উজ্জল সম্ভাবনা

190

দীর্ঘ দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে ক্ষতিকারক তামাকের রাজ্য হিসেবে পরিচিতি লাভ করে পার্বত্য বান্দরবানের লামা ও আলীকদম উপজেলা। এক সময় যেসব জমিতে সবজি উৎপাদন করে কৃষকের সংসার চালতো। এখন বেশি লাভের আশায় সে জমিতেই তামাক তামাক চাষ করছে কৃষকরা। আর এ তামাক চাষ থেকে কৃষকদের ফিরিয়ে রবি শস্য উৎপাদন বাড়াতে উপজেলা দুটিতে প্রথমবারের মত পরীক্ষামূলক গম চাষের উদ্যোগ নেয় বেসরকারি সংস্থা কারিতাস বাংলাদেশের এগ্রো ইকোলজি প্রকল্প। এখানকার মাটি ও আবহাওয়া দ্বিতীয় খাদ্যশস্য গম চাষের জন্য উপযোগি। পরীক্ষামূলক এ চাষে আশাতীত ফলন হওয়ায় এতদ্বঞ্চলে গম চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। জানা যায়, গম চাষ সম্প্রসারণ হলে এলাকায় ক্ষতিকর তামাক ছেড়ে গম আবাদে আরো বেশি ঝুঁকে পড়বে কৃষকরা। লামা ও আলীকদম উপজেলায় একসময় উৎপাদিত হত বিভিন্ন কৃষি পণ্য। উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হত উৎপাদিত ফসল। কিন্তু দুই যুগ ধরে এসব উপজেলার জমিগুলোতে এখন আর সবজি চাষ হয়না। টোব্যাকো কোম্পানিগুলোর লোভনীয় প্রণোদনায় হচ্ছে ক্ষতিকর তামাক চাষ। আর এ তামাক কোম্পানির প্যাকেজে পা দিয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছে সাধারণ কৃষক, আর ফসলি জমি হারাচ্ছে উর্বরাতা শক্তি। তাই কৃষকদের এ ক্ষতিকর তামাক উৎপাদন বন্ধ করে বিভিন্ন প্রণোদনার মাধ্যমে গম উৎপাদনের উদ্যোগ নেয় বেসরকারি সংস্থা কারিতাস এগ্রো ইকোলজি প্রকল্প। চলতি মৌসুমে লামা ও আলীকদম উপজেলায় ১৫০শতক জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে গম চাষ করা হয়। অনুকূল আবহাওয়া ও সময়মতো সার-বীজ পাওয়ায় প্রাথমিকভাবে এ গম চাষে আশাতীত ফলনও হয়েছে। কার্তিকের শেষ সপ্তাহ হতে অগ্রহায়ণের মাঝামাঝি পর্যন্ত গম বীজ বপনের উপযুক্ত সময়। পরীক্ষামূলক চাষের মধ্যে রয়েছে বারি ২৪, ২৫, ২৬, ২৭, ২৯, ৩০, ৩১, ৩২, ৩৩ জাতের গম। লামা উপজেলার গম চাষী গম চাষী ক্য সাইন শৈ জানান, আমরা আগে তামাক চাষ করতাম, নিজেদের দিনরাত প্রচুর পরিশ্রম করতে হতো। তার তুলনায় তেমন লাভের মুখ দেখতাম না। এখন কারিতাসের সহযোগিতায় আমরা তামাক চাষ ছেড়ে দিয়ে প্রথম বারের মত গম চাষ করেছি । এবার ভালো ফলন হয়েছে। আশা করছি অনেক লাভবান হবো। তামাক ছেড়ে প্রথম বারের মত গম চাষী জবুরং ম্রোরা জানান, আমি তামাক চাষ আগে করতাম এখান তামাক চাষ ছেড়ে দিয়ে প্রথম বারের মত ২০ শতক জমিতে গম চাষ করেছি। গম চাষে তেমন কোন কষ্ট নাই অতি সহজে চাষ করা যায়। আমার গম চাষ করে ভালো লেগেছে। কৃষকেরা জানান, প্রথমবার কারিতাসের পক্ষ থেকে সহজ শর্তে পর্যাপ্ত গমের বীজ, সার, কীটনাশক, মজুরী, ওষধ ও কৃষি সরঞ্জামের সরবরাহের কারণে গম চাষে বেশি আগ্রহ হচ্ছেন তারা, আর গম চাষে খরচ ও পরিশ্রম কম এবং তুলনামূলকভাবে বাজারমূল্যও বশি। তাই এ ফসল চাষের প্রতি কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। আলীকদমের গম চাষী নাইতিং প্রু জানান, গমের তেমন কোন রোগ বালাই না থাকার করাণে অতি সহজে আমরা চাষ করেছি। যদিও বা এটি আমাদের জন্য প্রথম অভিজ্ঞতা। কিন্তু কারিতাস বাংলাদেশের সহযোগিতায় আমরা এবার সফল হয়েছি। আশা রাখছি আগামী বছর ৫০ শতক জমিতে গম চাষ করবো। কারিতাস এগ্রো ইকোলজি প্রকল্পের লামা উপজেলা মাঠ কর্মকর্তা মো. মামুন সিকদার জানায়, গম রুটি ভাতের চেয়ে পুষ্টিকর। এখানের আবহাওয়া ও মাটি গম চাষের উপযোগি। তাই লামা ও আলীকদম উপজেলার একশ পঞ্চাশ শতক জমিতে ২০ জন চাষীকে প্রণোদনার মাধ্যমে গম চাষ উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রম শুরু করা হয়। পরীক্ষামূলক এ গম চাষে কৃষকেরা লাভবানও হয়েছেন। বারি ২৪ ও ২৫ এবং ৩০ ও ৩১ জাতের ফলন ভালো হয়েছে বলেও জানান তিনি। লামা উপজেলা ভারপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সানজিদা বিনতে সালাম জানান, গমে চাষ একটি ভালো কাজ, যে চাষে কৃষকদের কোন ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনা থাকে না। এবার যদি চাষ ভালো হয় তাহলে আগামীতে আমরা তাদের প্রণোদনার মাধ্যমে গম চাষটা বৃদ্ধিতে কাজ করবো। এ বিষয়ে আঞ্চলিক গম গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. গোলম ফারুক জানান, প্রথমবারের মত কৃষকদেরকে তামাক চাষ থেকে ফেরাতে গম চাষ শুরু করেছে কারিতাস। আশা রাখি আগামীতে লামা আলীকদমের কৃষকরা তামাকের পরির্বতে এ গম চাষ করবে এবং ভালো ফলনও পাবেন তারা। কৃষকদের বীজ, সার, প্রশিক্ষন, মজুরী প্রদান করা হয়েছে, তাই তারা উৎসাহের সাথে গম চাষ করেছে। শুধু তাই নয়, কৃষকরা গমের পাশাপাশি এক জমিতে ৩টি ফসল চাষ করতে পারবে। গম চাষের কষ্ট যেমন কম, লাভও বেশি।