রাঙামাটিতে বাড়ছে করোনার প্রকোপ

22

রাঙামাটিতে দ্রুত বাড়ছে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা। এতে জনমনে চরম উদ্বেগ আর আতঙ্ক ভর করেছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় আরও কঠোর হচ্ছে প্রশাসনও। গতকাল বুধবার দুপুরে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে জরুরি সভায়ও এই বিষয়টি আলোচিত হয়। মূলত করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় তা মোকাবেলায় করণীয় ঠিক করতে অনুষ্ঠিত সভায় বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা দেয়া হয়। জনসচেতনতা সৃষ্টিসহ মাঠে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের কঠোর অবস্থান নিতে বলা হয়েছে সভা থেকে। গত মঙ্গলবার নতুন করে ১৭ জনসহ জেলায় বর্তমানে কোভিড-১৯ আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা ৪৩।
সভায় সর্বসম্মতিক্রমে মার্কেট বন্ধ রাখা, যাত্রীবাহী বাহন বন্ধ রাখা, সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে প্রয়োজন ছাড়া যেন ঘর থেকে কেউ বের না হন সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য, জরুরি সেবা, সংবাদপত্র, ফার্মেসী ছাড়া সব ধরনের দোকাপাট বন্ধ রাখার পাশাপাশি জরুরি ত্রাণ সামগ্রী সংগ্রহে সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখারও আহব্বান জানানো হয়।
এছাড়াও জেলা প্রশাসনের নির্দেশে প্রতিটি ওয়ার্ড ও মহল্লায় করোনা মোকাবেলায় কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। যে কমিটি গঠন করা হবে ওই সব ওয়ার্ড বা মহল্লার ওয়ার্ড কাউন্সিলরা করোনা ভাইরাস সংক্রমণ বিষয়ে প্রতিটি ঘরে ঘরে তদারকি করবেন। তারা তদারকি করে জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে রিপোর্ট পাঠাবেন। এছাড়াও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঠে কঠোরভাবে দায়িত্ব পালন করবেন। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে যতটুকু কঠোর হওয়া দরকার তা হবে প্রশাসন।
সভায় জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদ বলেন, সংক্রমণ রোধে সবাইকে আরো কঠোরভাবে কাজ করতে হবে। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া যেন কোনো লোক ঘরের বাহিরে না যায় সেদিকে নজর রাখতে হবে। সবাই আরো বেশী বেশী সচেতন হতে হবে। ঘর থেকে বের হলেই মাক্স ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। এব্যাপারে সেনাবাহিনী, পুলিশ, প্রশাসনের দায়িত্বশীল ব্যক্তি ও পৌরসভার মেয়র, কাউন্সিলরদের অগ্রণী ভ‚মিকা রাখতে হবে। তিনি বলেন,
সভায় অংশ নেন সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি মেজর নাজমুল হাসান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মইন উদ্দিন চৌধুরী, পৌরমেয়র মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী, পৌরসভার কাউন্সিলরবৃন্দ, বনরূপা, রিজার্ভ বাজার, কলেজগেট ও তবলছড়ি ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দ।
এদিকে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, জেলা শহরে করোনায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন আরও ১৭ জন। গত মঙ্গলবার রাতে পাওয়া নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। গত ১৪ ও ১৫ মে তাদের নমুনা চট্টগ্রামে পাঠানো হয়। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা রোগীর সংখ্যা এখন ৪৩। তাদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৪ জন। হাসপাতালে আইসোলেশনে রয়েছেন ৩ জন।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের করোনা বিষয়ক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. মোস্তফা কামাল জানান, মঙ্গলবার রাতে নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদনে নতুন করে আরও ১৭ জন আক্রান্ত হয়েছে। তারা সবাই শহরের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা। এ নিয়ে জেলায় এ পর্যন্ত মোট ৪৩ জনকে করোনা রোগী হিসেবে শনাক্ত করা গেছে। তাদের মধ্যে প্রথম আক্রান্ত ৪ জন সুস্থ হয়েছেন। তিনি জানান, নতুন আক্রান্তদের মধ্যে রয়েছেন শহরের রায় বাহাদুর সড়কের ৩ জন, উত্তর কালিন্দীপুরের ৩ জন, জেনারেল হাসপাতালের ২ জন, রাজবাড়ি এলাকার ১ জন, রাঙ্গাপানি এলাকার ১ জন, চক্রপাড়া এলাকার ১ জন, মানিকছড়ির ১ জন, কল্যাণপুরের ১ জন, তবলছড়ির মাঝেরবস্তি এলাকার ১ জন, ওমদা মিয়া পাহাড়ের ১ জন, ম্যাজিস্ট্রেট কলোনির ১ জন এবং বনরূপা এলাকার ১ জন চিকিৎসক। করোনা পরীক্ষার জন্য জেলা থেকে এ পর্যন্ত ৬৯১ জনের নমুনা পাঠানো হয়েছে। ফলাফল প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি ১৮০ জনের। যেসব এলাকায় আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে সেসব এলাকা লকডাউন করে দেয়া হয়েছে।