রঙ ফর্সা করার অধিকাংশ ক্রিমে ‘উচ্চমাত্রার পারদ’

144

বাংলাদেশের বাজারে রঙ ফর্সা করার যতগুলো ক্রিম রয়েছে, তার অধিকাংশটিতে পারদের পরিমাণ গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি বলে এক গবেষণায় উঠে এসেছে।
গবেষকরা বলছেন, এই সব ক্রিম ব্যবহারের কারণে ত্বকের নানা সমস্যার পাশাপাশি কিডনি ও স্নায়ুতন্ত্রের জটিলতাও দেখা দিতে পারে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘স্বাস্থ্য ও পরিবেশের উপর পারদযুক্ত পণ্যের ক্ষতিকর প্রভাব’ শীর্ষক কর্মশালায় উদ্বেগজনক এই চিত্র তুলে ধরা হয়। পরিবেশ অধিদপ্তর এবং এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন-এসডো যৌথভাবে এ কর্মশালা আয়োজন করে।
কর্মশালায় জানানো হয়, বাংলাদেশের বাজারে এখন যেসব রঙ ফর্সাকারী পণ্য পাওয়া যাচ্ছে, বেশিরভাগে পারদের পরিমাণ সহনীয় মাত্রা এক পিপিএমের চেয়ে কয়েকশ গুণ বেশি ।
সাবেক সচিব এবং এসডোর চেয়ারম্যান সৈয়দ মার্গুব মোর্শেদ বলেন, ‘বাজার পারদযুক্ত ত্বক ফর্সাকারী ক্রিমে ছেয়ে গেছে। এর ফলে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ ঝুঁকিতে পড়েছে।’
বুয়েটের অধ্যাপক এবং এসডোর নির্বাহী পরিচালক সিদ্দীকা সুলতানা বলেন, ‘পারদযুক্ত ত্বক ফর্সাকারী ক্রিমগুলি সরাসরি আমাদের ত্বকে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে এবং এসব দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারে কিডনির জটিলতা, হজমে সমস্যা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস এবং স্নায়ুতন্ত্রজনিত সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায়।’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, সারাবিশ্বেই রঙ ফর্সাকারী ক্রিমের ব্যবহার রয়েছে, তবে এশিয়ায় এর ব্যবহার সবচেয়ে বেশি। চীন, ভারতসহ এশিয়ার দেশগুলোর ৪০ শতাংশ নারী এই ধরনের ক্রিম ব্যবহার করেন।
কর্মশালায় দুটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. আবুল হাসেম এবং এসডোর প্রোগ্রাম অ্যাসোসিয়েট যুথী রাণী মিত্র।
২০১৭ ও ২০১৮ সালে করা এসডোর একাধিক গবেষণার তথ্য তুলে ধরে তারা বলেন, প্রসাধনীসহ ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্যেও পারদ ব্যবহৃত হচ্ছে। অজৈব পারদ ত্বক ফর্সাকারী পণ্যগুলোতে রয়েছে বেশি পরিমাণে।
পারদযুক্ত পণ্য উৎপাদন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করার জন্য সরকারকে প্রতিরোধমূলক উদ্যোগ গ্রহণের আহব্বান জানিয়েছেন মার্গুব মোর্শেদ।
তিনি বলেন, ‘মিনামাটা কনভেনশনের স্বাক্ষরকারী দেশ হওয়ায় আমরা পারদ বিষ প্রতিরোধে প্রতিশ্রæতিবদ্ধ এবং আমাদেরকে উৎস থেকেই পারদ নিষিদ্ধ করার দিকে এগিয়ে যেতে হবে।’
মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর পারদ ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে ১২৮টি দেশ মিনামাটা চুক্তিতে সই করেছে, যা ২০২০ সাল থেকে কার্যকর হতে যাচ্ছে। এই চুক্তি অনুযায়ী কোনো প্রসাধন পণ্যে ন্যূনতম মাত্রার চেয়ে বেশি পারদ পাওয়া গেলে তা উৎপাদন, বিপণন ও রপ্তানি নিষিদ্ধ হবে।
কর্মশালার সভাপতি এসডোর মহাসচিব শাহরিয়ার হোসেন পারদ বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি নীতি ও বিধি বাস্তবায়ন এবং প্রয়োগের মাধ্যমে ত্বক ফর্সাকারী পণ্যগুলোর ব্যবহার নিষিদ্ধের আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘সমস্যাটি আরও প্রকট না হওয়ার আগে পণ্যগুলোতে পারদ ব্যবহারের জন্য নীতিগত হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।’
কর্মশালায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন, সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি মোকলেসুর রহমানও বক্তব্য দেন।