যে পাঁচটি কারণে হুয়াওয়েকে নিয়ে পশ্চিমা বিশ্ব উদ্বিগ্ন

83

গুগল ঘোষণা করেছে যে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্মার্টফোন কোম্পানি হুয়াওয়েকে গুগলের অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের কিছু আপডেট ব্যবহার করতে দেয়া হবে না। এর মানে হচ্ছে হুয়াওয়ের নতুন স্মার্টফোনগুলোতে অনেক অ্যাপ আর ব্যবহার করা যাবে না।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত সপ্তাহে ‘বিদেশি শত্রুদের’ কাছ থেকে তার দেশের কম্পিউটার নেটওয়ার্ক রক্ষায় জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করেছিলেন। বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই পদক্ষেপের আসল টার্গেট ছিল আসলে চীনা কোম্পানি হুয়াওয়ে। হুয়াওয়ে সবচেয়ে বেশি পরিচিত তার স্মার্টফোনের কারণে। কিন্তু তারা আরও বহু রকম কমিউনিকেশন ইকুইপমেন্ট তৈরি করে। যদি হুয়াওয়ে যুক্তরাষ্ট্রে তাদের যন্ত্রপাতি বিক্রি করতে নাও পারে, তারপরও বিশ্বজজুড়ে কমিউনিকেশন নেটওয়ার্কের ৪০ হতে ৬০ শতাংশই নিয়ন্ত্রণ করবে হুয়াওয়ে।
জানা গেছে, এই উদ্বিগ্নের পেছনে আছে খুবই জটিল কিছু অভিযোগ। এর মধ্যে গুপ্তচরবৃত্তি থেকে শুরু করে চুরি যাওয়া রোবট, হীরের প্রলেপ দেয়া গ্লাসস্ক্রিন থেকে ইরানের সঙ্গে গোপন চুক্তি- অনেক কিছুই।
মোবাইল টেলিফোনের ক্ষেত্রে পরবর্তী বিপ্লব হিসেবে ধরা হয় ফাইভ-জি নেটওয়ার্ককে। হুয়াওয়ে এই ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক বসানোর জন্য অনেক দেশের সঙ্গেই আলোচনা চালাচ্ছে। এই নতুন নেটওয়ার্ক এতো দ্রুতগতির হবে যে এটি ব্যবহার করা হবে বহু নতুন কাজে। যেমন চালকবিহীন গাড়ি চালানোর কাজে।
এখন হুয়াওয়ে যদি কোনো দেশের ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক নিয়ন্ত্রণ করে, চীন ঐ দেশের ওপর গুপ্তচরবৃত্তি চালাতে পারবে বলে দাবি করছে তাদের প্রতিদ্ব›দ্বী দেশগুলো। তারা চাইলে এই ফাইভ-জি নেটওয়ার্কে আদান-প্রদান করার বার্তা পড়তে পারবে, চাইলে নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দিতে পারবে বা সেখানে ব্যাপক প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারবে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের আগেই অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমা দেশগুলো হুয়াওয়ের সঙ্গে ব্যবসা না করার জন্য একটি চাপ সৃষ্টি করেছিল। এই দেশগুলোর মধ্যে আছে ‘ফাইভ আই’স’ বলে পরিচিত একটি গ্রুপ। যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া গ্রুপের বাকী চারটি দেশ হচ্ছে যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ড। এই পাঁচটি দেশের মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়ের জন্য খুবই ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা আছে। এর বেশিরভাগটাই করা হয় ইলেকট্রনিক উপায়ে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বলেছেন, এই পাঁচ দেশের কোনো দেশ যদি হুয়াওয়ের নেটওয়ার্ক তাদের গুরুত্বপূর্ণ কোনো ইনফরমেশন সিস্টেমে বসায়, তাহলে সেই দেশের সঙ্গে তারা আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য শেয়ার করতে পারবেন না।
হুয়াওয়ে অবশ্য বারবার জোর দিয়ে বলেছে, তারা কখনোই চীন সরকারের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি করবে না। কিন্তু সমালোচকরা একটি চীনা আইনের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন যার কারণে কোনো কোম্পানির পক্ষে গোয়েন্দা তথ্য চেয়ে চীনা সরকারের অনুরোধ উপেক্ষা করা প্রায় অসম্ভব হবে। হুয়াওয়ে আরও বলছে, যদি তাদের যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ করা হয় সেটি মার্কিন ভোক্তাদের স্বার্থ ক্ষুন্ন করবে। কারণ এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রকে হুয়াওয়ের বিকল্প হিসেবে তার চেয়ে অনুন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে এবং ফাইভ-জি প্রযুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র পিছিয়ে পড়বে।
হুয়াওয়ের এক প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে একটি রোবটের হাত চুরির অভিযোগ আনা হয়। তবে এই প্রকৌশলী অভিযোগ করেছেন, এটি চুরি ছিল না, দুর্ঘটনাবশত ব্যাপারটি ঘটেছে। তিনি টি-মোবাইলের ডিজাইন ল্যাবে গিয়েছিলেন। সেখানে একটি রোবটের হাত ব্যবহার করে স্মার্টফোনের স্ক্রীন পরীক্ষা করা হয়। এই যন্ত্রটি দুর্ঘটনাবশত তার ব্যাগের মধ্যে পড়ে যায়। যখন তিনি ল্যাব থেকে বেরিয়ে আসছিলেন, তখন বিষয়টি খেয়াল করেননি।
জার্মান কোম্পানি টি-মোবাইলের সঙ্গে তখন হুয়াওয়ের পার্টনারশীপ ছিল। টি-মোবাইল এই কথা বিশ্বাস করেনি। এরপর দুই কোম্পানির মধ্যে সম্পর্ক ভেঙ্গে যায়। খবর বিবিসি বাংলার
নতুন কিছু ইমেল ফাঁস হওয়ার পর এই কেলেংকারি নিয়ে আবার কথাবার্তা শুরু হয়েছে। এসব ইমেলে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে এই প্রকৌশলী হয়তো চীনে তার উর্ধ্বতন কোনো কর্মকর্তার নির্দেশে এই কাজ করেছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধে গত বছর যে কানাডায় হুয়াওয়ের চীফ ফিনান্সিয়াল অফিসার মেং ওয়ানজুকে গ্রেপ্তার করা হয়, তার একটি কারণ এটি।
মিজ মেং ওয়ানজু তাকে কানাডা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেয়ার বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালাচ্ছেন। গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেছেন। ইরানের সঙ্গে কোনো গোপন আঁতাতের কথাও তিনি উড়িয়ে দিচ্ছেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছিল যে তেহরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা কিভাবে ফাঁকি দেয়া যায়, সেরকম এক ষড়যন্ত্রের সঙ্গে তিনিও যোগ দিয়েছিলেন স্কাইকম নামের একটি কোম্পানির মাধ্যমে।
ইরানের সঙ্গে তার ব্যবসায়িক লেনদেনের অনেক কিছুর ব্যাপারে তিনি ব্যাংকগুলোকে এবং মার্কিন কর্তৃপক্ষের কাছে মিথ্যে কথা বলেছেন বলেও অভিযোগ আছে। মিজ মেং হচ্ছেন হুয়াওয়ের প্রতিষ্ঠাতার কন্যা। যদি তাকে বিচারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয় এবং তিনি দোষী সাব্যস্ত হন, তাহলে তিরিশ বছর পর্যন্ত সাজা হতে পারে তার।

বদলে গেল কিলোগ্রাম
ক্রয়-বিক্রয়ে কী প্রভাব ফেলবে?

গত ১৩০ বছর ধরে প্রচলিত ওজনের একক কিলোগ্রামের সংজ্ঞা বদল আজ মঙ্গলবার থেকে কার্যকর হচ্ছে। গত নভেম্বর মাসে ফ্রান্সের ভার্সাই নগরীতে ওজন এবং মাপ নির্ণয় সংক্রান্ত এক সম্মেলনের মাধ্যমে এ পরিবর্তন আনা হয়েছিল। নিত্য প্রয়োজনীয় বহু পণ্য কেনা-বেচার হয় কিলোগ্রামের ভিত্তিতে।
কিলোগ্রামের সংজ্ঞা বদল হলে কেনা-বেচায় এর কোনো প্রভাব পড়বে কিনা সে প্রশ্ন অনেকে তুলতে পারেন। বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউটের মেট্রোলজি বিভাগের পরিচালক আনোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, পদার্থ বিজ্ঞানের সূত্রের সাথে সামঞ্জস্য রাখতে কিলোগ্রামের সংজ্ঞা বদল করা হচ্ছে। তবে ক্রয়-বিক্রয়ে মাপের ক্ষেত্রে এর কোনো প্রভাব পড়বে না বলে উল্লেখ করেন তিনি।


তিনি বলেন, ‘১০০০ গ্রাম-এ এক কেজি- এটা ঠিক থাকবে। এখানে কোনো হেরফের হবে না। কোথাও কোনো প্রভাব পড়বে না’।
তাহলে সংজ্ঞায় কেন পরিবর্তন আনা হলো? পদার্থবিদরা বলছেন, ১৩০ বছরের পুরনো একটি বিষয়ের উপর আর নির্ভর করা যায় না। কিলোগ্রামকে নতুনভাবে ব্যবহার করার জন্যই এই পরিবর্তন। এর মাধ্যমে যাতে অতি ক্ষুদ্র এবং বৃহৎ বিষয়গুলোকে সূ² ও সঠিকভাবে পরিমাপ করা যায় সেজন্য সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। খবর বাংলা নিউজের
ফ্রান্সের এক প্লাটিনাম-ইরিডিয়াম ধাতুর মাধ্যমে তৈরি বাটখারার ভিত্তিতে ১৮৮৯ সাল থেকে কিলোগ্রামের পরিমাপ করা হতো। ‘ল্য গ্রঁদ কে’ নামের প্ল্যাটিনাম-ইরিডিয়ামের তৈরি এই সিলিন্ডারটি ফ্রান্সে রক্ষিত আছে। এর কিছু হুবহু নমুনা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রয়েছে। পদার্থবিদরা বলছেন, প্লাটিনামের ওজন সবসময় এক থাকে না, নানা কারণে একটি ওজন পরিবর্তিত হয়। যদিও এই পরিবর্তন খুবই সূ²। সাধারণ মানুষের জীবনে এর কোনো প্রভাব না পড়লেও বৈজ্ঞানিক গবেষণায় কিছু সমস্যা তৈরি করছিল এটি।
ফ্রান্সে রাখা ‘লা গ্রঁদ কে’ এবং পৃথিবীজুড়ে ছড়িয়ে থাকা এর নমুনাগুলোর সাথে কিছু তারতম্য তৈরি হয়েছে। যদিও বিষয়টি খুবই সূ², তবুও বিষয়টি গ্রহণযোগ্য নয় বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা।
কিলোগ্রামের নতুন সংজ্ঞা বৈদ্যুতিক প্রবাহের উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হবে। বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট-এর মেট্রোলজি বিভাগের পরিচালক আনোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, কিলোগ্রামের সংজ্ঞায় যে পরিবর্তন এসেছে সেটি পাঠ্য বইতে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য পাঠ্যপুস্তক বোর্ডসহ বিভিন্ন শিক্ষা সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দেয়া হয়েছে।