‘ম্যানার্স’ জানাটা সবার জন্যই জরুরি : শামসুদ্দীন শিশির

462

ধরুন, একান্তই বাধ্য হয়ে কাউকে কোনো দুঃসংবাদ জানাতে হচ্ছে আপনাকে। সাধারণত আপনি সেটি কিভাবে জানান? তাকে ফোনে কিংবা সাক্ষাৎ করে ওই খবরটি সরাসরি বলে ফেলেন। তা হতে পারে কারও মৃত্যু সংবাদ কিংবা কোনো দুর্ঘটনার। আপনজনের এ ধরনের দুঃসংবাদ যাকে দিচ্ছেন তা সরাসরি শুনে তার ভেতরে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে, সরাসরি দুঃসংবাদে অনেকে তো হৃদরোগেও আক্রান্ত হয়ে পড়েন! সে কারণে কাউকে দুঃসংবাদ দিতে গেলে আপনাকে অবশ্যই ‘ম্যানার্স’ বা আচরণের পদ্ধতি জানা উচিত। কোন পরিস্থিতির সংবাদ কাকে কিভাবে দিতে হবে তা না জানলে ফলাফল হিতে বিপরীত হয়ে দাঁড়ায়।
মানুষের দৈনন্দিন জীবনে, চলার পথে কোথায় কোন পরিস্থিতিতে কি ধরনের আচরণ করা উচিত তা নিয়েই এবার অমর একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও শিক্ষা গবেষক শামসুদ্দীন শিশিরের বই ‘ম্যানাস।’
চট্টগ্রাম সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজের শিক্ষক শামসুদ্দীন শিশির দীর্ঘদিন ধরেই শিক্ষামূলক নানা লেখালেখির সাথে জড়িত। পেশাগতভাবে একজন শিক্ষক হিসেবে তিনি শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে নিয়মিত পত্রপত্রিকায় প্রবন্ধ এবং কলাম লিখছেন। আর এরই মধ্যে তিনি অনুভব করেছেন শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবকসহ সব মানুষেরই বিভিন্ন পরিস্থিতি সম্পর্কে ম্যানার্স জানাটা অত্যন্ত জরুরি।
এই ধরনের একটি ব্যতিক্রমধর্মী বিষয়ে কেন বই লিখতে উদ্যোগী হলেন জানতে চাইলে লেখক-শিক্ষক শামসুদ্দীন শিশির পূর্বদেশকে বলেন, দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করতে গিয়ে এবং বিভিন্ন কারণে মানুষের সাথে মিশতে গিয়ে একটি ব্যাপার অনুভব করেছি-অধিকাংশ মানুষ কোন পরিস্থিতিতে কি ধরনের আচরণ করতে হয় তা জানেন না। বিস্ময়ের বিষয় হলো তারা যে ম্যানার্স জানেন না সেটা একবার বুঝার
চেষ্টাও করেন না। ধরুন, পাবলিক বাসে চড়ছেন কিন্তু সেখানে মোবাইল ফোনে বড় বড় গলায় এমন সব কথা বলছেন যা আরেকজনের বিরক্তির কারণ। এ নিয়ে তার কো ভ্রূক্ষেপ নেই। আবার দেখা যায় কারও মৃত্যুর সংবাদ দিচ্ছেন, সরাসরিই বলে দিলেন অমুক মারা গেছে! এসব কিন্তু অন্যজনের জন্য ক্ষতির কারণ। ম্যানার্স না জানার কারণে প্রতিনিয়তই নানা ধরনের বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হয় মানুষ। সে কারণে ম্যানার্স জানাটা সবার জন্যই অত্যন্ত জরুরি। তবে এ ধরনের কোনো প্রকাশনা না থাকার কারণে মানুষ এসব নিয়ে কোনোদিন ভাবেনও না। এসব কারণে ভাবলাম, ম্যানার্স সম্পর্কে একটি প্রকাশনা অন্তত হওয়া উচিত; যাতে মানুষ কোথায় কোন পরিস্থিতিতে কি ধরনের আচরণ করতে হয় তার একটা ধারণা পেতে পারেন।
বইটির বিষয়বস্তু সম্পর্কে বলতে গিয়ে শামসুদ্দীন শিশির বলেন, ম্যানার্স বইটিতে প্রায় সব বয়সের মানুষেরই কোথায় কি আচরণ করা উচিত তা নিয়ে ধারণা বা আলোচনা করা হয়েছে। শিশু থেকে শিক্ষার্থী, শিক্ষক-অভিভাবক এমনকি পরিবারের বউ-শাশুড়ির কার কি ধরনের আচরণ করা উচিত তা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। বইটিতে ৪৫টি টপিক রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, কথা বলার ধরন, বক্তা হিসেবে নিজেকে পরিপূর্ণভাবে উপস্থাপনের কৌশল, শ্রেণিকক্ষের নিয়মকানুন, বইয়ের যত্ন, পেরেন্ট-টিচার মিটিং, দৈনন্দিন জীবনে আচরণ, ইন্টারভিউ’র দিনে, সুনিপুণ দেহভঙ্গি, পোশাক প্রথার ইতিকথা, এক্সকিউজ মি, প্রয়োজনে না বলতে, বাড়িতে অতিথি এলে, ছোটদের সাধারণ ভদ্রতা, কেমনভাবে খাবেন, দুঃসংবাদ দিতে গিয়ে, শাশুড়ির করণীয়, বউয়ের করণীয়, যানবাহনের কথকতা এবং বাঙালিয়ানা।
শামসুদ্দীন শিশির পেশাগত জীবনে একজন শিক্ষক হিসেবে শেখানোর প্রতি আগ্রহটা স্বাভাবিক। শিক্ষার্থীদের প্রতিনিয়তই নানা ধরনের পাঠ দিয়ে যাচ্ছেন। শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজের শিক্ষক হিসেবে তিনি শিক্ষকদেরই শেখান কিভাবে ক্লাসে শিক্ষার্থীদের সাথে আচরণ করতে হবে, কিভাবে তাদের শেখাতে হবে। সেসব অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি লিখেছেন ‘ম্যানার্স’। বইটির টপিকগুলো পর্যালোচনায় এটা বলা যায় যে, বইটি পাঠ করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা দৈনন্দিন জীবনের আচরণ সম্পর্কে ধারণা পাবেন। ম্যানার্স বইটি প্রকাশ করেছে ‘আপন আলো’। অমর একুশে বইমেলায় বইটি আপন আলো স্টলে পাওয়া যাচ্ছে।